02/26/2025
নেহাল আহমেদ | Published: 2024-03-27 09:29:56
ইদানিং একটা বিষয় কি খেয়াল করেছেন যে কোন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কারা সভাপতিত্ব করেন? বিশেষত মফস্বল শহরগুলোতে?
যে বেশী টাকা দিতে পারবে তাকেই সভাপতি করা হয়। শহরের বড় বড় অনুষ্ঠানে কারা স্পন্সর করে? নিশ্চয়ই বহুজাতিক কোম্পানিগুলো। বর্তমানে কোন বইগুলো বেশী বিক্রি হয়? নিশ্চই জনপ্রিয় লেখকের। বৈশ্বিক আর্দশের কাছে পুজিঁবাদ একটা গুরুত্বপুর্ন বিষয় হয়ে দাড়িঁয়েছে।
মার্ক্স বলেছিলেন পুঁজিবাদ এমন সব জিনিস তৈরি করবে, যা মানুষের দরকার নেই, কিন্তু তারপরেও সে বস্তুর চাহিদা তৈরি হবে। একেই তিনি 'কাল্পনিক চাহিদা' বলে নাম দিয়েছিলেন।
যেমন ধরা যাক, ফ্যাশন। চলতি হাওয়ার সাথে তাল মিলিয়ে কাপড়-চোপড় পড়তে গিয়ে আমরা এমন সব কাপড়-চোপড় ফেলে দিচ্ছি যেগুলো আসলে এখনো ব্যবহার করা যায়।
অথবা স্মার্টফোনের কথাই ধরা যাক । যে স্মার্টফোনটি আপনার হাতে আছে, তার তুলনায় বাজারে আসা নতুনটির তফাৎ খুব সামান্যই। তারপরও ফোন কোম্পানিগুলো বিরামহীন নতুন মডেল উদ্ভাবন করে বাজারে ছাড়ছে এবং সর্বশেষ মডেলের ফোনটির জন্য রীতিমত প্রতিযোগিতা চলছে ভোক্তাদের মধ্যে।
আমি খুব অবাক হয়ে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান দেখছিলাম মাঠে মিডিয়ায় পত্র পত্রিকায়। কোথাও যেন খুঁজে পাচ্ছিলাম না স্কুলে পড়ার সময়কার সেই সংস্কৃতি। সেই সময়টাতে যে আবেগটা কাজ করতো এখন কেমন করে হারিয়ে গেলো।
আজকে কোথাও দেশের গান বাজতে দেখিনি। অনেক প্রতিষ্ঠানে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়নি। অনেকটা মনে হয়েছে অনেকেই চাকুরী বাঁচাতে বেদীতে ফুল দিচ্ছেন। কিন্ত এ রকম সংস্কৃতি কি আগে ছিলো? সামাজিক সংগঠন, সংস্কৃতিকর্মিদের দায়বদ্ধতা কোথাও খুঁজে পাচ্ছিলাম যেন।
প্রথমে ভেবে ছিলাম বয়সের কারনে। তারপর খুব খেয়াল করে দেখলাম বয়স নয় আমাদের সংস্কৃতিটাই পরিবর্তন হয়ে গেছে। ইচ্ছায় হোক অনিচ্ছায় হোক আমরা পুজিঁবাদী ব্যবস্থার মধ্যে ঢুকে পড়েছি। বৈশ্বিক এই আদর্শের কাছে সব কিছুরই ওজন হয় মুনাফার বাটখারায়।
সংস্কৃতির চর্চাও সেই বাণিজ্যিক পণ্যে পরিণত হয়ে গেছে। এখন মিডিয়া দেখে কোনটা প্রচারে তারা লাভবান হবে। সংগঠনগুলো দেখে কোনটা করলে প্রচার পাবে।
বানিজ্য এমন ভাবে গ্রাস করেছে সংস্কৃতিকে যেন স্পর্শমাত্র পণ্যে পরিণত করার অসীম ক্ষমতা তার হাতে।
সংস্কৃতি বাণিজ্যিক চর্চার বিপক্ষে এবং মানবিক চর্চার পক্ষে কাজ করে। আদর্শ রাষ্ট্র, সমাজ গঠনে সংস্কৃতির গুরুত্ব অপরিসীম। আর পুজিঁবাদ সংস্কৃতির বিপক্ষে। পুজিঁবাদ মানুষকে বিপ্লবী হতে নিরুৎসাহিত করে। ভোগ, লালসার দিকে ধাবিত করে।
আমি সত্যিই খেয়াল করে দেখলাম আমরা যারা সংস্কৃতি চর্চা করি তারা অনেকেই জানি না কিসের জন্য এটা করি। আমার অনেক বন্ধু আছেন তারা প্রকাশ্যেই বলেন মনের আনন্দের জন্যই গান, মনের আনন্দের জন্যই কবিতা কিংবা গল্প লিখি। তারা জানেই না যে অনেকে মনের আনন্দের জন্য হত্যাও করে। মনের আনন্দের জন্য বিকৃত পথ গ্রহন করে।
আমরা যারা আমেরিকাকে আদর্শ হিসাবে জানি তারা কি এটা জানে যে বর্ণ বৈষম্যের নামে কালোকে হত্যা করে কি রকম তারা আনন্দ উল্লাস করে? এটা হলো বানিজ্যিক সংস্কৃতির খারাপ দিক।
সংস্কৃতির অর্থ হলো পরস্পরের মাঝে মিলন গড়ে তোলা। ভ্রাতৃত্ববোধ তৈরি করা। এখন কেউ আর ত্যাগ করতে চায়না। সবাই ভোগ করতে চায়। কেউ আর প্রতিবাদ করতে চায়না। উট পাখির মতো বালুতে মুখ গুজে নিজেকে লুকায়। সবাই সেভ এবং সেটেল্ট লাইভ পছন্দ করে। শর্টকাট রাস্তা বেছে নিতে চায়।
এক সময় ভাষার জন্য, স্বাধীনতার জন্য এই সন্তানরাই জীবন উৎস্বর্গ করেছিলো। তারা বিদ্রোহ করেছিলো বিপ্লব করছিলো। এখন কবিতা লেখা যত সহজ বিপ্লবী বা বিদ্রোহী হওয়া ততই কঠিন। এখন অর্থ হলেই সমাজে সহজেই প্রতিষ্ঠা পাওয়া যায়। আগের দিনগুলোতে সমাজে প্রতিষ্ঠা পেতে সমাজ সংস্কারের জন্য কাজ করতে হতো। এখনকার সংস্কৃতি হচ্ছে আকাশ সংস্কৃতি। আগে ছিলো গুরুগৃহ সংস্কৃতি। এখন কিশোর গ্যাং তৈরি করা হয়। আগে তৈরি করা হতো কিশোরদের নিয়ে সামাজিক উন্নয়ন।
কোথায় আমাদের সেই সংস্কৃতিক চর্চা। কোথায় আমাদের সেই সাহিত্য। আমাদের যদি লক্ষ্য স্থির না থাকে আমরা কোন দিকে এগুবো?সংস্কৃতি মানুষ কে প্রয়োজনীয় হতে শেখায়। পুজিঁবাদ মানুষকে জনপ্রিয় হতে শেখায়। আর জনপ্রিয় হতে গিয়ে আমরা কোন কোন ক্ষেত্রে নোংরাটাও গ্রহন করতে অস্বীকার করতে দ্বিধা করি না।
লেখক একজন বিশিষ্ট কবি এবং সাংবাদিক
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81