রাজধানী দুই সিটি করপোরেশনের ৪১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি, যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৮টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। এ ছাড়া ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে ৪২ দশমিক ৩৩ শতাংশ বহুতল ভবনে, স্বতন্ত্র বাড়িতে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, নির্মাণাধীন ভবনে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ, সেমিপাকা বাড়িতে ১২ দশমিক ৭৪ শতাংশ এবং খালি জায়গায় মিলেছে ১ দশমিক ৭৩ শতাংশ বাড়িতে। এটিকে অত্যন্ত উদ্বেগের বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফরতর।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে স্বাস্থ্য অধিদফতরে করা জরিপে এমন চিত্র উঠে এসেছে। মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কনফারেন্স রুমে মৌসুম-পূর্ব এডিস সার্ভে ২০২৪ এবং মৌসুম-পরবর্তী এডিস সার্ভে ২০২৩ সালের ফলাফল প্রকাশ করা হয়।
জরিপের ফলাফল তুলে ধরেন স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক ও কমিউনিকেবল ডিজিজ কন্ট্রোলের লাইন ডিরেক্টর অধ্যাপক শেখ দাউদ আদনান।
গত ১৭ থেকে ২৬ এপ্রিল পর্যন্ত ১০ দিনব্যাপী ৯৯টি ওয়ার্ডে সর্বমোট ৩ হাজার ১৫২টি বাড়িতে জরিপ করা হয়। এর মধ্যে ৪৬৩টিতে এডিসের লার্ভা ও পিউপা পাওয়া গেছে। যা মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স আদর্শের জন্য অনেক বেশি এবং উদ্বেগের। ২১টি টিমের মাধ্যমে এ জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়। প্রতি ওয়ার্ড ৮টি ব্লকে ভাগ করে দুটি টিম ৪টি ব্লকে ১৫টি করে প্রতি ওয়ার্ডে ৩০টি করে বাড়ি জরিপ পরিচালনা করে। যেসব ওয়ার্ডে বাড়ির সংখ্যা ও এলাকা বড় সেগুলো ৩-৫টি টিমের মাধ্যমে জরিপ পরিচালনা করা হয়।
এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের সূচক ‘ব্রুটো ইনডেক্স’ নামে পরিচিত। সাধারণত এডিস মশার লার্ভার ঘনত্ব পরিমাপের স্বীকৃত পদ্ধতি ‘ব্রুটো ইনডেক্স’র মানদণ্ডে লার্ভার ঘনত্ব ১০ শতাংশের বেশি হওয়া মানেই পরিস্থিতি উদ্বেগজনক।
প্রাক-বর্ষা মৌসুম জরিপে দেখা যায়, ঢাকার দুই সিটির ৯৯টি ওয়ার্ডের মধ্যে ৪১টিতেই ব্রুটো ইনডেক্স ২০-এর বেশি। এর অর্থ হচ্ছে, এসব এলাকার ১০০টির মধ্যে ২০টির বেশি পাত্রে মশা বা লার্ভা পাওয়া গেছে।
জরিপে ঢাকার দুই সিটির ১৮টি ওয়ার্ডকে ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে দক্ষিণ সিটির ১০টি-৩, ৪, ৫, ১৩, ১৫, ১৭, ১৬, ২৩, ৫২ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ড। অন্যদিকে উত্তর সিটির ৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে রয়েছে- ১২, ১৩, ১৭, ২০, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৬।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার জাতীয় ম্যালেরিয়া নির্মূল ও এডিস বাহিত রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি প্রতি বছর ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় মৌসুম-পূর্ব, মৌসুম, মৌসুম পরবর্তী তিনটি জরিপকাজ পরিচালনা করে থাকে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে ১২ নম্বর ওয়ার্ড। এই ওয়ার্ডে এডিসের ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ। এর পরের অবস্থানে রয়েছে ১৩ এবং ২০ নম্বর ওয়ার্ড, এগুলোতে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে ৪০ শতাংশ। ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৩১ ও ৩২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ, ১৭ এবং ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে ২৪ দশমিক ৪৪ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
এ ছাড়াও ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে সবচেয়ে বেশি, ৭৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ, ৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ৫২ ও ৫৪ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬ দশমিক ৬৭ শতাংশ, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে। এ ছাড়াও ৩ নম্বর, ৫ নম্বর, ১৫ নম্বর, ১৭ নম্বর এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩০ শতাংশ ব্রুটো ইনডেক্স পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, ঢাকা উত্তর সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৬ দশমিক ৩৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৩০ শতাংশ। এ ছাড়াও দক্ষিণ সিটিতে মশার ঘনত্ব পরিমাপক সূচক ব্রুটো ইনডেক্স ১৮ দশমিক ৮৯ শতাংশ এবং হাউস ইনডেক্স ১৪ দশমিক ৯৮ শতাংশ।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক আবুল বাসার মোহাম্মদ খুরশীদ আলম বলেন, গত বছরের অভিজ্ঞতা থেকে আমরা বেশি কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। দেশের প্রতিটি হাসপাতালে ডেঙ্গু কর্নার স্থাপনের বিষয়ে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। প্রতিটি হাসপাতালে ব্যবস্থাপককে স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে সব পর্যায়ে প্রস্তুতিমূলক ব্যবস্থার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগী নিয়ে যাতে কোনো ধরনের সমস্যা না হয় সেজন্য সবার সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ অব্যাহত রয়েছে।
অনুষ্ঠানে ইমেরিটাস অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কাজ খুব বেশি না। আবার ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করাও একার কাজ নয়। এটার সঙ্গে যুক্ত সব কর্তৃপক্ষের সমন্বিত উদ্যোগ লাগবে। জনগণকেও সচেতন হতে হবে। ঘর-বাড়ি পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। সচেতন না হলে এবার ডেঙ্গুর প্রকোপ ভয়াবহ হতে পারে।
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্য অধিদফতের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক আহমেদুল কবীর এবং অসংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির লাইন ডাইরেক্টর অধ্যাপক রোবেদ আমিন প্রমুখ।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ৬ জন। এ নিয়ে চলতি মাসের ২৮ দিনে মোট মৃত্যু হয়েছে ১১ জনের এবং আক্রান্ত হয়েছে ৫৮৬ জন।
মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে পাঠানো ডেঙ্গু বিষয়ক এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে তথ্য জানানো হয়।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81