02/25/2025
সামিউর রহমান লিপু | Published: 2024-06-05 22:40:26
পর্তুগালের অভিবাসন আইনে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। বলা যায়, খুব সহজে বৈধ পথে টুরিস্ট বা যেকোনো ভিসা বা অবৈধপথে পর্তুগালে প্রবেশ করতে পারলেই দেশটিতে বসবাস অনুমতি পাওয়ার সুযোগ আর থাকছে না। এই আবেদন প্রক্রিয়াটি অভিবাসীদের কাছে ‘সেফ এন্ট্রি’ হিসেবে পরিচিত ছিল; যা ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে।
চলমান অভিবাসন আবেদনের সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে পর্তুগাল। সোমবার (৩ জুন) রাত ১২টার পর থেকে প্রবেশ করা যাচ্ছে না অভিবাসন আবেদনের ওয়েব সাইট (সেফ)-এ। এতে পর্তুগালে অবস্থানরত নতুন করে আবেদন করতে যাওয়া বাংলাদেশিসহ অভিবাসন প্রত্যাশীরা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়েছেন।
দীর্ঘদিন ধরেই পর্তুগালে অভিবাসন নীতিমালা পরিবর্তনের গুঞ্জন ছিল। মার্চে ক্ষমতায় আসার পরই মন্টিনেগ্রো সরকার এই পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছিল। এ প্রেক্ষিতে ৩ জুন এ বিষয়ে ঘোষণা আসে।
গত ৩ জুন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী মনটিনিগ্রো মন্ত্রিসভার মিটিং শেষে তারা নতুন সরকারের অভিবাসন নীতি উপস্থাপন করেন।
নতুন অভিবাস নীতিতে ৪১টি প্রস্তাবনা রয়েছে; যা বর্তমানে পর্তুগালের অভিবাসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্সি মন্ত্রী আন্তোনিও লেইতাও আমারো বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন।
ফলে যেসব অভিবাসী পর্তুগালে কাজ করতে চান তাদের নির্দিষ্ট ভিসার জন্য এখন থেকে পর্তুগিজ কনস্যুলেটে আবেদন করতে হবে, অন্যথায় তারা পর্তুগালে নিয়মিত হতে পারবেন না। তবে পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশগুলোর জন্য বর্তমান অবস্থান বজায় থাকবে। তাছাড়া দক্ষ কর্মীদের জন্য সুযোগ সৃষ্টি করতে যাচ্ছে এ প্রস্তাবনায়।
শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে সরকার আরও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করবে। তবে শিক্ষার কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর তৃতীয় দেশের শিক্ষার্থীরা নিয়মিত হওয়ার কি প্রক্রিয়া হবে সে বিষয়টি স্পষ্ট করেনি। তবে পর্তুগিজ ভাষাভাষী দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে নিশ্চিত করেছে সরকার।
নতুন প্রস্তাবনায় বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে পর্তুগিজ কনস্যুলেটর সেবার মান বৃদ্ধি, বর্তমান অভিবাসন সংস্থা আইমার পুনর্গঠন, অভিবাসীদের জন্য পুলিশের একটি আলাদা ইউনিট তৈরি, বর্ডার নিয়ন্ত্রণের কার্যকর ব্যবস্থা এবং আশ্রয় প্রার্থীদের জন্য বিভিন্ন সেন্টার তৈরি করা এবং তাদের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী দ্রুত সাড়া দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে।
আইন কার্যকর হওয়ার পর অন্যান্য দেশের নাগরিকদের পর্তুগালের নিয়মিত হওয়া অনেকটাই কঠিন হবে বলে মনে করছেন অভিবাসন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল, পাকিস্তানসহ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে ইতোমধ্যে যারা উল্লেখ্যযোগ্যসংখ্যক হারে পর্তুগাল এসেছেন।
সরকারের পরিকল্পনাটি উপস্থাপনের দুই ঘণ্টার মধ্যে রাষ্ট্রপতি এই ডিক্রি অনুমোদন করেন। রাষ্ট্রপতির প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ডিক্রি অনুমোদনের পরদিন অর্থাৎ চলতি বছরের ৪ জুন থেকে এ আইনের প্রক্রিয়াগুলো কার্যকর হচ্ছে।
পর্তুগালে অভিবাসন প্রত্যাশীদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু এখন নতুন এই সিদ্ধান্ত। যারা নতুন করে পর্তুগালে প্রবেশ করেছেন কিন্তু আবেদন করতে পারেননি তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
বাংলাদেশি অধ্যুষিত পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের মার্তিমনিজ এলাকায় কথা হয় অভিবাসন প্রত্যাশীদের সঙ্গে। ইউরোপে সহজে বসবাস করতে ও কাজের সন্ধানে পর্তুগালে এসেছেন তারা। এদের কেউ এসেছেন ভ্রমণ ভিসা নিয়ে। কেউবা আবার অন্য দেশ থেকে পর্তুগালে এসেছেন। তাদের অনেকেই খরচ করে ফেলেছেন ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। কেউ কেউ ইউরোপের অন্য দেশে বৈধ হতে না পেরে পাড়ি জমিয়েছেন পর্তুগালে।
টাঙ্গাইলের তুহিন মাহমুদ ভ্রমণ ভিসায় এসেছিলেন সেনজেনভুক্ত একটি দেশে। ইউরোপে স্থায়ী হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে গত ১ জুন পর্তুগালে আসেন তিনি। তবে অভিবাসন আবেদনের সুযোগ বন্ধ হওয়ায় স্বপ্ন ভঙ্গ হলো তার।
তুহিন মাহমুদ বলেন, দেশের চাকরি ছেড়ে অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম। তবে নতুন নীতিমালার কারণে আটকে গেলাম। এখন আমি কী করব তা বুঝতে পারছি না।
লিবিয়া থেকে সাগর পাড়ি দিয়ে ইতালি এসেছিলেন আব্দুল জলিল। ইতালিতে বৈধ হওয়ার প্রক্রিয়া ৮-১০ বছর হওয়ায় সহজ পথ খুঁজছিলেন তিনি। পর্তুগালের অভিবাসন প্রক্রিয়া সহজ হওয়ায় এসেছেন দুই সপ্তাহ আগে। তবে অভিবাসন সংস্থায় আবেদন জমা দিতে না পারায় আবারও অনিশ্চয়তার অতল সাগরে পড়লেন তিনি।
যারা পর্তুগালে আছেন কিন্তু আবেদন করতে পারেননি তাদের ভাগ্যে কী ঘটবে এমন প্রশ্নের জবাবে অভিবাসন নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ফ্লয়েনটেকোর পরিচালক আকবর হোসেন চৌধুরী বলেন, এরইমধ্যে যারা আবেদন (সেফ এন্ট্রি) করেছেন তাদের কোনো শঙ্কা নেই। তবে যারা আবেদন করতে পারেননি কিন্তু পর্তুগালে অবস্থান করছেন তাদের বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। ফলে এই বিষয়ে পর্তুগাল সরকারের নির্দেশনা প্রয়োজন।
প্রধানমন্ত্রী লুইস মন্টিনেগ্রো সোমবার বলেছেন, পর্তুগালের দরজা বন্ধ হচ্ছে না। তবে যে রকম অরক্ষিত ছিল এখন আর সে রকম থাকবে না। ওয়ার্ক পারমিট ভিসায় পর্তুগাল আসা যাবে, তবে থাকতে হবে কাজের কন্ট্রাক্ট ও আবাসনের নিশ্চয়তা। চাকরি বা নিয়োগ দেওয়া কোম্পানি বা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও কড়া নির্দেশনা দেওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন পর্তুগিজ প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে, এরইমধ্যে বৈধ হওয়ার আশায় থাকা অভিবাসীদের কাছ থেকে ৩০ মিলিয়ন ইউরো সংগ্রহ করে সরকারি কোষাগারে জমা করেছে পর্তুগালের অভিবাসন সংস্থা আইমা। এখনো ৪ লাখের বেশি আবেদনের নিষ্পত্তি করতে কাজ করছে সংস্থাটি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81