02/25/2025
নেহাল আহমেদ | Published: 2024-08-02 16:08:42
‘রাজাকার’ একটি ঘৃণ্য শব্দ। কারণ ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর দোসর রাজাকার বাহিনী এদেশের মানুষের ওপর হত্যাযজ্ঞসহ জঘন্য অত্যাচার চালিয়েছিল।তাদের ঘৃন্য অপরাধের কারনে আমরা আজও ঘৃনা প্রকাশ করতে, রাষ্ট্রের বিপক্ষে যারা কাজ করে যারা রাষ্ট্রের ক্ষতি চায় তাদেরকে রাজাকারের অনুসারী মনে করে রাজাকার বলি।
অতি সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী নিজেরাই নিজেদের ‘রাজাকার’ বলেছেন। স্লোগানের আকারে তারা বলেছেন, ‘চেয়েছিলাম অধিকার, হয়ে গেলাম রাজাকার’! ‘তুমি কে আমি কে রাজাকার রাজাকার।
তারা কেন বলেছে কি কারনে বলেছে তা কি কখনো ভেবে দেখেছেন? বিষয়টা এমন নয় তো যে নিজের অপরাধ গোপন করতে দেশপ্রেমিককে রাজাকার তকমা দিয়ে নিজের অপরাধ আড়াল করতে চাচ্ছেন।
একটা ঘটনা বলি। ছোট্টবেলায় একবার একটা চোর আমাদের পাড়ায় চুরি করতে এসে প্রায় ধরা পড়ায় মতো অবস্থা। গেরস্তের চিৎকার চেঁচামেচিতে গ্রামবাসি লাঠিসোটা নিয়ে চোর কোথায় কোন দিকে গেলো বলে এগিয়ে আসে। গ্রামবাসির সেই দলে চোর কখন যেন ঢুকে নিজেও চোর চোর বলে চিৎকার করছে আর বলছে চোর কোথায় গেলো চোর কোন দিকে গেলো।
এই গল্পের মতো অনেক রাজাকার তাদের চেহারা ঢাকতে রাজাকার শব্দ ব্যবহার করছে না তো?
আমি দীর্ঘদিন মুক্তিযোদ্ধাদের গল্প সংগ্রহ করার জন্য গ্রামগঞ্জ মাঠঘাট ঘুরে বেড়িয়েছি। নানান অভিজ্ঞতা হয়েছে। তাদের মুল্যায়ন অবমুল্যায়ন দেখেছি। অনেক প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখেছি শুধুমাত্র একটা কাগজের অভাবে তালিকাভুক্ত হতে পারেনি। অনেক হিন্দু ভয়ে নাম লিপিবদ্ধ করেনি। পিঠে গায়ে পাকিস্থানের বুলেটের ক্ষত থাকলেও প্রশাসনিক জটিলতায় তাকে তালিকা ভুক্ত করা হয়নি। অনেক মুক্তিযোদ্ধা, মাঠে কাজ করে, রিকশা চালিয়ে, আইসক্রিম বিক্রি করে ধুঁকে ধুঁকে বেঁচে আছে।
অনেক মুক্তিযোদ্ধা সংগঠককে বলতে শুনেছি আমি নিজে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করেছি ট্রেনিং দিয়েছি। আমি কার কাছ থেকে সার্টিফিকেট নিবো। ঠিক তার বিপরীতে অনেক মুক্তিযোদ্ধাকে অভিযোগ করতে শুনেছি দশ বিশ টাকার লাল বার্তার কাগজ কিনে আজ যারা মুক্তিযোদ্ধা হয়েছে তাদের দাপটে আমরা হারিয়ে যাচ্ছি।
এই কথাগুলো এই কারনে বললাম যারা দেশপ্রেমিক সেজে যাকে তাকে রাজাকার রাজাকার বলে নিজেকে মহৎ দেখাচ্ছেন তারা কি এই সব অসহায় রাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠ সন্তানদের কোন খবর নিয়েছেন?
এখনো অনেক রাস্তার নামকরন করা আছে রাজাকারের নামে। সেগুলোর নাম পরিবর্তনের জন্য আওয়াজ তুলেছেন। অনেক প্রতিষ্ঠানের স্বীকৃত রাজাকারের সন্তান, জামাত শিবিরের কর্মিরা দখল করে দম্ভ দেখাচ্ছে। রাজাকারের নামে নতুন রাস্তা হচ্ছে তাদের ব্যাপারে কোন কথা বলেছেন। বরং এটা দেখেছি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি হয়ে সে সব রাস্তার উদ্বোধন করেছেন। রাজাকারের সন্তানের সাথে ছবি তুলে তাকে আমার অভিভাবক লেখার সুযোগ করে দিয়েছেন। জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে জমি দখল করেছে।
আমার মনে হয় রাজাকার শব্দটি প্রয়োগের ক্ষেত্রেও যে আমাদের সবারই সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন, এই কথাটি বোধহয় আর বলার অপেক্ষা রাখে না। যত্রতত্র, যেখানে-সেখানে, যাকে তাকে, যখন-তখন ইচ্ছা হলো, আর রাজাকার বলে দিলাম, তাহলে কিন্তু শব্দটির অপব্যবহার বা অপপ্রয়োগ হয়ে যাবে যা ইতিমধ্যে হয়ে গেছে।
রাজাকারকে রাজাকার বললে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু কাউকে পছন্দ না হলেই বা কারও মতের সঙ্গে নিজের মতের মিল না হলেই তাকে রাজাকার বলতে হবে, এই মানসিকতা থেকেও আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। তা না হলে মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান করা হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। রাষ্ট্রের উচিৎ ছিলো রাজাকারের তালিকা তৈরি করা। রাষ্ট্র যখন রাজাকারকে শনাক্ত করতে পারছেন তখন আপনি কিংবা আমি কি যাকে তাকে রাজাকারের খেতাব দেয়ার যৌক্তিকতা রাখি?
সম্ভবত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক আব্দুল হান্নান খানের ২০১০ সালে ট্রাইব্যুনাল গঠিত হওয়ার পর ‘রাজাকার’ তালিকা সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছিলো। আনসার বাহিনী ও জেলা-মহকুমা হিসাবরক্ষণ অফিস থেকে এটা পাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ৬৪ জেলা ও আনসার হেডকোয়ার্টার্সে লিখেও সেই তালিকা পাওয়া যায়নি।
সে সময় তিনি বলেন, জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধাদের মাধ্যমে একটি তালিকা তৈরি করা হবে। কিন্তু দেখা গেছে, ওই তালিকায় প্রকৃত তথ্য আসেনি। কেউ প্রলোভনে পড়ে, কেউ আত্মীয়তার সম্পর্কের কারণে কিংবা নানা কারণে অনেক নাম বাদ দেন। এই কারণে আমরা আর ওই তালিকার ওপর নির্ভর করতে পারিনি।’
ভারতের প্রশিক্ষণ ক্যাম্পে ট্রেনিং নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের যেমন নির্দিষ্ট তালিকা রয়েছে; তেমনই রাজাকাররাও যেহেতু রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ভাতা নিত, প্রশিক্ষণ নিত, তাদেরও নির্দিষ্ট তালিকা থাকার কথা। আমরা যদি সত্যিকারের রাজাকারদের তালিকা তৈরি করতে পারি তাহলে রাজাকাররা আর অন্যায় সুযোগ নিতে পারবেনা। স্বাধীনতার ৫৩ বছর পরও যদি রাজাকারের তালিকা না তৈরি করা হয় তাহলে হয়তো আর কখনো সম্ভব হবে না। স্বাক্ষী, প্রদক্ষদর্শী নির্যাচিত সত্য সব হারিয়ে যাবে, সব হারিয়ে যাচ্ছে।
নেহাল আহমেদ
কবি ও সাংবাদিক।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81