02/24/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2024-08-27 14:10:21
বাংলাদেশে হাজার হাজার মানুষকে গুম করে এক ভীতিকর রাষ্ট্র তৈরি করেছিল বিগত সরকারের দায়িত্বশীল আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুধু জীবিত নয় শত শত লাশ ঘুম করেছিল তারা। যা পরিচিতি পায় ‘আয়নাঘর’ নামে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও এই মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ন্যায়বিচার পাননি। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে।
আগামী ৩০ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের আগেই এই সনদে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ।
মানবাধিকার সংগঠন অধিকারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত ১৫ বছরে বাংলাদেশে সাত শর বেশি মানুষ গুম হওয়ার ঘটনা ঘটে। এর মধ্যে ১৫০ জনের বেশি মানুষের খোঁজ এখনো পাওয়া যায়নি।
গুমবিরোধী সনদটি ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে গৃহীত হয়। ৩২টি দেশ এটি অনুস্বাক্ষর করার পরে ২০১০ সালে তা বাস্তবায়ন শুরু হয়। সামগ্রিকভাবে এই সনদের লক্ষ্য গুম বন্ধের পাশাপাশি এই অপরাধের জন্য দায়মুক্তি বন্ধ করা, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের সহায়তা দেওয়া। এখন পর্যন্ত বিশ্বের ৭৫টি দেশ এই সনদে যুক্ত হয়েছে।
বাংলাদেশ জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক ৯টি সনদের ৮টিতে সই করেছে। জাতিসংঘের দীর্ঘদিনের অনুরোধের পরও বাংলাদেশ গুমবিরোধী সনদে সই করেনি। অন্তর্বর্তী সরকার মানবাধিকার সমুন্নত রাখার পাশাপাশি গুমের সংস্কৃতি বন্ধ করতে চায়। এ লক্ষ্যে সরকার গুমবিরোধী সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে।
রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গুমের অভিযোগ নিয়ে গত দেড় দশকের বেশি সময় ধরে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের সমালোচনা রয়েছে। শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর ‘আয়নাঘর’ হিসেবে পরিচিত গোপন বন্দিশালা থেকে দীর্ঘ সময় পর বেশ কয়েকজন ব্যক্তি মুক্ত হওয়ার পর গুমের বিষয়টি জোরালোভাবে সামনে আসে।
গুমের শিকার ব্যক্তিদের স্বজনেরা দীর্ঘদিন ধরে দাবি জানালেও এই মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে ন্যায়বিচার পাননি। এই পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে যুক্ত হতে যাচ্ছে। আগামী ৩০ আগস্ট গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক দিবসের আগেই এই সনদে যুক্ত হতে চায় বাংলাদেশ।
গুমবিরোধী সনদে গুমকে মানবতাবিরোধী অপরাধ হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে। এই সনদের যথাযথভাবে প্রয়োগ হচ্ছে কি না, সেটি দেখভালের জন্য জাতিসংঘের ১০ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি কাজ করে। ওই কমিটি পক্ষভুক্ত রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিবেদন যাচাই করে থাকে। সনদের ৩৩ অনুচ্ছেদে বলা আছে, সনদের পক্ষভুক্ত কোনো দেশে যদি গুমের ঘটনা ঘটে, তবে ওই দেশের পরিস্থিতি দেখার জন্য কমিটি সদস্যরা সফরও করতে পারে। যদিও পক্ষভুক্ত অনেক দেশ এই অনুচ্ছেদটির শর্ত মেনে নেয়নি।
সনদে মোট ৪৫টি অনুচ্ছেদ আছে। এতে জাতিসংঘের কোনো সদস্যরাষ্ট্র পক্ষভুক্ত হলে সনদের ‘এক বা একাধিক অনুচ্ছেদ মেনে চলবে না’ বলেও তাদের সিদ্ধান্ত জাতিসংঘকে জানাতে পারে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা ও মালদ্বীপ এই সনদে অনুস্বাক্ষর করেছে; অর্থাৎ এটি তাদের অভ্যন্তরীণ আইনের অংশ হিসেবে গ্রহণ করেছে। এ ছাড়া ভারত শুধু এটি সই করেছে এবং তবে অনুস্বাক্ষর করেনি। অন্যদিকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী পাঁচ সদস্যের মধ্যে শুধু ফ্রান্স এটি অনুস্বাক্ষর করেছে।
গুমবিরোধী সনদে বাংলাদেশের যুক্ত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে জেনেভায় জাতিসংঘের মিশনগুলোতে বাংলাদেশের সাবেক স্থায়ী প্রতিনিধি মোহাম্মদ সুফিউর রহমান বলেন, বাংলাদেশে যে গুমবিরোধী আন্তর্জাতিক সনদে পক্ষ হতে যাচ্ছে এর সঙ্গে শুধু মানবাধিকার সমুন্নত রাখার বিষয়টিই জড়িত নয়। মানবাধিকারের পাশাপাশি এর সঙ্গে আইনের শাসন, গণতান্ত্রিক চর্চা, সামাজিক ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠার মত বিষয়গুলো জড়িত। ফলে জাতিসংঘের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পরিসরে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সম্পর্ককে বিবেচনায় রেখে বাংলাদেশ কিছুটা সময় নিয়ে এই সনদে পক্ষ হওয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিলে সমীচীন হতো।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81