02/24/2025
সালাহউদ্দিন মিঠু | Published: 2024-09-18 11:25:54
বাংলাদেশ রেলওয়ের ম্যানেজ মাস্টার এস এম ফেরদৌস আলম রেল ভবনে বসেই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। তার নেতৃত্বাধীন রেলওয়েতে গড়ে ওঠা ঠিকাদারি সিণ্ডিকেট এখনো রয়েছে বহাল তবিয়তে। আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলেও ফেরদৌসের দোসররা রয়েছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। পতিত সরকার আমলে এই সিন্ডিকেট শুধু তার নিজ দপ্তরেই নয়, পুরো রেলওয়ের টেন্ডার, নিয়োগ বদলি সহ বহুমাত্রিক কাজে এতটাই প্রভাব খাটিয়েছেন যে, সব সময় তাদের ক্ষমতার দাপটে রেলওয়ে প্রশাসনে অস্থিরতা বিরাজ করতো। ভয়ে সবাই থাকতেন তটস্থ।
প্রকৌশলী ফেরদৌস নিজেকে সরকার দলীয় ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা পরিচয় দিয়ে একের পর এক অপকর্ম করেছেন। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে টাকার যোগানদাতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। রেলওয়ের মহাপরিচালক সহ ফেরদৌস বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের ঘোর বিরোধিতা করেছেন এমন গুরুতর অভিযোগ এখন সামনে এসেছে। ভুক্তভোগীরা তদন্ত কমিটির করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।
অভিযোগে প্রকাশ, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ছাত্রলীগের নামধারী ঠিকাদাররা তাকে ঘিরে গড়ে তুলেছিলেন।ফেরদৌস সিন্ডিকেটের বাইরে রেলওয়েতে অন্য কোন ঠিকাদারকে কাজ দেয়া হতোনা। তিনি অদক্ষ হয়েও দক্ষতার ভিত্তিতে ম্যানেজপ্রক্রিয়ায় পদোন্নতি নিয়ে ছিলেন। এর জের টানতে হয়েছে রেলওয়ের সাধারণ কর্মচারী এবং সাধারন যাত্রীদের। রেলওয়ের ডিজিও বিভিন্ন সময়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের ডিসিশন নিতেন তার কথার উপর ভিত্তি করে। সাবেক রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক চৌধুরীর ধানমন্ডির বাসায় টাকার বস্তা নিয়ে যেতেন অসাধু এই কর্মকর্তা। এরপর সাবেক আরেক রেলমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজনের তলপি বাহক হয়ে উঠেন ফেরদৌস। রেলের লিজ নেয়া কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তার ছিলো দহরম মহরম সম্পর্ক। কোটি কোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া ফেরদৌস একই কায়দায় সাবেক রেলমন্ত্রী জিল্লুল হাকিম এর খুব কাছের হয়ে যান অতি দ্রুত সময়ের মধ্যে। মন্ত্রীও তাকে কাছে টেনে নেন নিজের স্বার্থে। মন্ত্রীর ছেলে মিতুল হাকিমের অপরিসীম আপনজন সাজেন প্রকৌশলী ফেরদৌস। মিতুল হাকিমকে মাঝে মধ্যে কিছু রসদ এর ব্যবস্থাও করে দিতেন তিনি। গুলশানের একটি থ্রি স্টার হোটেলে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে সময় কাটাতেন এই সংঘবদ্ধ চক্র।
সাবেক রেলমন্ত্রী ও মহাপরিচালক (ডিজি) এর তদবিরে রেলওয়ের 'ওয়ে এন্ড ওয়ার্কস ম্যানুয়াল' এ,ই,এন অতি গুরুত্বপূর্ণ পোস্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। তার অদক্ষতার কারণে ভয়াবহ দূর্ঘটনা ঘটেছে একাধিক বার।
সাবেক বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এস এম ফেরদৌস আলম কখনোই মাঠ পর্যায়ে এ,ই,এন এর দায়িত্ব পালন করেননি। তার পরও কোন এক অদৃশ্য ক্ষমতাবলে টেকনিক্যাল এমন একটি পদে পোস্টিং বাগিয়ে নিয়েছিলেন। সাথে দায়িত্ব পালন করেছেন ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এর।
রেলওয়ে সূত্রমতে, ২০২৩ সালে ২৭ টি রেল দূর্ঘটনার মধ্যে ১৪ টি ঘটেছে ফেরদৌস আলমের দায়িত্বরত এলাকার সমূহের মধ্যে। ফেরদৌস আলমের অদক্ষতা এ সকল দূর্ঘটনার পেছনে দায়ী হলেও তা নিয়ে প্রশ্ন তোলার সাহস করেনি কেউ। কারণ তার পেছনে মন্ত্রী এবং মহাপরিচালক শক্তি হিসেবে কাজ করেছেন। এসব দূর্ঘটনায় ব্যাপক যানমালের ক্ষতি হলেও এসএম ফেরদৌস আলমতার পদে ৩ বছরের অধিক সময় ধরে বহাল তবিয়তে ছিলেন। সেই সাথে তিনি রেলওয়ে জুড়ে বিস্তার করেছিলেন ব্যাপক প্রভাব।
নিজস্ব লোকজন দ্বারা গড়ে তুলেছিলেন বিশেষ সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে তিনি রেলওয়ের অধিকাংশ টেন্ডার নিয়ন্ত্রণে মরিয়া ছিলেন। কোন ঠিকাদার রেলওয়েতে কাজ পেতে চাইলে ফেরদৌস সিন্ডিকেটকে কমিশন না দিয়ে কাজ পাওয়ার কোন উপায় ছিলোনা। তাদের নির্ধারিত ৫% থেকে ৮% কমিশন দিতে হতো উক্ত সিন্ডিকেটকে। ফেরদৌস আলম প্রকাশ্যে কমিশন বাণিজ্য করতেন। রেলওয়েতে তার ছিলো নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী। বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে খারাপ আচরণ করা ছিলো ফেরদৌস আলম এর প্রতিদিনের রুটিন। এক সময় রেলওয়ের ডিজির পিএস ছিলেন ফেরদৌস আলম । সেই সুবিধা ব্যবহার করে বাগিয়ে নেন ঢাকা বিভাগীয় প্রকৌশলী-১ এর দায়িত্ব। এখানে তাকে তার কর্মদক্ষতা বিবেচনায় নিয়োগ দেয়া হয়নি। যার খেসারত দিতে হয়েছে রেলওয়ের কর্তৃপক্ষকে। তার কারণে বার বার রেল দুর্ঘটনায় রেল কর্তৃপক্ষের সুনাম এবং আর্থিক ক্ষতি হয়েছে লাখ লাখ টাকা। সাধারণ যাত্রীদের জীবন ও সম্পদ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছিলো ফেরদৌসের কারণে। তবু ফেরদৌস আছেন বহাল তবিয়তে। শুধুমাত্র তাকে বদলি করা হয়েছে রেল ভবনে। তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমা পড়েছে বলে রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে।
ঠিকাদারদের অভিযোগ, নগদ ৫% কমিশন গ্রহণের মাধ্যমে তার পছন্দমতো ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দিতেন এই কর্মকর্তা। তার কমিশন বাণিজ্যের প্রমাণ রয়েছে গণমাধ্যমের হাতে।
এদিকে কর্মচারী কর্মকর্তাদের সাথে অসদাচরণের অভিযোগ উঠেছে এসএম ফেরদৌস আলমের বিরুদ্ধে। নিরীহ কর্মচারীদের কে অফিসে ডিউটির বদলে নিজের বাসায় ডিউটি করাতেন। ডিউটি করতে রাজি না হলে জোরপূবর্ক বাধ্য করাতেন। তার বাসায় বাড়তি ডিউটি করার পর বেতন ভাতা নিতেন রেলওয়ে হতে। ১৪/১৫ ঘন্টা ডিউটি করে একেক জন কর্মচারি অসুস্থ হয়ে পড়তেন।
আওয়ামীলীগ সরকারের এই পেটুয়া ক্ষমতার দাপট ও সিন্ডিকেট বাণিজ্যের মাধ্যমে অঢেল সম্পদ এবং কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। তিনি আলিশান জীবন যাপন করেন। সূত্রমতে, ফেরদৌস আলম একই পদে অধিক সময় ধরে থাকার কারণে তার পক্ষে সিন্ডিকেট গড়ে তোলা ও নিয়ন্ত্রণ করা সহজ হয়ে উঠেছিলো। তিন বছরের অধিক সময় তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে থেকে রেলওয়েতে নানা অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়েন।
গত ৫ আগষ্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পালানোর পর কিছুটা দুর্বল হয়ে পড়ে ফেরদৌস সিন্ডিকেট। ফেরদৌসকে বদলি করা হয় রেলভবনে। কিন্তু সেখান থেকেই তিনি তার সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করছেন। চেষ্টা করছেন পূণরায় আগের জায়গায় ফিরতে। অত্যন্ত ধুুরন্দর ফেরদৌস আলম এর অতীত রেকর্ড যাচাই-বাছাই করার দাবি জানিয়েছেন রেলওেয়ের ভুক্তভোগী কর্মচারীবৃন্দ।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81