02/24/2025
নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী | Published: 2024-10-02 16:37:33
রাজবাড়ী জেলায় এবার শারদীয় দূর্গাপূজা ৪৪১টি মন্ডবে অনুষ্ঠিত হবে। শুধু রাজবাড়ী সদরেই ১১০টি মন্ডবে হবে দূর্গা পূজা। আর এইসব পূজায় প্রতিমা তৈরি করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন শিল্পীরা।
৭০ বছর বয়সেও সুনিপূণ দক্ষতায় প্রতিমা নির্মাণ করে চলেছেন অমল পাল। তার দৃষ্টিতে, এইসব শিল্পীদের প্রাতিষ্ঠানিক শিল্প-শিক্ষা নেই বলে শিল্পী হিসেবে সামাজিক স্বীকৃতি পান না। সমাজের অধিকাংশ মানুষের কাছে তারা প্রতিমার কারিগর হিসেবেই পরিচিত।
তবে অমল পাল নিজেকে পরিপূর্ণ শিল্পীই মনে করেন। তিনি বলেন, ‘আমার যে কাজ, তা সার্টিফিকেট দিয়ে বিচার করলে কি চলবে? কেবল কাগজ দিয়ে কি আর শিল্প হয়। অবশ্যই অনেকেই আছেন যারা স্বশিক্ষায় শিক্ষিত। তারা প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় যারা শিল্পী হয়েছেন তাদের চেয়ে মহৎ শিল্পীর আসনে প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন।
অমল পালের ১৫ বছর বয়সে প্রতিমা নির্মাণে হাতেখড়ি। তখন অবশ্য বাবা-দাদাকে সহায়তাতেই সীমাবদ্ধ ছিল কাজ। বয়স ২০ বছর হলে নিজেই শুরু করেন প্রতিমা নির্মাণ। দেখতে দেখতে পার হয়ে গেছে ৫০ বছর। রাজবাড়ী সদরের বরাট পালপাড়ার অমল পালের বয়স এখন ৭০। বংশপরম্পরায় কৈশোরে যে কাজকে পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন, বয়োবৃদ্ধ হয়েও সেই কাজ ছেড়ে দেননি। অভিজ্ঞ আঙুলের কারুকাজে এখনো নিপুণ প্রতিমা নির্মাণ করে চলেছেন তিনি। তার হাতে নির্মিত দেবী দুর্গাসহ লক্ষ্মী-সরস্বতী-কার্তিক-গণেশের প্রতিমা যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে ভক্তদের কাছে।
শারদীয় দুর্গোৎসব সামনে রেখে ফের ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন অমল পাল। বিনোদপুর সার্বজনীন পূজা মন্ডবে গিয়ে দেখা গেল, এই বয়সেও কাদামাটি দিয়ে একটু একটু করে নিপুণ হাতে গড়ে তুলছেন দেবী প্রতিমা। সেই কাজ করতে গিয়ে শরীরে ক্লান্তি এলেও মনের আনন্দ তাকে ভুলিয়ে দেয় সেই ক্লান্তি।
অমল পালের তিন ছেলে দুই মেয়ে। তার ছেলেরাও বেছে নিয়েছেন প্রতিমা তৈরির কাজ। বর্তমান সময়ে খরচের সঙ্গে কুলিয়ে এই পেশা ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে তাদের জন্য। রাজবাড়ী জেলায় ঠিক কতজন প্রতিমা শিল্পী আছে সঠিক তথ্য না থাকলে ত্রিশ থেকে পঁচিশ জনের কম হবেনা বলে জানান তিনি।
৫০ বছর ধরে নিজ হাতে পালপাড়ার প্রতিমা তৈরির কারিগর মন্টুচন্দ্র পাল বলেন, ‘বাপ-দাদারা সবাই প্রতিমা বানাতেন। তাদের হাত ধরেই প্রতিমা বানানো শুরু। মা দুর্গার প্রতিমা তৈরি করে খুব আনন্দ পাই।’
মন্টু চন্দ্র বলেন, ‘এখন তো প্রতিমা তৈরিতে খরচ অনেক। কিন্তু প্রতিমার দাম তো আগের মতোই আছে। তাই লাভ খুব কম। এই লাভে প্রতিমা তৈরি করে কোনোভাবেই পোষায় না। তবে এই পেশা পূর্বপুরুষের পরম্পরার পেশা। তাই ছাড়তেও পারি না। এই বুড়ো বয়সে অন্য কিছু তো করতেও পারব না।’
কদিন পরই শুরু হচ্ছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। দেবীদুর্গার আগমন ঘিরে তাই মন্টুচন্দ্র এবং তার সাগরেদদের কাটছে ব্যস্ত সময়।
প্রতিমা তৈরীর আরেক কারিগর অসীম কুমার পাল বলেন, ‘আমরা অনেক দিন ধরে এই কাজ করছি। সব জিনিষের দাম বেশি। যে মজুরি পাই, এই টাকা দিয়ে সংসার চালানো কঠিন। এর আগে যে দামে প্রতিমা তৈরি করতাম, এখনো একই দামে করতে হচ্ছে। কিন্তু সব জিনিসের দাম তো বেড়ে গেছে। সেটা কেউ বোঝেন না।’
প্রতিমা কারিগরদের বাড়ি ঘুরে দেখা যায়, কাদামাটি দিয়ে দূর্গাসহ কার্তিক, গণেশ, লক্ষ্মী আর সরস্বতীর অবয়ব অনেকটাই তৈরি এখন। এখন শুরু হবে রঙের আঁচড় দেয়ার কাজ। তারপর অলংকরণের মাধ্যমে মণ্ডপে যাওয়ার প্রস্তুত হবে প্রতিমাগুলো।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য থেকে জানা যায়, এ বছর রাজবাড়ী জেলায় ৪৪১টি পূজামণ্ডপে দুর্গাপূজার আয়োজন হয়েছে। এর মধ্যে সবগুলো মন্ডবের প্রতিমা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। চলছে রং করা এবং সাজ সজ্জার কাজ।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81