02/23/2025
বিশেষ প্রতিনিধি | Published: 2024-12-11 11:31:45
বিআইডব্লিউটিএ'র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব আলী টাকা ছাড়া ফাইল সই করেননা। পতিত সরকারের আমলে যেসব ঠিকাদার কাজ করতেন তাদেরকে অন্তবর্তী সরকার আমলেও কাজ দিয়ে কমিশন বাণিজ্য করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। আইয়ুব আলী কর্তৃপক্ষকে থোড়াই কেয়ার করে নিজের ক্ষমতা বলে নিজস্ব ঠিকাদারকে কাজ দেয়ায় অন্য ঠিকাদারদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের খালাত ভাই পরিচয় দানকারী অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব আলীর দাপট কমেনি।তিনি বিআইডব্লিউটিএ'তে পতিত সরকার আমলে একতছত্র আধিপত্য বিস্তার করে সব কাজ বাগিয়ে নিতেন। এখনো তার ক্ষমতার প্রভাবে টেন্ডার সহ সব কিছুই নিয়ন্ত্রণ করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ঢাকা চট্টগ্রাম আঞ্চলিক নৌপথ পথ ও বরিশাল এলাকায় নদী খনের কাজ দেয়া হয়েছে বঙ্গ ড্রেসিং কোম্পানিকে। প্রতিষ্ঠানদের সাথে তিন বছরের চুক্তি করা হয়েছে। চুক্তি অনুযায়ী রেড নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৩২ টাকা। এক বছর আগে শুরু হওয়া এই প্রযেক্টটি চলছে ধীরগতিতে। এছাড়া তিতাস নদী খনন ও কর্ণফুলী জয়েন্ট নদী খনন এর কাজ শুরু করা হয়েছে এক বছর আগে। ওই কাজটিতেও ৪৮০ টাকা রেড নির্ধারণ করা হয়। পতিত সরকারের আমলে এই কাজ গুলোতে একক আধিপত্য বিস্তার করে আইয়ুব আলী। ঠিকাদাররা কাজ না পেয়ে একাধিক বার আইয়ুব আলীকে মারধরও করেছেন।তারপরও লজ্জা বা বিবেক জাগ্রত হয়নি।
অভিযোগে আরো জানা যায়, অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেয়ার পর সম্প্রতি শসানঘাট টার্মিনাল বাবদ ৬০ কোটি টাকার কাজ দেয়া হয়েছে আওয়ামী ঠিকাদার বহু ড্রেজিং এর মালিক সাইফুল তার বাড়ী গোপালগঞ্জে। তিনি সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্র্রী খালিদ মাহমুদের আস্থাভাজন।ইসলামকে।তার পছন্দের ঠিকাদার বহু ডেজিং কোম্পানীকে কাজের ব্যবস্থা প্রতিটি প্লটুনের দাম ধরা হয়েছে আড়াই কোটি টাকা করে।যার আসল মুল্য হচ্ছে ৬০/৭০ লাখ অথচ এই টার্মিনালটি ব্যবহারিত হচ্ছে না। যেখানে সদরঘাটের মতো টার্মিনাল ফাঁকা পড়ে আছে। সূত্রমতে, প্রকল্পের কাজ চলছে খুড়িয়ে খুড়িয়ে। কর্তৃপক্ষ কাজ শেষ করার জন্য আইয়ুব আলীকে তাগিদ দিলেও তা শুনতে নারাজ তিনি। ওয়ার্ক অর্ডার এর জন্য ব্যস্ত আইয়ুব আলীর কাজ তোলার জন্য কোন উদ্যোগ নেই। বিআইডব্লিউটিএ'তে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা রেড দেয়া হয় অধিকাংশ কাজে। কিন্তু আইয়ুব আলী সব কাজেই চড়াদামে রেড দিয়ে নিজের কমিশন বাগিয়ে নেন কোটি কোটি টাকা। ঠিকাদার সাইফুলের অস্ট্রেলিয়াতে ব্যবসা আছে। যেখানে সাইফুলের ছেলে থাকে। এই কাজটির কমিশন বাণিজ্য করেছে আইয়ুব আলী তার ছেলের মাধ্যমে সাইফুলের ছেলের কাজ থেকে। এসব অভিযোগ আলোচনায় আসছে
আওয়ামী দুঃশাসন আমলে নিয়োগ, বদলী,টেন্ডার বাণিজ্য, ড্রেজার ও যন্ত্রাংশ কেনাকাটায় গডফাদারের ভুমিকায় ছিলেন তিনি। রাজস্ব বাজেটের আওতায় সকল ধরনের জাহাজ মেরামত কাজে করেছেন পুকুর চুরি। বিল প্রদানের ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠলেও ক্ষমতার বলে সব কিছু করতেন থোড়াই কেয়ার। আইয়ুব আলী নিজের পছন্দসই ঠিকাদারকে কাজ দেয়ায় সম্প্রতি তাকে ঠিকাদাররা পিটুনি দিলেও তিনি আগের মতোই বেপরোয়া । ডিভিশনে কাউকেই তোয়াক্কা করেননা। পতিত সরকারের অনুসারী ঠিকাদারদের সাথে রয়েছে সখ্যতা।
আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে তিনি সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের খালাতো ভাই পরিচয় দানকারী। মূলত শেখরের বদৌলতেই নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরীর একান্ত লোক হয়ে উঠেন তিনি। বিআইডব্লিউটিএ'তে তার ডিপার্টমেন্টে টেন্ডার বাণিজ্য করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। স্ত্রী, সন্তান ও আত্নীয় স্বজনদের নামে বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। পাচার করেছেন বিদেশে কোটি কোটি টাকা। যেকোন সময় বিদেশ পাড়ি জমানোর সম্ভবনা রয়েছে বলে জানাগেছে । দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা পড়েছে। কিন্তু আইয়ুব আলী এসব বিষয় অস্বিকার করেছেন। তিনি বলেছেন, দুদকে তার বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নেই। তিনি সৎ, মেধাবী, নিষ্ঠাবান ও পরিশ্রমী একজন মানুষ।
আইয়ুব আলীর দুর্নীতির ফিরিস্তি এতোই ভয়াবহ যা রীতিমতো সাগর চুরির ঘটনা ঘটেছে। তিনি বিআইডব্লিউটিএ'তে সহকারী প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) হিসাবে ১৯৯২ সালের ১৪ ডিসেম্বর যোগদান করেন। যান্ত্রিক শাখায় চাকরির সুবাধে অনেক যন্ত্রপাতি কেনাকাটায় অনিয়ম, ভূয়া বিল ভাউচার এবং ছোট খাটো চুরির ঘটনার সাথে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে । গত ১৫ বছরে চুষে বেড়াচ্ছেন আইয়ুব আলী। ব্যবহার করেছেন শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরকে। সেসুবাধে নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আইয়ুব আলীকে কাছে টেনে নেন। যতো প্রকার টেন্ডার আছে তার উপর দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। শেখরের কথার বাইরে এক পা এগুতেন না আইয়ুব আলী। বিআইডব্লিউটিএ'তে একতছত্র কায়েম করে আওয়ামীলীগের দুর্নীতির এজেন্ডা বাস্তবায়ন করেছেন। বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-সভাপতি পদে বিআইডব্লিউটিএ শাখার দায়িত্বে থাকা আইয়ুব আলী সরকার পতন হলেও তিনি আছেন বহাল তবিয়তে। আত্নগোপনে থাকা শেখরের সাথে এখনো নিয়মিত যোগাযোগ রক্ষা করছেন বলে ডিভিশনে গুঞ্জন আছে। সর্বত্র বলে বেড়াচ্ছেন যেকোন সময় আবার শেখ হাসিনা দেশে ফিরে আসবেন। তখন দেখে নিবেন সবাইকে।
জানা যায়, ফ্যাসিবাদী সরকারের ১৫ বছরে আইয়ুব আলী ড্রেজিং বিভাগের আওতাধীন ড্রেজার, ড্রেজার সহায়ক জলযান মেরামতের সকল প্রকার কাজ তার সিন্ডিকেট ঠিকাদারদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করতেন। বিআইডব্লিউটিএ'র সমাপ্ত প্রকল্পের ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের ঊপ-প্রকল্প পরিচালক ছিলেন তিনি। ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালকও ছিলেন। বর্তমানে আইয়ুব আলী চট্টগ্রাম হতে ঢাকা পর্যন্ত নৌপথের নাব্যতা উন্নয়ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক। প্রকল্পটিতে ড্রেজি এর নামে কোটি কোটি টাকা অপচয় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ রয়েছে । এতে শুধু লাভবান হচ্ছে ঠিকাদার গোষ্ঠী এবং স্বয়ং আইয়ুব আলী। সরকারের এক টাকার লাভের সম্ভাবনা নেই।
বিআইডব্লিউটিএ'তে চলমান সকল ড্রেজিং প্রকল্প এমনকি সকল ধরনের সংরক্ষণ ড্রেজিং কাজের জন্য ব্যয় হচ্ছে প্রতি ঘনমিটার ১৪৫.০০-১৬০.০০ টাকা। কিন্তু এখানে সে বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পে ঠিকাদারদের সাথে যোগসাজোস করে প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিং এর জন্য ৫০০.০০-৫৫০.০০ টাকা করে বিল ভাউচার করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। অর্থাৎ প্রতি ঘনমিটার ড্রেজিং এর জন্য ঠিকাদারকে ৩৫০-৪০০ টাকা বেশী বিল প্রদান করা হচ্ছে। এ পর্যন্ত দুই টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানদের প্রায় ১৪০ লাখ ঘনমিটার মাটির বিল বাবদ ৭০০ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে। সে হিসেবে অতিরিক্ত বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৪৭৬ কোটি টাকা । এই অতিরিক্ত ৪৭৬ কোটি টাকা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বংঙ্গ ড্রেজার্স লিঃ ও কর্ণফুলী ড্রেজিং লিঃ সাথে ভাগ-বাটারা করে নিয়েছে আইয়ুব আলী। প্রকল্পের দরপত্রে দেয়ার সময় দুইটি লটে কাজের জন্য কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই ঘুষের টাকা তিনি অষ্টেলিয়ায় পাচার করেছেন। সেখানে তার বড় ছেলেকে সেটেল করেছেন। সেখানে আলিশান বাড়িও নির্মাণ করেছেন। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় চাদপুরে র্টামিনাল, পানগাঁ পোর্ট নির্মান কাজ দেয়া হয়েছে তমা কন্ট্রাকশনকে। নারায়নগঞ্জ টার্মিনাল নির্মান কাজ ও জিপিটিসি নির্মান কাজ ২টি এসডিই কে দেয়া হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, বাজার মূল্যের অধিক মূল্যে এই কাজ দেয়া হয়েছে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরীকে ম্যানেজ করেই এসকল বড়ো বড়ো অপকর্মে লিপ্ত ছিলেন আইয়ুব আলী সিন্ডিকেট।
ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের উপ-পরিচালক থাকা অবস্থায় কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। ড্রেজার ও আনুষঙ্গিক জলযান ক্রয় সংগ্রহ প্রকল্পের প্রকল্প দুইটির মূল্য ছিলো ৩৭০০.০০ কোটি টাকা। ২০১৭-১৮ হতে ২০২১-২২ অর্থ বছরে ৩৫ টি ড্রেজার, ২ টি টাগ বোট, ৩০ টি হাউজ বোট, ৩৫ টি ক্রেইন বোট, ৫০ টি সার্ভে ভেসেল সহ আরও অনেক যন্ত্রপাতি কাগজে কলমে কেনা হয়েছে। ৩৫টি ড্রেজারের মধ্যে ১৫টি ড্রেজার গত ৩ বছর যাবৎ নষ্ট হয়ে পড়ে আছে। প্রায় ৫ বছর আগে ৩৫টি সার্ভে ভেসেল কেনার পর হতেই নারায়নগঞ্জে পরে আছে। এগুলো পাহাড়া দেয়ার জন্য কোন লোক রাখা হয়নি সেখানে। কোন কাজেও আসছে না ভেসেল গুলো। প্রকল্প দুই টির আওতায় ৫০ কিলোমিটার পাইপলাইন কাগজে কলমে দেখানো হলেও বাস্তবে তা ৭ কিলোমিটার হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইয়ুব সিন্ডিকেট এর বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ হচ্ছে, মাঝে-মধ্যে নারায়নগঞ্জ গোডাউনে নিজেরাই আগুন লাগিয়ে দিয়ে সকল পাইপ, হুইজ পাইপ ইত্যাদি পুড়ে চাপিয়ে দিতেন বিএনপি পন্থী কর্মচারীদের উপর।
অভিযোগ প্রকাশ, বাস্তবে মালামাল না ক্রয় করেই ঠিকারদারকে ১৯০০ কোটি টাকার বিল প্রদান করেছেন। বিনিময়ে আতাহার আলী সরদারকে ১২০ কোটি এবং প্রধান প্রকোশলী রবিউল ইসলামকে ( ডিজাইন এন্ড মনিটরিং) ৭০ কোটি টাকা ঘুষ দেন বলে অভিযোগ জানা গেছে। রবিউল ইসলাম একজন পরহেজগার ব্যক্তি হিসেবে সকলের কাছে পরিচিত। আইয়ুব আলী ভাগে পেয়েছেন ৫০ কোটি টাকা। এ কে এম ফয়সাল আলম ঘুষ নিয়েছেন ৩৬ কোটি টাকা। তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম নিয়েছেন ৩৫ কোটি টাকা। সরকারের কোটি কোটি টাকা লুটপাট করেএই চক্রটি এখনো রয়েছেন বহাল তবিয়তে।
আইয়ুব আলী বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পের দুই টি নৌপথের ড্রেজিং কাজের জন্য দুইটি প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী কোং এর নিকট হতে ১০ কোটি টাকা ও বঙ্গ ড্রেজার্স লিঃ এর নিকট হতে ৭ কোটি টাকা ঘুষ নিয়ে চুক্তি করেন বলে গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। হরিনা আলু বাজার, লাহারহাট-ভেদুরিয়া দুইটি রুটে ইতোপুর্বে বিআইডব্লিউটিএ ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা ব্যয় করে নৌপথ ২টি সচল রেখেছে। সেখানে আইয়ুব আলী ৬০ কোটি টাকা বছরে ব্যয় দেখাচ্ছেন। যা বিআইডব্লিউটিএ'র ইতিহাসে এমন অফিসার আর চোখে পড়েনি বলে মন্তব্য করেছেন কর্মচারীরা। শুধু একটি জায়গা থেকেই আইয়ুব আলী ২৫ কোটি টাকা বছরে ঘুষ নিচ্ছেন বলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন কর্মকর্তা জানান ।
আরো অভিযোগ হচ্ছে, নরসিংদি ও বাঞ্চারনামপুর এলাকায় দুইটি রুটে ড্রেজিং কাজ না করেই ২০০ কোটি টাকা বিল ভাগ বাটোয়ারা করছেন কর্ণফুলী কোং সাথে আইয়ুব আলী। সর্বশেষে গত ৫ আগস্ট যেদিন শেখ হাসিনা পালিয়ে যান। ওই দিন বিকেল ৪.৩০ টার দিকে বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্পের আওতায় ঢাকার বুড়ীগঙ্গার তীরে শ্মাশান ঘাট এলাকায় বিল্ডিং নির্মাণ কাজের একটি দরপত্র আহ্বান করেন। নৌ প্রতিমন্ত্রীকে ব্যবহার করে ৩০০ কোটি টাকার কাজ অনুমোদন করিয়ে নেন। সরকার পতনের দিনও দূরদর্শিতার পরিচয় দিয়েছেন আইয়ুব আলী। খালিদ মাহমুদ এবং আইয়ুব আলী ওই দিন নগদ ৩০ কোটি টাকা ঠিকাদারের কাছ ঘুষ গ্রহণ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে। টাকার লোভে অন্ধের মতো সই করেন খালিদ মাহমুদ। আইয়ুব আলী বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন ঠেকাতে কোটি টাকা খরচ করেছেন বলেও জানা গেছে। ঠিকাদারকে কাজ দেয়ার জন্য বিআইডব্লিউটিএ‘র চেয়ারম্যানকে চাপ প্রয়োগ করেন । খালিদ মাহমুদ এবং শেখরের খুটির জোরে আইয়ুব আলী চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে কাউকেই তোয়াক্কা করতেন না। সবার উপরেই ছড়ি ঘুরিয়েছেন। এখনো অপ্রতিরোধ্য আইয়ুব আলী আগের কায়দায়ই চলছেন। নিজের বাইরে কাউকে পাত্তাদেননা।
অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগ সরকার আমলে ঘুষ-দুর্নীতি করে আইয়ুব আলী কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। দুই ছেলেই থাকেন অষ্ট্রেলিয়ায়। তাদের কাছে আইয়ুব আলী দেদারছে টাকা পাচার করছেন। আইয়ুব আলী ২০২১ সালে লন্ডনে এবং ২০২৩ সালে নিওইয়র্কে বাড়ি ক্রয় করেছেন বলে খবর জানা গেছে। ছেলেদের একাউন্টে টাকা জমা করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। ঢাকার ২৯৫/এ/১ তালি অফিস রোড, রায়ের বাজার, জিগাতলা, হাজারিবাগ এলাকায় ২৩০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট স্ত্রীর নামে কিনেছেন। হাজারীবাগ এলাকায় আরও ১৭০০, ১৯০০ ও ২২০০ বর্গফুটের ৩টি ফ্ল্যাট আছে আইয়ুব আলীর। মোহাম্মাদপুর হাউজিং এ সি ব্লকে ৫০৩/এ ২২০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট তার শালার নামে কিনেছেন। ঢাকার আশুলিয়ায় ২০ কাঠা করে ৩টি প্লট আছে। পূর্বাচলে ৫ কাঠার ২টি প্লট আছে। পূর্বাঞ্চলে ৫ কাঠাপর ২টি প্লট আছে। আবতাব নগরে ৪.৫ কাঠা করে ৩টি প্লট আছে তার নিজের নামে।
বিআইডব্লিউটিএ-তে চরম ঘুষখোর, দুর্নীতিবাজ উপাদি পেয়েছেন অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী, যান্ত্রিক ও পিডি, বিশ্ব ব্যাংক প্রকল্প এর পরিচালক আইয়ুব আলী।
বিআইডব্লিউটিএ‘র সর্বস্তরের কর্মকর্তাদের দাবি আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। এদিকে দুদক এর একজন পরিচালক বলেছেন আইয়ুব আলীর বিরুদ্ধে একাধিক বার অভিযোগ জমা পড়ে। কিন্তু সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এপিএস সাইফুজ্জামান শেখরের প্রভাবে ওই সময়ে কোন আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তিনি আরো বলেন, বিআইডব্লিউটিএ'র সাবেক নৌ মন্ত্রী শাহজাহান খান, সাবেক নৌ প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এবং সাবেক তিন চেয়ারম্যান এর বিরুদ্ধে দুদকে মামলা হয়েছে। তাদের অনুসারীদেরকেও আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাচ্যুত হলেও তাদের দোষররা রয়ে গেছেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। তারা ঘাপটি মেরে আছেন প্রতিটি সেক্টরে। বিআইডব্লিউটিএ' থেকে গত ১৫ বছরে যেসব দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা শত শত কোটি টাকা মারিংকাটিং করে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন গড়েছেন সম্পদের পাহাড় তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী সৎ ও নিষ্ঠাবান কর্মকর্তা কর্মচারীবৃন্দ।অন্তবর্তী সরকারের উপদেষ্টা ব্রিগ্রেডিয়ার জেনারেল (অব) শাখাওয়াত হোসেনের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন ঠিকাদার মহল।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81