02/23/2025
নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী | Published: 2025-01-06 16:43:39
রাজবাড়ীতে হাজারো পেঁয়াজ চাষীরা লোকসানের দুশ্চিন্তায় দিন পার করছেন। ইতিমধ্যে আগাম রোপনকৃত পেঁয়াজ বাজারে উঠতে শুরু করেছে। চলতি বছরের অসময়ে বৃষ্টি হওয়ায় পেঁয়াজ রোপনে বিলম্ব হয়েছে প্রায় একমাস। এই কারণে কমেছে পেঁয়াজের উৎপাদন। খরচের তুলনায় প্রত্যাশিত দাম না পেলে বড় ধরনের লোকসান গুনতে হবে পেঁয়াজ চাষীদের।
পেঁয়াজ চাষীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, চলতি বছরে এক বিঘা (৩৩) শতাংশ জমিতে পেঁয়াজ রোপন করতে খরচ হয়েছে ৮০ হাজার থেকে ১ লাখ টাকা। পেঁয়াজ রোপন পিছিয়ে যাওয়াও বিঘাপ্রতি উৎপাদন কম হতে পারে ৮ থেকে ১০ মণ। এক দিকে উৎপাদন কম হওয়া ও বাজারে দাম কমে যাওয়ায় বিঘাপ্রতি লোকসান গুনতে হবে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। কৃষকদের দাবি, এই সময়ে সরকার যেন পেঁয়াজ আমদানি না করে।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলায় মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে সবেচেয়ে বেশি পেঁয়াজ আবাদ হয়েছে গোয়ালন্দ উপজেলায় ২ হাজার ২৩০ হেক্টর জমিতে। এর পরই রয়েছে কালুখালী উপজেলা ১ হাজার ৬৬৫ হেক্টর । আর সবচেয়ে কম আবাদ হয়েছে সদর উপজেলায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এছাড়া বালিয়াকান্দি উপজেলায় ১ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে ও পাংশা উপজেলায় ৪২৫ হেক্টর জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজের আবাদ হয়েছে।
গত শনিবার কালুখালী উপজেলার রতনদিয়া ইউনিয়নের মহেন্দ্রপুর মাঠে গিয়ে দেখা যায়, যতদূর চোখ যায় শুধু পেঁয়াজের ক্ষেত। কিছু কিছু জমিতে পেঁয়াজ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন চাষীরা। পুরুষ শ্রমিকরা মাটি থেকে পেঁয়াজ টেনে তুলছেন। আর নারী শ্রমিকরা সেই পেঁয়াজ থেকে আগাছা পরিষ্কার করছেন। জমিতে চট বিছিয়ে পেঁয়াজ রোদ্রে শুকানোর জন্য দেওয়া হয়েছে। উপরস্ত স্তর শুকিয়ে গেলেই নেওয়া হবে বাজারে।
‘ধার করে পেঁয়াজ রোপন করেছিলাম। পেঁয়াজ রোপনের পরেই বৃষ্টি হয়। এতে অনেক পেঁয়াজ পঁচে যায়। এখন ধারের টাকা পরিশোধ করতে হবে। আরও ১৫দিন পরে এই পেঁয়াজ তুলতে পারতাম। কিন্তু বাজারে পেঁয়াজের দাম যে হারে কমে যাচ্ছে এখন আমার লাভ তো দূরের কথা বিঘাপ্রতি ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা লোকসান হবে।' এমনটাই বলছিলেন রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মহেন্দ্রপুর গ্রামের পেঁয়াজ চাষী আব্দুর রব।
পেঁয়াজ চাষী আব্দুর রব বলেন, আমি এক বিঘা জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করেছিলাম। পেয়াজ আবাদ করতে আমার ১ লাখ ১০ হাজার টাকার কাছাকাছি খরচ হয়েছে। যে পেঁয়াজ উৎপাদন হয়েছে তাকে ৫০ থেকে ৫৫ মণ পেঁয়াজ হবে। বাজারে প্রতিমণ পেঁয়াজ এখন ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এতে আমার প্রায় ২৫ হাজার টাকা লোকসান হবে।
একই এলাকার চাষী মজিবর রহমান বলেন, এবছর চার বিঘা জমিতে মুড়িকাটা পেঁয়াজ রোপন করেছি। উৎপাদন খরচ গত বছরের তুলনায় দ্বিগুন হয়েছে। কিন্ত উৎপাদন গত বছরের তুলনায় অনেক কম হয়েছে। বর্তমান পেঁয়াজের দাম অনেক কমে গেছেএভাবে চলতে থাকলে লাভতো দূরের কথা আসলই উঠবে না।
স্বপন খান নামে আরেক চাষী বলেন, ‘কয়েকদিন আগেও বাজারে এক কেজি পেঁয়ারে দাম ছিল ১০০ টাকার উপরে। এক কেজি বীজ কিনতে হয়েছে আমাদের ২০০ থেকে ৩০০ টাকায়। অথচ এখন আমাদের ফসল ঘরে ওঠার সময় হয়েছে। আর এখন পেঁয়াজ আমদানি করে বাজারে পেঁয়াজের দাম কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষক বাঁচলো না মরলো এইটা কোন সরকারই দেখে না। সরকারের কাছে দাবি জানাই এখন যেন আর কোন পেঁয়াজ আমদানি না করা হয়।’
পেঁয়াজ কাটতে আসা রাবেয়া নামে এক নারী বলেন, ‘মৌসমের প্রথম পেঁযাজ কাটছেন তারা। গত বছর প্রতিমণ ৫০টাকা করে পেঁয়াজের আগাছা পরিষ্কার করেছেন তারা । কিন্তু এবছর পেঁয়াজের দাম কম হওয়ায় পেঁয়াজ কাটাবাবদ তাদেরকে দিচ্ছে ৪০ টাকা।’
মঙ্গলবার রাজবাড়ী শহরের বড় বাজারে গিয়ে দেখা যায় পাইকারী পর্যায়ে প্রতিমণ পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক ড. মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এবছর আগাম পেঁয়াজ রোপনের পরে বৃষ্টি হওয়ায় কিছু পেঁয়াজ বী পঁচে গিয়েছিল। এই কারণে যারা আগাম পেঁয়াজ উৎপাদন করেছিল তাদের উৎপাদন কিছুটা কম হচ্ছে। কিন্তু যারা পরে রোপন করেছিল তাদের উৎপাদনে ঘাটতি হবে না। বাজারে পেঁয়াজের দাম কিছুটা কমেছে। এই মূহুর্তে বাজারে যথেষ্ট পেঁয়াজ আছে। এখন পেঁয়াজ আমদানি করলে কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এই বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষকে জানিয়েছি। আজও আমাদের মিটিং আছে। আমি সেখানেও বিষটি উত্থাপন করবো।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81