02/26/2025
সামিউর রহমান | Published: 2025-02-25 22:46:33
সাম্প্রতিক সময়ে থাইল্যান্ডে বেড়েছে বাংলাদেশিদের ভ্রমণ। পর্যটনের পাশাপাশি চিকিৎসার জন্যও বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশি এখন দেশটিতে যাচ্ছেন। এ কারণে বাংলাদেশিদের জন্য সম্প্রতি ই-ভিসা চালু করে থাই দূতাবাস।
চালুর সময় বলা হয়েছিল, এখন থেকে মাত্র ১০ দিনেই থাইল্যান্ডের ভিসা পাবেন বাংলাদেশিরা। তবে এই ই-ভিসা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় এখন থাইল্যান্ডে যাওয়াই আটকে যাচ্ছে বাংলাদেশিদের।
আবেদনের পর ভিসা পাওয়া না পাওয়ার ক্ষেত্রে ইতিবাচক-নেতিবাচক বক্তব্য পাওয়া যাচ্ছে। কোনো কোনো আবেদনকারী বলছেন, অনলাইনে আবেদনের দুই থেকে তিন দিনের মাথায়ও কেউ কেউ ভিসা পেয়েছেন। আবার অনেক আবেদনকারীর অভিযোগ, পেমেন্ট জটিলতার কারণে তাদের আবেদন আটকে যাচ্ছে। যার কারণে তারা ভিসা পেতে ভোগান্তিতে পড়ছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, বাংলাদেশিরা যাতে ঝামেলামুক্তভাবে সহজে ভিসা পেতে পারেন, সেজন্য থাই দূতাবাস যে ই-ভিসা পদ্ধতি চালু করেছে, তাতে প্রতিদিনই ভিসা আবেদন আটকে যাচ্ছে হাজারো ভ্রমণপ্রত্যাশীর। তাদের অভিযোগ, অনলাইনে ভিসার আবেদন করার পর টাকা জমা দিতে পারছেন না অনেকেই।
জানা গেছে, গত ১৯ ডিসেম্বর থেকে বাংলাদেশের সরকারি পাসপোর্টধারীদের জন্য ই-ভিসা কার্যক্রম শুরু করে থাইল্যান্ড। পরে গত ২রা জানুয়ারি থেকে বাংলাদেশের সাধারণ পাসপোর্টধারীদের জন্যও ই-ভিসা কার্যক্রম চালু করে থাই দূতাবাস। সেই সময় দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিলো, ঘরে বসে মাত্র ছয় ধাপে অনলাইনেই আবেদন করে ১০ দিনের ভেতর থাইল্যান্ডের ভিসা পাবেন বাংলাদেশিরা। এছাড়া নতুন এই ব্যবস্থার মাধ্যমে আবেদনকারী ভিসা পেয়েছেন কি না, তা ইমেইলের মাধ্যমে জানা সম্ভব হবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, থাই ভিসা অনলাইনে আবেদনের প্রক্রিয়াটি দুটি ভাগে বিভক্ত। একটি অংশে লগইন করে সব ডকুমেন্ট আপলোড করতে হচ্ছে। যেখানে সময় লাগছে মাত্র ১০ মিনিট। এর পরের অংশ হলো পেমেন্ট, যেটির গেটওয়ে শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসি। মূল জটিলতা তৈরি হয়েছে ভিসার পেমেন্ট নিয়ে।
থাই কর্তৃপক্ষ সহজে ভিসা পাওয়ার আশা দেখিয়ে অনলাইনে কার্যক্রম শুরু করলেও ই-ভিসা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দিনে সর্বোচ্চ ৪০০ অনলাইন ভিসা আবেদনের কোটা নির্ধারণ করে দেয়। পাশাপাশি পেমেন্টের জন্য গেটওয়ে হিসেবে শ্রীলঙ্কার কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন পিএলসিকে নির্দিষ্ট করে দিয়ে সেখানে পেমেন্ট সম্পন্ন করার জন্য মাত্র তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এতে থাই ভিসার জন্য অনলাইন আবেদন ফরম পূরণ করে আবেদন করা গেলেও তা চূড়ান্ত হওয়ার আগেই পেমেন্ট অপশনে গিয়ে আটকে যেতে হচ্ছে।
জানা যায়, আগে বাংলাদেশিরা অনুমোদিত কেন্দ্রের মাধ্যমে পাসপোর্ট জমা দিয়ে থাই স্টিকার ভিসা পেতেন। দিনে গড়ে তখন ৮শর মতো ভিসা ইস্যু করা হতো বাংলাদেশিদের জন্য। কিন্তু অনলাইনে দিনে কেবল ৪শ ভিসা আবেদন জমা দেওয়ার সুযোগ রেখেছে থাই কর্তৃপক্ষ, যার বিপরীতে দিনে জমা পড়ছে ১৭-১৮ হাজার আবেদন।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দূতাবাসের পক্ষ থেকে ব্যাংকে অনলাইনে পেমেন্টের জন্য সকাল ৯টা থেকে তিন ঘণ্টা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। ফলে আবেদনকারীরা কম্পিউটারের মাউসে আঙুল রেখে সকাল ৯টা থেকেই বসে থাকেন। কিন্তু তিন ঘণ্টা পর দেখা যায় তার পেমেন্ট সম্পন্ন হতে ব্যর্থ হয়েছে।
থাইল্যান্ডের এক ভিসাপ্রত্যাশী বলেন, ‘অনলাইনে আবেদন সম্পন্ন করেও আমি পেমেন্ট করতে পারিনি। ১০ দিনে ভিসা পাব প্রত্যাশা করে থাইল্যান্ডের এয়ার টিকিট কিনে ফেলেছি, কিন্তু ভিসার খবর নেই। কবে নাগাদ এসব সমস্যার সমাধান হবে কিংবা আদৌ সমাধান হবে কি না, তাও বুঝতে পারছি না।’
অপর এক ভিসাপ্রত্যাশী বলেন, কি কারণে জানি না এই অদ্ভুত অসম ও উদ্ভট ভিসা পেমেন্ট সিস্টেম তৈরি করেছে থাই ভিসা কর্তৃপক্ষ। শুনেছি এই নিয়ম কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। প্রায় একমাস ধরে এই নজিরবিহীন নিয়মের মধ্যে চলছে। অথচ এই ব্যাপারে সঠিক সুরাহা করতে কোন পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছেনা। পেমেন্ট সিস্টেমের এই জটিলতার কারণে আমার ভিসাটা হলো না।
আরেক ভুক্তভোগী বলেন, আমার মনে হচ্ছে, থাই ই-ভিসা এবং পেমেন্টের পেছনে কোনো একটা সিন্ডিকেট কাজ করছে। আবেদন করার পর দেখি, সেদিনের ভিসা শেষ। ভিসা কীভাবে দেয় তারা, সেটাই আমার বোধগম্য নয়।
সম্প্রতি থাই ভিসা পেয়েছেন এমন একজন বলেন, ১০ই জানুয়ারি রেজিস্ট্রেশন করি, ১১ই জানুয়ারি ফাইল আপডেট করি। ১২ই জানুয়ারি পেমেন্ট দিতে পারিনি, পরে ১৩ই জানুয়ারি পেমেন্ট করতে পারি। আমার তথ্যগত কিছু ভুল হওয়ায় ভিসা সেন্টার থেকে ফোন করে তারা আবার তথ্য আপলোড করতে বলেন। পুনরায় তথ্য আপলোড করার পাঁচ দিনের মাথায় ভিসা পেয়েছি।
এদিকে থাই ভিসার পেমেন্ট নিয়ে পর্যটকদের এমন ভোগান্তি সম্পর্কে অবগত পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। থাইল্যান্ডের ভিসা প্রাপ্তিতে সৃষ্ট জটিলতার পরিপ্রেক্ষিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই বিষয়ে খোঁজ খবর নেয়া শুরু করেছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, ইতোমধ্যেই ভিসার বিষয়টি নিয়ে থাইল্যান্ড দূতাবাসের সঙ্গে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রাথমিকভাবে আলাপ হয়েছে। সেই আলাপে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তবে বিষয়টি নিয়ে এবার বৈঠকে বসতে চায় সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, থাইল্যান্ডের ভিসা প্রাপ্তিতে পর্যটকদের আগ্রহ বেড়েছে, ফলে অনলাইনে দিনে আবেদনও অনেক জমা পড়ছে। আর বিপুল আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের সক্ষমতা বৃদ্ধিসহ যাবতীয় সমস্যা নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে থাই দূতাবাসকে জানানো হয়েছে। সমস্যা নিরসনে কাজ চলমান রয়েছে।
থাইল্যান্ড দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, পর্যটকদের ভোগান্তির বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে তারা।
বাংলাদেশে থাইল্যান্ডের অনারারি কনসাল আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী জানান, বর্তমানে দিনে থাই কর্তৃপক্ষ ৪০০ ভিসা দিচ্ছে। আমরা থাই কর্তৃপক্ষকে দিনে অন্তত এক হাজার ভিসা ইস্যু করার অনুরোধ করেছি। তাদের যে পরিমাণ লোকবল আছে তাতে হয়ত এই মুহূর্তে আমাদের আবেদন রাখতে পারবে না। তবে একটা সময়ে হয়ত দিতেও পারে তারা।
পেমেন্ট সংক্রান্ত জটিলতার বিষয়টি আমলে নিয়ে এই সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে থাইল্যান্ডের সঙ্গে বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা আশা করছেন, বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনার মাধ্যমে ভিসা সমস্যার সমাধান সম্ভব হবে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81