08/16/2025
নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2025-08-15 21:34:25
রাষ্ট্রীয় বিধিনিষেধ, রাজনৈতিক ভয়-ভীতি উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৫০তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে ১৫ আগস্ট সকালে বঙ্গবন্ধুর স্মৃতিবিজড়িত ধানমন্ডির ৩২ নম্বর সড়কের ভাঙা বাড়িতে শ্রদ্ধা জানাতে উপস্থিত হন অনেকেই। তবে যারা সেখানে শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছেন তাদের অনেকেই হেনস্তার শিকার হয়েছেন। তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন নারীও রয়েছেন। তাদেরকে চড়-থাপ্পর ও মারধর করেছে ৩২ নম্বর বাড়ি ঘিরে রাখা বিএনপি’র নেতা-কর্মীরা।
পুলিশের উপস্থিতিতে এই অরাজক অবস্থা বিরাজ করছে ১৪ আগস্ট রাত থেকে। বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়ায় এসব লাইভ প্রচার করা হচ্ছে। তবে শ্রদ্ধা জানানো ঘিরে কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষকারী বাহিনী।
সরেজমিনে দেখা যায়, ৩২ নম্বর সড়কের বঙ্গবন্ধুর ভাঙা বাড়িটির দুই পাশেই ব্যারিকেড দিয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ। শুধু গণমাধ্যমকর্মীদের ভেতরে যাওয়ার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। সড়কের উভয় পাশে ছাত্রদলসহ বিভিন্ন সংগঠনের কয়েকজন নেতাকর্মীর উপস্থিতি দেখা গেছে।
এসময় শেখ মুজিবুর রহমানের ভাঙা বাড়িটির সামনে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে পাহারা দিতেও দেখা গেছে।
সকালে এক দম্পতিসহ চারজন ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছিলেন। এরমধ্যে সকাল সোয়া ৯টায় সড়কের পশ্চিম পাশে তিন সন্তানসহ শ্রদ্ধা জানাতে আসেন এক দম্পতি। তারা তখন স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের নেতাকর্মীদের রোষানলে পড়েন। বাকবিতণ্ডার একপর্যায়ে পুলিশ তাদের সেখান থেকে সরিয়ে দেন।
ওই দম্পতি পিরোজপুর থেকে এক মাস আগে ঢাকায় এসেছেন বলে জানা গেছে। ঢাকায় জুতার ব্যবসা করা ওয়ালিউল্লাহ বলেন, ‘শেখ হাসিনা দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন। তাই তারা শেখ মুজিবের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন।’
একই সময় ৩২ নম্বরের সড়কের পূর্ব পাশে পৃথক দুই ব্যক্তি শ্রদ্ধা জানাতে এসে হেনস্তার শিকার হন। এসময় কয়েকজন সেখানে গিয়ে তাদের কলার চেপে ধরেন এবং চড়-থাপ্পর মারেন। পরে পুলিশ তাদের ছাড়িয়ে নিয়ে রিকশায় করে পাঠিয়ে দেন।
সকাল ১০টার দিকে এক নারী শেরেবাংলা নগর থেকে ৩২ নম্বরে ফুল দিতে এলে তিনিও হেনস্তার মুখে পড়েন। হালিমা নামের ওই নারী বলেন, ‘শেখ মুজিবের পরিবারের সদস্যদের শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি। আমি আওয়ামী লীগ করি। এসময় পুলিশ তাকে রিকশায় করে পাঠিয়ে দেন।’
বেলা ১১টার দিকে আজিজুর রহমান নামের একজন রিকশাচালক রিকশা চালিয়ে হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে ৩২ নম্বরে আসেন। ফুলের তোড়ার ওপর কাগজে লেখা ছিল ’১৫ই আগস্ট জাতীয় শোক দিবস’। তাকে দেখার সঙ্গে সঙ্গে ৩২ নম্বরে জড়ো হওয়া বিএনপিকর্মীরা রীতিমতো ঝাঁপিয়ে পড়েন। একজন লাফ দিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে ফুলের তোড়াটি কেড়ে নেন। চলে মারধর, ভাঙচুর করা হয় তার রিকশাটিও। এসময় কান্নায় ভেঙে পড়েন ওই রিকশাচালক।
ওই রিকশাচালক পরে বলেন, ‘‘তিনি যাত্রাবাড়ী থেকে এসেছেন। চারশ টাকা দিয়ে ফুলের তোড়াটি কিনেছেন। আমার অনেক কষ্টের টাকা, আমি দুই বছর ঢাকা শহরে রিকশা চালাই। শুধু বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি জন্যি এহানে আইছি।”
গুলশান ছাত্রদলের কর্মী তানজীব বলেন, ‘ধানমন্ডিতে মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে এবং আওয়ামী লীগের লোকজন যেন কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে না পারে, সেজন্য পুলিশের পাশাপাশি আমরা এখানে আছি। দু-একজন আওয়ামী লীগের লোক এসেছিল, আমরা তাদের সরিয়ে দিয়েছি।’
তবে এই বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি। দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা জানিয়েছেন, সকাল থেকে কাউকে আটক করা হয়নি।
উল্লেখ্য যে, ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মৃত্যুবার্ষিকী। ১৯৭৫ সালের এই দিনে একদল বিপথগামী সেনাসদস্য ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কের এই বাড়িতেই বঙ্গবন্ধুকে নির্মমভাবে সপরিবার হত্যা করেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের গত প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে প্রতিবছর ১৫ আগস্ট বহু মানুষ ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে আসতেন বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে।
ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন ঘটে। শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে ভারতে চলে যান। এদিন ৩২ নম্বরের এই বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়। এরপর থেকেই মূলত ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে সব ধরনের জনসমাগমে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81