29220

08/16/2025

শুভ্রতায় মোড়ানো উৎসবের ঋতু শরৎ

নেহাল আহমেদ, কবি ও সাংবাদিক | Published: 2025-08-16 11:45:15

আজি কি তোমার মধুর মুরতি/ হেরিনু শারদ প্রভাতে/ হে মাত বঙ্গ, শ্যামল অঙ্গ/ ঝলিছে অমল শোভাতে/ পারে না বহিতে নদী জলধার/ মাঠে মাঠে ধান ধরে নাকো আর/ ডাকিছে দোয়েল গাহিছে কোয়েল/ তোমার কানন সভাতে/ মাঝখানে তুমি দাঁড়ায়ে জননী/ শরৎকালের প্রভাতে…

এভাবের মনের রঙে কবিগুরু রবি ঠাকুর ছবি এঁকেছেন প্রকৃতির কোনো এক উৎসব মুখর শরতের। বর্ষার বিষন্নতা পরিহার করে প্রকৃতির নরম গায়ে আকাশে উঁকি দেয় স্বচ্ছ রোদের দিবালোকে।

শরৎ এক অপূর্ব শোভা ধারণ করে আবির্ভূত হয় শান্ত স্নিগ্ধ কোমল রূপ নিয়ে, সাদা মেঘখন্ড ভেসে বেড়ায় নিবিড় ছন্দে। নদীর কূলঘেঁষে চরে চরে কাঁশের ফুল দোলে বাতাসের অনিন্দ্য এক দোলনায়। যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই, কাঁশফুল আর কাঁশফুল। শরতের সে রূপভান্ডার থেকে যেন রঙ ছিটকে পড়ে প্রকৃতির গায়ে।

পদ্মা, যমুনা, কালীগঙ্গা আর ধলেশ্বরী নদীর পাড়ে সারি সারি সাদা কাঁশবন ও কাঁশফুল। মৃদু বাতাস দোলা দিচ্ছে তাদের নরম পাপড়িতে। এই তো চিরচেনা শরৎ। ছোট ছেলেমেয়েরা দল বেঁধে নামে শিউলি ফুল কুড়োতে। আর পাল্লা দিয়ে চলে মালা গাঁথার প্রতিযোগিতা।

শরৎ বাংলার ঋতু পরিক্রমায় সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু। মেঘমুক্ত আকাশ থেকে কল্পকথার জ্বীন-পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। শরতের জ্যোৎস্নায় বাংলার মোহিত রূপ নিজ চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। আপনি কি তা খেয়াল করেছেন আজ ?

ভোরের বাতাসটা আজ একটু অন্য রকম। সকালের রোদটা একটু মিষ্টি। আকাশটা একটু বেশী শুভ্র। চারপাশটায় একটা পুজা পূজা ভাব। প্রিয়জনকে দেখার জন্য মনটা একটু বেশী উৎলা।

হ্যা, ঋতু পরিক্রমায় সবচেয়ে মোহনীয় ঋতু শরৎ ঋতু।শিমুল তুলোর মতো ভেসে চলে সাদা মেঘের খেয়া।চারদিকে সজীব গাছপালার ওপর বয়ে যায় শেফালি ফুলের গন্ধভরা ফূরফুরে মিষ্টি হাওয়া। শিউলি তলায় হালকা শিশিরে ভেজা দূর্বাঘাসের ওপর চাদরের মত বিছিয়ে থাকে সাদা আর জাফরন রং মেশানো রাশি রাশি শিউলি ফুল। কাশফুলের মনোরম দৃশ্য থেকে সত্যিই চোখ ফেরানো যায় না।

শরৎ বাংলাদেশের কোমল, স্নিগ্ধ এক ঋতু। শরৎ ঋতুর রয়েছে স্বতন্ত্র কিছু বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশের ছয়টি ঋতু ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন রূপের পসরা নিয়ে হাজির হয়। এক এক ঋতুতে ভিন্ন ভিন্ন ফুলে ও ফলে, ফসলে ও সৌন্দর্যে সেজে ওঠে বাংলাদেশ।

বাংলাদেশের মতো পৃথিবীর আর কোন দেশের প্রকৃতিতে ঋতুবৈচিত্র্যর এমন রূপ বোধ হয় নেই। বর্ষাকন্যা অশ্রুসজল চোখে বিদায় নেয় শ্রাবণে। ভাদ্রের চোখে সূর্য মিষ্টি আলোর স্পর্শ নিয়ে প্রকৃতির কানে কানে ঘোষণা করে শরতের আগমন বার্তা। ঝকঝকে নীল আকাশে শুভ্র মেঘ, ফুলের শোভা আর শস্যের শ্যামলতায় উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে শরৎ।

শরতের নান্দনিক সৌন্দর্যের সূর্যোদয়, নরম রোদের সকাল, সূর্যাস্তের রং মাখানো অকল্পনীয় অপরূপ রূপের ঘনঘটা, জোছনালোকিত রাতের স্বচ্ছ নীল আকাশ ও তার বুকের জ্বলজ্বলে নক্ষত্রের সমারোহ দেখে এবং প্রকৃতির সাজ সাজ রব দেখে সবাই মুগ্ধ হতে পারে।

শরতের সৌন্দর্য বাংলার প্রকৃতিকে করে রূপময়।আকাশের উজ্জ্বল নীলিমার প্রান্ত ছুঁয়ে মালার মত উড়ে যায় পাখির ঝাঁক। ভরা নদীর বুকে পাল তুলে পালবোঝাই নৌকা চলে যায়। ডিঙি নাও বইতে বইতে কোনো মাঝি হয়তোবা গেয়ে ওঠে ভাটিয়ালি গান। পুকুরপাড়ে আমগাছের ডালে মাছরাঙা ধ্যান করে। স্বচ্ছ জলে পুঁটি, চান্দা বা খলসে মাছের রূপালি শরীর ভেসে উঠলে সে ছোঁ মেরে তুলে নেবে তার লম্বা ঠোঁটে। নদীর চরে চখাচখি পানকৌড়ি, বালিহাঁস বা খঞ্জনা পাখির ডাক। কলসি কাঁথে মেঠো পথে হেঁটে চলে গাঁয়ের বধূ। ফসলের খেতে অমিত সম্ভাবনা কৃষকের চোখে স্বপ্নে ছাওয়া সবুজ ধানখেতটা একবার চেয়ে দেখে কৃষক। বিলের জলে নক্ষত্রের মতো ফুটে থাকে সাদা ও লাল শাপলা। সকালের হালকা কুয়াশায় সেই শাপলা এক স্বপ্নিল দৃশ্যের আভাস আনে। আলো চিকচিক বিলের জলে ফুটে ওঠে প্রকৃতির অপর লীলা।

নীল আকাশের সাদা মেঘের ভেলা আর নদীতীরে সাদা কাশফূল, ভোরে হালকা ভেজা শিউলিফুল সব মিলিয়ে শরৎ যেন শুভ্রতার ঋতু। শরৎকালে রাতের বেলায় দেখা যায় জ্যোৎস্নার রূপ অপরূপ। মেঘমুক্ত আকাশ থেকে কল্পকথার পরীরা ডানা মেলে নেমে আসে পৃথিবীতে। শরতের জ্যোৎস্নার মোহিত রূপ নিজ চোখে না দেখলে বোঝাই যায় না এর সৌন্দর্য।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81