29311

08/27/2025

বাগদী কন্য জ্যোৎস্না

নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী | Published: 2025-08-25 19:47:50

দেশে বসবাসরত ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীগুলোর মধ্যে বাগদি সম্প্রদায় অন্যতম। দেশের বিভিন্ন জেলায় এই সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করে। দেশে প্রায় দুই লাখ বাগদি বসবাস করেন বলে এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে। আগে এরা মৎস্যজীবী ছিলেন বলে অনেক গবেষণায় জানা যায়। ফলে তাদের মাছুয়া নামেও ডাকা হতো বলে উল্লেখ করেছেন কেউ কেউ।

তবে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, বাগদি সম্প্রদায় তাদের আদি পেশা থেকে সরে এসেছে এবং তারা বর্তমানে ভিন্ন ভিন্ন পেশার সঙ্গে যুক্ত। আর পেশা পরিবর্তনের ফলে তাদের সামাজিক, সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক দিকে এসেছে নানা পরিবর্তন।

সারা বাংলাদেশের মতো রাজবাড়ীতেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে কিছু বাগদী পরিবার। বাগদী সম্প্রদায় অনেকটা মাতৃতান্ত্রিক। এই সম্প্রদায়ের মহিলারা প্রচুর পরিমানে কাজ করতে পারে। সারাদিন এরা বাইরে কাজ করে অর্থ উপার্জন করে।

বর্তমানে বাগদী সম্প্রদায় অনেক স্থানেই প্রান্তিক অবস্থায় রয়েছে এবং তাদের জীবনযাত্রার তেমন কোনো উন্নতি ঘটেনি। পেশা পরিবর্তনের কারণে তাদের জীবনে কিছুটা গতিশীলতা এসেছে, তবে মূলধারার অন্যান্য সম্প্রদায়ের তুলনায় তারা এখনো পিছিয়ে রয়েছে।

সাতচল্লিশ ও একাত্তরের দেশভাগ এবং পরবর্তী সময়ে খাসজমিতে বসবাস করার কারণে তাদের ঘরবাড়ি পুড়িয়ে উচ্ছেদ করা হয়েছে।

বর্তমানে তারা মাছ ধরার পাশাপাশি ঝিনুক কুড়ানো, খড়ি ফাড়া, ভ্যান-রিকশা চালানো, সেলুনে কাজ, দিনমজুরি, ছাদ পেটানো, আটোরিকশা চালানো, হোটেলে কাজ, ছোট পরিসরে ব্যবসা ইত্যাদি কাজ করেন। এর মাধ্যমে তাদের মধ্যে চিন্তাধারায় যেমন পরিবর্তন এসেছে তেমনি গুরুত্ব বেড়েছে নারী-পুরুষ উভয়ের।

বাগদীরা প্রধানত কৃষি ও মৎস্য শিকার করে থাকে। তারা মাছ ধরা, কাঁকড়া ধরা ও অন্যান্য জলজ প্রাণী শিকারের সাথে যুক্ত। এছাড়া ইঁদুরের গর্ত থেকে ধান কুড়িয়েও তারা জীবন ধারণ করে।

বাগদী জনগোষ্ঠীর জীবনযাপন মূলত কৃষি ও মৎস্য পেশা নির্ভর। ঐতিহাসিকভাবে তারা প্রান্তিক ও নিম্ন আয়ের সম্প্রদায় হিসেবে পরিচিত, যারা মাছ, কাঁকড়া শিকার এবং ধান কুড়িয়ে জীবন ধারণ করে।

রাজবাড়ী জেলার বাগদী কন্যা জ্যোৎসার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, অনেক বাগদী চরম দারিদ্র্য ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে, যা তাদের ঐতিহ্যবাহী জীবনযাত্রাকে আরও কঠিন করে তুলেছে।

হাজরা নামে অপর এক বাগদী জানান, সরকার মৎস কার্ড, বিভিন্ন ভাতাসহ নানান সুযোগ দিলেও আমাদের জন্য কিছু করছে না। আমাদের দেখার কেউ নাই।সারাদিন পানির মধ্যে থেকে হাত দিয়ে মাছ ধরে দুই তিনশ টাকা যা আয় করি তাই দিয়ে কোন রকম খেয়ে না খেয়ে জীবন পার করি।

ঐতিহাসিকভাবে বাগদীরা সমাজের একটি অস্পৃশ্য বা নিম্নশ্রেণির অংশ হিসেবে পরিচিত। বর্তমানে অনেক বাগদী চরম দারিদ্র্য ও অস্তিত্ব সংকটে ভুগছে এবং জীবনযাপনের তাগিদে তারা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছে।

বর্তমানে তাদের মাঝে বাল্যবিয়ের প্রবণতা অনেক কমে এসেছে। পাশাপাশি ছেলেমেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের ব্যাপারে তাদের মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। আগে অনেক সময় না খেয়ে দিন পার করলেও এখন তিন বেলা খাবারের ব্যবস্থা হয়, পাশাপাশি নারীরা পুরুষের মতো বিভিন্ন কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। ফলে তাদের মাঝে সঞ্চয়ের ধারণা এসেছে। পুরুষের তুলনায় নারীরাও সিদ্ধান্ত গ্রহণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করছে।

তবে তাদের দাবি, তারা এখনও অনেক ধরনের বৈষম্যের শিকার। সরকারি সুযোগ-সুবিধা, রাজনৈতিক অংশগ্রহণ, সমঅধিকার ইত্যাদি ব্যাপারে এখনও মূলধারার জনগোষ্ঠীর মতো সুযোগ তারা পায় না। আমাদের সংবিধান সব সম্প্রদায় ও গোষ্ঠীর মানুষকে সমঅধিকার দিয়েছে। কাজেই বাগদি সম্প্রদায়ের মানুষরাও যাতে এসব অধিকার নির্বিঘ্নে ভোগ করতে পারেন, সরকারের উচিত সেদিকে দৃষ্টি দেয়া।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81