10/18/2025
বিশেষ প্রতিনিধি | Published: 2025-10-17 23:48:20
ঢাকার চৌধুরীপাড়া এলাকায় অবস্থিত মসজিদে নূর ও শেখ জয়নূরুদ্দীন (রহ.) দারুল কুরআন মাদ্রাসা এলাকাবাসীর ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের এক অটুট কেন্দ্রবিন্দু।
এই মাদ্রাসাটি দেশের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে সর্বত্র পরিচিত। ইসলামী শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা উপলব্ধি করে তৎকালীন সময়ে বিশিষ্ট দানবীর মরহুম জনু হোসেন ওরফে জনুরুদ্দীন (রহ:) বরকতময় কাজের জন্য ১৯৫৪ সালের দিকে তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন করতে নিজের প্রিয় জমি আল্লাহর রাস্তায় কুরবানী স্বরূপ ওয়াকফ করে দেন। ১৯৬৯ ইং সালে প্রতিষ্ঠিত হয় ঐতিহ্যবাহী “শেখ জনুরুদ্দীন (রহ:) দারুল কুরআন মাদরাসা।
পরবর্তীতে তাঁর যোগ্য উত্তরসূরি হিসেবে দায়িত্ব নেন পুত্র বোরহানউদ্দীন। আর সেই ধারাবাহিকতায় তত্ত্বাবধানের দায়িত্ব এসে পড়ে তাঁর সন্তান ইমাদুদ্দীন নোমানের কাছে যিনি আজ মসজিদ ও মাদরাসার মুতাওয়াল্লি ও প্রধান তত্ত্বাবধায়ক।
কালের পরিক্রমায় সেদিনের সেই নূর-ই মসজিদ ও মাদরাসা আজ ঢাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ দ্বীনি শিক্ষার আন্তর্জাতিক একটি শিক্ষা কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে। এখান থেকে শিক্ষা লাভ করে হাজার হাজার ছাত্র দেশ বিদেশে প্রতিষ্ঠিত হয়ে মর্যাদার সাথে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করার পাশাপাশি ইসলামের আলো বিতরণ করছে।
ধর্মীয় অনুরাগ, সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সমাজে প্রভাব; সব মিলিয়ে একসময় নোমানকে এলাকাবাসী দেখতেন এক সৎ, প্রজ্ঞাবান ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি হিসেবে। তাঁর পরিচালনায় মসজিদ ও মাদ্রাসা এগিয়ে যায়, নিয়ম-শৃঙ্খলা বজায় থাকে, আর্থিক ব্যবস্থাপনায় দেখা যায় শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতার ছাপ। কিন্তু— গল্পটা এখানেই শেষ নয়। সময়ের পরিক্রমায় ধীরে ধীরে উন্মোচিত হতে থাকে এক ভিন্ন চিত্র। এক অদৃশ্য শক্তির ছায়া, যা বদলে দেয় মসজিদে নূর ও শেখ জয়নূরুদ্দীন (রহ.) দারুল কুরআন মাদ্রাসার প্রকৃত রূপ।
শুরুতেই যে নামটি সামনে এসেছে, তিনি মো. রাসেল, এলাকায় পরিচিত গনি নামে। পড়াশোনায় খুব বেশি দূর না গেলেও, অঙ্ক ও হিসাবের জটিল সমীকরণে তাঁর দক্ষতা ছিল অসাধারণ। এই হিসাব-নিকাশের নিখুঁত দক্ষতাই তাঁকে পরিণত করে অদৃশ্য এক শক্তিবলয়ের আর্থিক মস্তিষ্কে। মাথায় টুপি, গায়ে পাঞ্জাবি — ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে মোড়ানো সেই চেহারার আড়ালেই তিনি পরিচালনা করেন নূর মাদ্রাসা ও মসজিদের সব অনৈতিক আর্থিক কর্মকাণ্ড। তহবিল ব্যবস্থাপনা, দান-অনুদানের হিসাব, এমনকি জমি ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেন— সবই তাঁর নিয়ন্ত্রণে। স্থানীয়রা তাঁকে ডাকে “মিন মিননা শয়তান” — অর্থাৎ, বাইরে থেকে নরম ও ধর্মভীরু, কিন্তু অন্তরে চতুর, হিসাবি ও প্রভাবশালী এক মানুষ।
অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে তিনি দীর্ঘদিনের কর্মরত এক প্রিন্সিপালকে সরিয়ে দিয়ে সেই মাদ্রাসার ফ্ল্যাটে নিজের পরিবার নিয়ে ওঠেন — যদিও সেই ফ্ল্যাটে তাঁর জন্মদাতা মায়ের স্থান হয়নি।
এই গনির বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, তিনি মসজিদ ও মাদ্রাসার অর্থ লুণ্ঠনের মূল কারিগর, এবং অদৃশ্য শক্তির হয়ে কাজ করেন নিঃশব্দে। যখনই কোন অনিয়ম বা আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে, তিনি কাগজপত্র ঘুরিয়ে, হিসাব মিলিয়ে এমনভাবে সব সামলে দেন— যেন কোনও প্রমাণই অবশিষ্ট না থাকে।
স্থানীয় এক সূত্রের ভাষায়, “গনি সেই মানুষ, যে নামাজে ইমামের পেছনে দাঁড়ায় আর পিছনের কক্ষে টাকার হিসাব মিলিয়ে দেয়।” এই হিসাবি বুদ্ধি, চাতুর্য আর অদৃশ্য শক্তির ছায়ায় গনি আজও রয়ে গেছেন— ধর্মীয় মুখোশের আড়ালে এক অপ্রতিরোধ্য খেলোয়াড়।
পরবর্তীতে আসে “মাঠের খেলোয়াড়”। স্থানীয়ভাবে “মাসলম্যান” নামে পরিচিত মো. জসিম, যিনি গনির বোনের স্বামী। জসিমের নেই কোনো শিক্ষা, নেই কোন সামাজিক শিষ্টাচার বা মানবিক মূল্যবোধ। কার সঙ্গে কীভাবে কথা বলতে হয়— সেটাও যেন তাঁর অভিধানে নেই। তবুও তাঁর একটি বিশেষ “গুণ” আছে— মারামারি ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের দক্ষতা। আর এই এক গুণকেই পুঁজি করে তিনি হয়ে উঠেছেন অদৃশ্য প্রভাবশালী চক্রের অন্যতম হাতিয়ার— “মাসলম্যান মো. জসিম।”
আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত এই জসিম, অদৃশ্য শক্তির নির্দেশে যে কারও ওপর হামলা, ভয়ভীতি বা দমনমূলক কার্যক্রম চালাতে দ্বিধা করেন না। অভিযোগ রয়েছে যে, তিনি বহুবার অন্যের ওপর অন্যায় ও জুলুম চালিয়েও কখনো থানায় হাজির হননি, আদালতে জবাবদিহি করতে হয়নি, এমনকি একদিনের জন্যও জেল খাটেননি।
স্থানীয়দের মতে, এই “অস্পৃশ্যতা” তাঁকে দিনে দিনে আরও উদ্ধত ও প্রভাবশালী করে তুলেছে। জমি দখলের উদ্দেশ্যে তিনি বিএনপির এক নেতার বিরুদ্ধে প্রায় ১৮টি মামলা করিয়েছেন বলেও জানা গেছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো, এই জসিমের পেছনে রয়েছে এক শক্তিশালী ও অদৃশ্য হাত, যার ছায়া-আশ্রয়েই আজও নির্বিঘ্নে ঘুরে বেড়ান—আইনের নাগালের বাইরে, ক্ষমতার বর্মে সুরক্ষিত এই “মাসলম্যান জসিম।”
আলমগীর ও তাঁর ছেলে আলাউদ্দিন স্থানীয়ভাবে পরিচিত এক জুটি, যাদের নাম উচ্চারিত হওয়া মানেই বোঝায় হামলা, সালিশ বা মারামারির ঘটনা। জসিমের মতো তারাও সেই অদৃশ্য নেটওয়ার্কের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য।
স্থানীয়দের ভাষায়, “যেখানেই বিশৃঙ্খলা বা সালিশি হয়, সেখানে আলমগীর–আলাউদ্দিনের উপস্থিতি প্রায় নিশ্চিত।”
তারা সবসময় এমনভাবে অবস্থান নেয়, যাতে প্রতিটি ঘটনার “মাঠপর্যায়ের নিয়ন্ত্রণ” তাদের হাতেই থাকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, ২০২২ সালে তার উপর পরিচালিত এক হামলায় জসিমের পাশাপাশি আলমগীর ও আলাউদ্দিন সরাসরি জড়িত ছিলেন। একইভাবে ২০২৫ সালের সাম্প্রতিক হামলার ক্ষেত্রেও তাদের উপস্থিতি ও সম্পৃক্ততার অভিযোগ উঠেছে।
একসময় তাঁরা আওয়ামী লীগের স্থানীয় বাহিনী হিসেবে পরিচিত ছিলেন। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতার বাইরে চলে যাওয়ার পরও আলমগীর এখনও নিয়মিত অংশ নিচ্ছেন আওয়ামী লীগ দলের মিছিলে।
স্থানীয়দের মতে, তারা এমন এক “অদৃশ্য শক্তির আশ্রয়ে” রয়েছেন, যার কারণে কোনো অপকর্মের বিচার বা শাস্তি তাদের ছুঁতে পারে না। এই সুরক্ষা বলয়ই আজ তাদের আরও বেপরোয়া করে তুলেছে— যেন প্রশাসনের হাত তাদের পর্যন্ত পৌঁছায় না, আর এই প্রভাবই পরিণত হয়েছে তাদের প্রকৃত নিরাপত্তায়।
অন্য দিক সামলানোর দায়িত্বে আছেন আনোয়ার, স্থানীয়ভাবে যিনি পরিচিত “আনু” নামে। তিনি অদৃশ্য সেই প্রভাবশালী ব্যক্তির বোনের স্বামী। তাঁর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেন সোলায়মান, যিনি এলাকায় “হালু” নামে পরিচিত। এই দু’জনই নোমান বলয়ের “ম্যানেজমেন্ট টিমের মূল মস্তিষ্ক।”
স্থানীয় সূত্রের দাবি, পুলিশ, প্রশাসন, আদালত ও রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষায় তারা দু’জনই অত্যন্ত দক্ষ ও চতুর। যে কোন অভিযোগ, মামলা বা আইনি জটিলতা এই জুটি এমনভাবে “সমাধান” করে দেন যে, বিষয়গুলো কখনো প্রকাশ্য আলোচনায় আসে না।
একজন স্থানীয় বাসিন্দার ভাষায়, “আনু আর হালু থাকলে থানায় মামলা যায় না, আদালতে তারিখও আসে না — সবকিছু আগেই মিটে যায়।”
অভিযোগ রয়েছে, অদৃশ্য ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে যত প্রকার অভিযোগ আসে, সেগুলোর প্রায় সবই আনোয়ার ও সোলায়মানের “ম্যানেজমেন্টের” মধ্যেই থেমে যায়। তারা শুধু আদালতের নথিপত্র নয় সাক্ষী ও তদন্ত প্রক্রিয়াতেও প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। তাদের হাতেই থেমে যায় ন্যায়বিচারের পথ। আর এই কারণেই অদৃশ্য সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে ওঠা অসংখ্য অভিযোগ বছরের পর বছর কাগজে-কলমে থেকেও বাস্তবে বিচার পায় না।
এই বলয়ের আরেক গুরুত্বপূর্ণ দুই সদস্য— মনির ও জসিম। স্থানীয়ভাবে পরিচিত এই জুটি নোমানের প্রভাববলয়ে “গুজব ও কৌশলের ওস্তাদ” হিসেবে ব্যাপকভাবে আলোচিত। মনির পরিচিত গনির ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে, আর জসিমের পরিচয় চলে “ফিরোজের ভাই” নামে।
ফিরোজ তুলনামূলকভাবে ভালো স্বভাবের হলেও, অদৃশ্য সেই শক্তি জসিমের কথাকেই “শেষ কথা” হিসেবে মূল্য দেয়। ফলে প্রশাসনিক পর্যায়েও অনেক সময় তাদের মতই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়ে যায়। তাদের আসল দক্ষতা হলো — মিথ্যাকে এমনভাবে বলা, যেন তা সত্যের চেয়েও বেশি বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়।
যখন গনি কোনো আর্থিক বা প্রশাসনিক জটিলতায় আটকে যান, মনির ও জসিম তখন এগিয়ে আসেন “সহায়ক দল” হিসেবে। তাদের কাজ— থানায় গিয়ে মিথ্যা সাক্ষ্য দেওয়া, আদালতে ভুয়া জবানবন্দি তৈরি করা, এবং ঘটনাকে এমনভাবে ঘুরিয়ে দেওয়া যাতে অপরাধীর অবস্থান নিরাপদ থাকে।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই দুইজন প্রায়শই এলাকায় মানুষকে হামলার হুমকি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মিথ্যা মামলার আতঙ্কে রাখে। তাদের নাম শুনলেই অনেকেই নীরব হয়ে যান। কারণ সবাই জানে, “মনির ও জসিমের নাম যেখানেই আসে, সেখানেই সত্য ধীরে ধীরে হারিয়ে যায়।”
অদৃশ্য সেই শক্তির বলয় কেবল গনি, আনু–হালু, মনির–জসিম কিংবা আলমগীর–আলাউদ্দিনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়। এর বাইরেও রয়েছে এক অজানা স্তর — যেখানে অসংখ্য মানুষ নীরবে যুক্ত। কেউ আদালত বা কোর্ট–কাচারিতে, কেউ ব্যবসা-বাণিজ্যের ভেতরে, কেউ বা রাজনীতি ও প্রশাসনের অন্দরমহলে সক্রিয়। প্রত্যেকে নিজ নিজ সেক্টর বা অবস্থান থেকে নিয়ন্ত্রণ করে একেকটি অংশ, যার ফলে পুরো চৌধুরীপাড়া এলাকা আজ কার্যত এক অদৃশ্য শাসনের আওতায়। এই বলয়ের মূলনীতি একটাই — “যে কথা বলবে, প্রতিবাদ করবে; তাকেই চুপ করিয়ে দাও।”
স্থানীয় সূত্রের ভাষায়, “ওই এলাকায় কেউ যদি অদৃশ্য সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধে দাঁড়ায়, তার জীবন ধ্বংস হয়ে যায়। আদালত থেকে থানা, কোথাও ন্যায়বিচার মেলে না।”
এই প্রভাব এতটাই বিস্তৃত যে, প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক দুই ক্ষেত্রেই অনেকে প্রকাশ্যে কিছু বলার সাহস পান না। কারণ সবাই জানে, একটি অদৃশ্য হাত আছে, যে চাইলে কাউকে উঁচুতে তুলতে পারে, আবার মুহূর্তেই সবকিছু শেষ করে দিতে পারে।
উপরের যেসব নাম একে একে উঠে এসেছে— তাদের কেউই নিজেরা এত শক্তিশালী নন যে, তারা অপরাধ করেও নির্বিঘ্নে পার পেয়ে যাবেন। তাদের ক্ষমতা, সাহস ও প্রভাব— সবকিছুর উৎস এক জায়গায় কেন্দ্রীভূত। আর সেই কেন্দ্রবিন্দুর নাম— “নোমান।”
স্থানীয়দের ভাষায়, নোমান দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই সম্পর্ক ক্রমেই স্পষ্ট হয়ে ওঠে। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তিনি এমন এক অবস্থান তৈরি করেন, যেখানে তাঁর বিরুদ্ধে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। এক রাতের নোটিশে শেখ জয়নূরুদ্দীন (রহ.) দারুল কুরআন মাদ্রাসার দীর্ঘদিনের প্রিন্সিপালকে বহিষ্কার করাও তার জন্য অস্বাভাবিক কিছু নয়। মাদ্রাসার শিক্ষক না হলেও শিক্ষার্থীদের ওপর শারীরিক নির্যাতন করা তার কাছে ন্যায়সংগত।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা জানি, আমরা দেখি—কিন্তু কিছু বলতে পারি না। মসজিদ-মাদ্রাসার কারণে মানুষ এখনো তাকে শ্রদ্ধা করে, কিন্তু বাস্তবতা অনেক ভয়ঙ্কর।”
তিনি আরও বলেন, “আল্লাহ বলেছেন, অন্যায় দেখলে বাধা দাও, না পারলে মুখে বলো, মুখে না পারলে অন্তরে ঘৃণা করো। আমরা এখন সেই তৃতীয় অবস্থায়—শুধু চুপ করে আছি।”
এক সময় তার বিরুদ্ধে মসজিদ–মাদরাসার অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ ওঠে। তবে অভিযোগ গোপন রাখতে তিনি পুলিশ, প্রশাসন এবং মন্ত্রী—সব স্তরে প্রভাব খাটান আর খরচ করেন পঞ্চাশ লক্ষ টাকারও বেশি। সরকারের এমপি ও মন্ত্রীদের নিয়মিত দাওয়াত দিয়ে নূর মাদ্রাসা ও মসজিদে তাদের আতিথেয়তা দিতেন এবং সেই সূত্রে নিজের ক্ষমতার বলয় আরও শক্তিশালী করতেন।
স্থানীয় একাধিক এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নূর মসজিদের মাইকে বিদ্বেষ ছড়িয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সাথে নিয়ে নিরীহ শিক্ষার্থীদের উপর হামলা চালিয়েছিলেন এই ইমামুদ্দিন নোমান। সেসময় বিএনপির অনেক নেতাকর্মীর উপর হামলা চালানোরও অভিযোগ রয়েছে নোমানের বিরুদ্ধে।
২৪এর জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পরও যখন আওয়ামী রাজনীতির অনেক প্রভাবশালী ব্যক্তি আইনের মুখোমুখি হয়েছেন, অথচ নোমানের নামে একটি মামলাও হয়নি। বরং তিনি আগের চেয়েও নির্ভয়ে নিজের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন।
স্থানীয় সূত্র জানায়, এই অবস্থান রক্ষা করতে তিনি ১০ থেকে ১২ কোটি টাকা বিলিয়েছেন। কয়েক দফায় বড় বড় আপ্যায়নের আয়োজন করেছেন, যেখানে প্রতিবার খরচ হয়েছে ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা। এমনকি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তার বাড়ির ছাদ থেকে গুলি চালানোর অভিযোগ উঠলেও কেউ সাহস করে মামলা করতে পারেনি। এমনকি তার সঙ্গে যুক্ত থাকা সকল আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরাও এলাকায় স্বাভাবিক জীবন যাপন করছেন।
একাধিক বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, বর্তমানে রামপুরা থানা যুবদলের আহবায়ক কামাল আহমেদ দুলুকে ম্যানেজ করে এলাকায় নিজের নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছেন নোমান। সূত্র মতে, এলাকা এবং নূর মসজিদ ও মাদ্রাসায় নিজের অবস্থান ধরে রাখতে উক্ত যুবদল নেতাকে ব্যবহার করে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম এ কাইউমের ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছেন নোমান। এই লক্ষ্যে পূর্ব হাজীপাড়ার ইকরা মসজিদ সংলগ্ন বালুর মাঠে ক্রিকেট টুর্নামেন্টের আয়োজন, বিএনপির নেতাদের সাথে মাঠে ক্রিকেট খেলা এবং নেতাদের সাথে ফটোসেশন করেন নোমান। পরবর্তীতে নিজের বলয়ে থাকা লোকদের মাধ্যমে এলাকাবাসীর মাঝে সেসব ছবি ছড়িয়ে আতংক ছড়াচ্ছেন ইমামুদ্দিন নোমান।
এদিকে, স্থানীয় যুবদলের অনেক নেতাদের সাথে নোমানের এই ঘনিষ্ঠতাকে স্বাভাবিকভাবে নিতে পারছেন না বিএনপি ও এর বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা। তাদের অভিযোগ হচ্ছে, বিগত ১৬ বছর এই গোষ্ঠীর হাতে বিএনপির মাঠ পর্যায়ের বহু নেতাকর্মী নির্যাতিত হয়েছেন, এলাকা ছাড়া হয়েছেন। আর এখন এদেরকেই আশ্রয় প্রশ্রয় দেওয়া হচ্ছে আর্থিক সুবিধার বিনিময়ে।
এর জেরেই সম্প্রতি নূর মসজিদে এক অনুষ্ঠানে এসে বিপাকে পড়েন আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী এম এ কাইউম। দলীয় সূত্র মতে, সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের ঘোর আপত্তির মুখে এম এ কাইউম নোমানের সাথে ছবি না তুলেই ঘটনাস্থল ত্যাগে বাধ্য হন।
বর্তমানে মূলত যুবদল নেতা কামাল আহমেদ দুলুর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে নোমানের নেতৃত্বে এই পুরো চক্র হাজীপাড়া ও চৌধুরীপাড়া এলাকায় ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে আছে। তাঁর নাম, প্রভাব ও সম্পর্কের বলয় ব্যবহার করে তারা এমন এক অবস্থানে পৌঁছেছে, যেখানে অন্যায় যেন আর অন্যায় নয়, অপরাধ করলেও যেন কোনো শাস্তি নেই। তাঁর ছায়াতেই তারা শিখেছে— কীভাবে আইনকে পাশ কাটাতে হয়, কীভাবে ভয় সৃষ্টি করতে হয় আর কীভাবে সত্যকে ঢেকে রাখতে হয়।
নোমানের প্রভাবে আজ একটি পুরো অঞ্চল, একটি সমাজ, একটি প্রজন্ম— নীরব হয়ে গেছে। কিন্তু প্রশ্ন রয়ে গেছে— এই অপরাধের শেষ কবে হবে? এই অদৃশ্য সিন্ডিকেটের অবসান কি কেউ ঘটাতে পারবে? বাংলাদেশে কি আজও সত্যিকারের তদন্ত ও ন্যায়বিচার, অদৃশ্য ক্ষমতার দেয়াল ভেদ করে সামনে আসতে পারবে?
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81