29899

10/26/2025

বিএনপি থেকে ‘গ্রিন সিগন্যাল’ পেলেন যারা

নিজস্ব প্রতিবেদক | Published: 2025-10-26 12:02:03

আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র নির্বাচনী প্রচারণা আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু না হলেও, দলের অভ্যন্তরে চলছে এক নিবিড় কর্মযজ্ঞ, যার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। লন্ডন থেকে তিনি সরাসরি তত্ত্বাবধান করছেন সম্ভাব্য প্রার্থীদের মনোনয়ন প্রক্রিয়া।

তারেক রহমানের একটি ফোন কলই নির্ধারণ করে দিচ্ছে কারা হতে যাচ্ছেন বিএনপির কাঙ্ক্ষিত প্রার্থী। এই ফোন কলের মধ্য দিয়েই স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে, কে পাচ্ছেন 'গ্রিন সিগন্যাল' আর কে ছিটকে যাচ্ছেন নির্বাচনী দৌড় থেকে। দলের অভ্যন্তরীণ সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বিএনপি বর্তমানে মনোনয়ন যাচাই-বাছাইয়ের চূড়ান্ত ধাপে অবস্থান করছে।

দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান নিজে প্রতিটি আসনে প্রার্থীর জনপ্রিয়তা, গ্রহণযোগ্যতা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতা নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। শুধু পর্যবেক্ষণ নয়, তিনি ব্যক্তিগতভাবে প্রতিটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে একাধিকবার কথা বলেছেন। এবার তিনি চূড়ান্ত প্রার্থীদের ফোন করে নির্বাচনী প্রচারণায় পূর্ণোদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন, যা এক প্রকার নিশ্চিত করছে তাদের মনোনয়ন।

দলীয় একাধিক সূত্র বলছে, এবারের মনোনয়ন প্রক্রিয়া অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভিন্নভাবে পরিচালিত হচ্ছে। প্রার্থী নির্বাচনের ক্ষেত্রে তারেক রহমানের সরাসরি সম্পৃক্ততা নজিরবিহীন। তিনি কেবল নাম অনুমোদন দিচ্ছেন না, বরং প্রতিটি প্রার্থীর সাংগঠনিক কাজ, মাঠে উপস্থিতি এবং সাধারণ জনগণের প্রতিক্রিয়া নিজস্ব নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যাচাই করছেন। এমনকি অনেক ক্ষেত্রেই স্থানীয় নেতাদের পাশ কাটিয়ে সরাসরি তৃণমূল নেতাদের সঙ্গেও কথা বলেছেন তিনি, যা প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা যোগ করেছে।


বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগের মতো এবার শুধু সিনিয়রিটি বা কেন্দ্রীয় সম্পর্ক নয়, মাঠের বাস্তবতা ও জনগণের পছন্দই সর্বাধিক গুরুত্ব পাচ্ছে। তারেক রহমানের কাছে এখন প্রতিটি আসনের পুঙ্খানুপুঙ্খ রিপোর্ট রয়েছে। যাদের সম্পর্কে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া এসেছে এবং যারা জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হয়েছেন, তারাই এই কাঙ্ক্ষিত ফোন কল পাচ্ছেন।’ এই নতুন পদ্ধতি দলের সাংগঠনিক কাঠামোতে এক নতুন গতিশীলতা আনবে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

প্রার্থী চূড়ান্ত করার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এই মাসের মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে দুই শতাধিক আসনে একক প্রার্থীকে গ্রিন সিগন্যাল দেওয়া হবে। আমরা প্রক্রিয়ার একদম শেষ পর্যায়ে আছি। শিগগিরই সবাইকে জানানো হবে যেন যে যার এলাকায় নির্বাচনী কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।’

ইতোমধ্যেই রাজধানী ঢাকার বেশ কয়েকটি আসনের সম্ভাব্য প্রার্থীরা তারেক রহমানের ফোন পেয়েছেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। তাদের কেউ কেউ প্রচারণার প্রস্তুতিও শুরু করে দিয়েছেন। দলীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে , ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ আসনগুলোতে তরুণ, পেশাজীবী এবং রাজনৈতিকভাবে পরিচিত মুখদের অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এটি দলের নতুন প্রজন্মকে সামনে আনার একটি কৌশল হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে, যা তরুণ ভোটারদের আকৃষ্ট করতে সহায়ক হতে পারে।

এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ঢাকা-৩ আসনে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ঢাকা-৪ আসনে তানভীর আহমেদ রবিন, ঢাকা-৬ আসনে ইশরাক হোসেন, ঢাকা-৮ আসনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী মির্জা আব্বাস, ঢাকা-১০ ব্যারিস্টার নাছির উদ্দিন আহমেদ অসীম, ঢাকা-১২ হাবিব উন খান নবী সোহেল, ঢাকা-১৩ আসনে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম)-এর চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, ঢাকা-১৫ আসনে মামুন হাসান এবং ঢাকা-১৬ আসনে আমিনুল হক মনোনয়নের জন্য গ্রিন সিগন্যাল পেয়েছেন বলে জানা গেছে। এই তালিকা ঢাকার রাজনীতিতে বিএনপির নতুন মেরুকরণের ইঙ্গিত বহন করছে।

তবে এবার ঢাকা থেকে সবচেয়ে আলোচিত নাম ‘মায়ের ডাক’ আন্দোলনের সমন্বয়কারী সানজিদা ইসলাম তুলি। তিনি ইতোমধ্যে ঢাকা-১৪ আসনে নির্বাচনের গ্রিন সিগনাল হিসেবে তারেক রহমানের ফোনকল পেয়েছেন। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুম হওয়া বিএনপি নেতা সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন তুলিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে নির্দেশনা দিয়েছেন।

এছাড়া ঢাকা-১৭ আসনটি বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি (বিজেপি)-এর সভাপতি ব্যারিস্টার আন্দালিব রহমান পার্থকে ছাড় দেওয়া হয়েছে বলে একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র নিশ্চিত করেছে। এই আসন বণ্টন জোটের রাজনীতিতে বিএনপির নমনীয়তা এবং বিচক্ষণতার ইঙ্গিত বহন করে বলে মনে করছেন রাজনীতি সংশ্লিষ্টরা।

শুধু ঢাকায় নয়, সারা দেশেই ধীরে ধীরে চূড়ান্ত প্রার্থী তালিকা প্রস্তুত হচ্ছে। বিএনপির হাইকমান্ডের ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো জানিয়েছে, অন্তত ৬০টি আসনে দল ইতোমধ্যেই নির্ভার, অর্থাৎ যেখানে প্রার্থী নিয়ে কোনো মতভেদ বা অনিশ্চয়তা নেই। এসব আসনে দলের শীর্ষস্থানীয় ও পরীক্ষিত নেতাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে। এই আসনগুলোকে ‘নিরাপদ আসন’ হিসেবে বিবেচনা করছে দল, যেখানে প্রার্থীরা নিজেদের শক্তি প্রমাণে সক্ষম।

এই তালিকায় আছেন দলের শীর্ষস্থানীয় নেতারা। তারা হলেন- ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর (ঠাকুরগাঁও-১), ড. আব্দুল মঈন খান (নরসিংদী-২), ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ (ভোলা-৩), বরকতউল্লাহ বুলু (নোয়াখালী-৩), মো. শাহজাহান (নোয়াখালী-৪), শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি (লক্ষ্মীপুর-৩), মিয়া নুরুউদ্দিন অপু (শরীয়তপুর-৩), আসাদুল হাবিব দুলু (লালমনিরহাট-৩), অনিন্দ্য ইসলাম অমিত (যশোর-৩), রশিদুজ্জামান মিল্লাত (জামালপুর-১), ব্যারিস্টার কায়সার কামাল (নেত্রকোনা-১), মাহমুদ হাসান খান (চুয়াডাঙ্গা-২), ফজলুল হক মিলন (গাজীপুর-৫), আমিরুল ইসলাম খান আলীম (সিরাজগঞ্জ-৫), লুৎফুজ্জামান বাবর (নেত্রকোনা-৪), ব্যারিস্টার মুহম্মদ নওশাদ জমির (পঞ্চগড়-১), সাইফুল ইসলাম ফিরোজ (ঝিনাইদহ-৪)।

আগামী মাসের মধ্যে দেশের সবগুলো আসনে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হবে বলে বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে জানা গেছে।


Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman

Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81