12/31/2025
শাহীন আবদুল বারী | Published: 2025-12-31 15:15:47
যাদের অধিকার আদায়ের লড়াইয়ে খালেদা জিয়া গ্রেপ্তার হয়েছেন, জেল খেটেছেন; সেই অগণিত মানুষের চোখের জল, শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় বিদায় নিচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জানাজা পূর্ণ ধর্মীয় মর্যাদায় সম্পন্ন হয়েছে। এতে স্মরণকালের রেকর্ডসংখ্যক মুসল্লি অংশগ্রহণ করেন।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) বেলা ৩টায় বেগম জিয়ার জানাজায় ইমামতি করেন বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব মুফতি আবদুল মালেক।
জানাজা অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। এর আগে পরিবারের তরফে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান প্রয়াতের জন্য সবার কাছে দোয়া চান।
তিনি বলেন, “আমি মরহুমা বেগম খালেদা জিয়ার বড় সন্তান তারেক রহমান। আমি আজকে এখানে উপস্থিত সকল ভাইয়েরা এবং বোনেরা-যারা উপস্থিত আছেন, মরহুমা বেগম খালেদা জিয়া জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় যদি আপনাদের কারো কাছ থেকে কোনো ঋণ নিয়ে থাকেন, দয়া করে আমার সাথে যোগাযোগ করবেন। আমি সেটি পরিশোধের ব্যবস্থা করবো ইনশাআল্লাহ।
তিনি আরও বলেন, “একই সাথে উনি জীবিত থাকাকালীন অবস্থায় উনার কোনো ব্যবহারে, উনার কোনো কথায় যদি কেউ আঘাত পেয়ে থাকেন, তাহলে মরহুমার পক্ষ থেকে আমি আপনাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থী। দোয়া করবেন। আল্লাহ তাআলা যাতে উনাকে বেহেশত দান করেন।”
বেগম জিয়ার জানাজায় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের ডান পাশে ছিলেন প্রধান বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, তারপরে জামায়াতে ইসলামীর আমির শফিকুর রহমান এবং সরকারপ্রধানের বামপাশে খালেদা জিয়ার ছেলে তারেক রহমান এবং এরপরে দাঁড়ান নির্বাচন বিশেষজ্ঞ বদিউল আলম মজুমদার।
প্রধান উপদেষ্টার পাশাপাশি তার সরকারের উপদেষ্টা আসিফ নজরুল, আদিলুর রহমান, ফাওজুল কবির খান, আ ফ ম খালিদ হোসেন, আলী ইমাম মজুমদার, সি আর আবরার, এম সাখাওয়াত হোসেন। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমকেও জানাজায় দেখা গেছে।
জানাজায় শরিক হোন সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল মোহাম্মদ নাজমুল হাসান ও বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল হাসান মাহমুদ খাঁন।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ বিএনপির সর্বস্তরের নেতারকর্মীরা জানাজায় শরিক হোন।
রাজনীতিকদের মধ্যে জামায়াত ইসলামীর মিয়া গোলাম পরওয়ার, শামীম সাঈদী, গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি, এনসিপির নাহিদ ইসলাম ও হাসনাত আবদুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের মামুনুল হক উপস্থিত ছিলেন, লেবার পার্টির চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান ইরানকে দেখা গেছে। ডাকসু ভিপি সাদিক কায়েম, আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের আহমাদুল্লাহও বিএনপি নেত্রীর জানাজায় অংশ নেন।
বাংলাদেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানাতে এসেছেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, পাকিস্তানের জাতীয় সংসদের স্পিকার সরদার আয়াজ সাবিক, ভুটানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডি এন ধুঙ্গেল, মালদ্বীপের রাষ্ট্রপতির উচ্চ শিক্ষা, শ্রম ও দক্ষতা উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী আলি হায়দার আহমেদ, নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বালা নন্দা শর্মা, শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভিজিতা হেরাথ।
চীন, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ ঢাকায় নিযুক্ত বিভিন্ন মিশনের প্রধানরাও তাদের দেশের পক্ষে খালেদা জিয়াকে শ্রদ্ধা জানাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে শেষ যাত্রায় অংশ নিয়েছেন।
এদিন দুপুর ২টায় জানাজা শুরুর কথা থাকলেও ভোর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে লাখো নেতাকর্মী ও সাধারণ মানুষ মানিক মিয়া এভিনিউ ও আশপাশের এলাকায় অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে মানুষের বিস্তৃতি আশপাশের এলাকা বিজয় সরণি, খামারবাড়ি মোড়, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, পান্থপথ, শেরে বাংলা নগর, কলেজগেট, আসাদগেট ও শাহবাগসহ অলিগলিতে ছড়িয়ে পড়ে।
বিভিন্ন ভবনের ছাদ ও ওভার ব্রিজসহ যে যেখানে সুযোগ পেয়েছেন সেখানেই দাঁড়িয়ে পড়েছেন। চাপ ঠেলে সময় মতো আসতে না পেরে অনেকে জানাজা পাননি। ধারণা করা হচ্ছে, নিকট অতীতে এতো বড় জানাজা দেখেনি দেশবাসী।
পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জানাজার পর বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের পাশে স্ত্রী খালেদা জিয়াকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হবে।
এসময় খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্য, রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, সরকারের উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা, বিদেশি অতিথি, রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল মনোনীত রাজনীতিবিদরা উপস্থিত থাকবেন। দাফনকাজ নির্বিঘ্নে সম্পন্নের জন্য সেখানে নির্ধারিত ব্যক্তিবর্গ ব্যতীত আর কাউকে প্রবেশ করতে দেওয়া হবে না। শেরেবাংলা নগরের জিয়া উদ্যানে জনসাধারণের চলাচল সীমিত থাকবে।
এর আগে, বুধবার দুপুর পৌনে ১২টার দিকে কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার মরদেহ জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় নেওয়া হয়। তাকে বহন করা হয়েছে লাল-সবুজ রঙের জাতীয় পতাকায় মোড়ানো একটি ফ্রিজার ভ্যানে। সেনাবাহিনী হিউম্যান চেইন তৈরি করে রাষ্ট্রীয় প্রোটকলে তার মরদেহ সেখানে আনা হয়।
গাড়িবহরে একটি বাসে করে সেখানে পৌঁছান খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যরা।
এই মানিক মিয়া অ্যাভেনিউতেই ১৯৮১ সালের ২ জুন তার স্বামী, তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের জানাজা হয়েছিল।
মঙ্গলবার (৩০ ডিসেম্বর) ভোর ৬টায় রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেগম খালেদা জিয়া ইন্তেকাল করেন।
তার মৃত্যুতে বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত (৩১ ডিসেম্বর এবং ১ ও ২ জানুয়ারি) তিন দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছে সরকার। এছাড়া জানাজা উপলক্ষে আজ বুধবার সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
নব্বইয়ের স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ‘আপসহীন নেত্রী’ অভিধা পাওয়া খালেদা জিয়া বিএনপির নেতৃত্ব দিয়েছেন ৪১ বছর। তিনি পাঁচবারের সংসদ সদস্য, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী; আর বিরোধী দলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেছেন দুইবার।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81