02/23/2025
FT Online | Published: 2019-07-21 23:42:04
বছর দশের আগে ঢাকার এক কিশোরী ধর্ষণের শিকার হয়।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সহায়তায় সে পরিবার আইনের আশ্রয় নেয়। মামলার চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হতে সময় লাগে চার বছর।
সেই মামলায় ধর্ষকের যাবজ্জীবন করাদণ্ড হয়। কিন্তু বাংলাদেশে বহু ধর্ষণের মামলা ঝুলে আছে বছরের পর বছর যাবৎ।
বিভিন্ন সময় ধর্ষণের শিকার নারীদের আইনগত সহায়তা দেয় বেসরকারি মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র।
সংস্থাটির কর্মকর্তা নীনা গোস্বামী বলছেন, ধর্ষণের মামলায় চূড়ান্ত সাজা হয় হাতে গোনা।
"ধর্ষণের বিচার পেতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়। বিচার একেবারে নগণ্য। একেবারে নগণ্য থেকে নগণ্য বিচার পাচ্ছে।"
আইনজীবী এবং নারী সংগঠনগুলো বলছে, অনেক ধর্ষণকারীর বিচার না হওয়ার ক্ষেত্রে দুটো বিষয় রয়েছে।
প্রথমত আদালতে তথ্য-প্রমাণ ঠিকমতো উপস্থাপন না করা, অন্যদিকে মামলা দায়ের করার ক্ষেত্রে পরিবারের অনাগ্রহ।
বেসরকারি সংস্থা নারীপক্ষ বলছে, তারা এক গবেষণার অংশ হিসাবে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত ছয়টি জেলায় ধর্ষণের মামলা পর্যবেক্ষণ করেছে।
এ গবেষণাটির পরিচালক এবং নারীপক্ষের প্রকল্প পরিচালক রওশন আরা বলেন, এই সময়ে ৪৩৭২টি ধর্ষণের মামলা হয়েছে, কিন্তু সাজা হয়েছে মাত্র পাঁচ জনের।
এই গবেষণাটি পরিচালনার জন্য নারীপক্ষের তরফ থেকে থানা, হাসপাতাল এবং আদালত - এ তিনটি জায়গা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।
ধর্ষণের ঘটনার পর বিচার প্রক্রিয়ার সাথে এ তিনটি জায়গা জড়িত। সাধারণত এ তিনটি জায়গায় নারীরা যান।
নারীপক্ষের গবেষণায় বলা হচ্ছে, সমস্যার মূল জায়গা হলো এসব জায়গায় তাদের সাথে কী ধরণের আচরণ পান।
রওশন আরা বলেন, "ওপেন এজলাসের ভেতরে জিজ্ঞেস করা হতো কিভাবে রেপ করা হয়েছে। জিজ্ঞেস করা হয়, তোমাকে প্রথমে কী করেছে?"
একটি ধর্ষণের মামলা দায়ের করার জন্য যখন প্রথমে থানায় যাওয়া তখন পুলিশের দিক থেকে মামলা নথিভুক্ত করার ক্ষেত্রে অনাগ্রহ দেখানোর অভিযোগ রয়েছে।
শুধু ধর্ষণ নয় যে কোন যৌন হয়রানির মামলা লিপিবদ্ধ করার ক্ষেত্রে থানা পুলিশের অনাগ্রহ নিয়ে ব্যাপক অভিযোগ আছে।
ফেনীর সোনাগাজীতে আগুনে পুড়িয়ে মারার আগে নুসরাত জাহান যখন থানায় মামলা করতে গিয়েছিলেন, তখন সেখানে তিনি কী ধরণের হেনস্থার শিকার হন সেটি এখন অনেকেরই জানা।
যখন মামলা গ্রহণ করা হয় এরপর সেটির তদন্তের প্রশ্ন আসে।
থানা পুলিশের বাইরেও পুলিশের একটি ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার রয়েছে, যেখানে এসে নারীরা সহায়তা চাইতে পারেন।
পুলিশ যেভাবে অভিযোগপত্র দাখিল করবে সেভাবেই বিচার প্রক্রিয়া এগুবে এবং এখানেই ধর্ষণ মামলা তদন্তের ক্ষেত্রে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে বলে বলছেন ঢাকায় পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বলছেন।
"রেপ ভিকটিমের জন্য সবচেয়ে বড় সাক্ষী হচ্ছে তার বায়োলজিক্যাল এভিডেন্স। অনেক সময় বায়োলজিক্যাল এভিডেন্সগুলো তাৎক্ষণিক-ভাবে প্রিজারভড (সংরক্ষণ) করা হয়না। এটা আমাদের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ," বলছিলেন ফরিদা ইয়াসমিন।
তিনি বলেন, অনেক সময় ডিএনএ টেস্টের ফলাফল দেরি করে আসে। সেজন্য তদন্ত প্রক্রিয়া ধীর গতির হয়।
তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়ার বাইরে এর একটি সামাজিক দিকও রয়েছে বলে নারী অধিকার কর্মীরা বলছেন।
ধর্ষণের যত ঘটনা ঘটে, তার সামান্য অংশই আইন-আদালতের সামনে আসে।
মানবাধিকার কর্মী খুশি কবির বলছেন, বাংলাদেশের সমাজে এমন এক ধরণের মানসিকতা তৈরি হয়েছে যে কোন নারী ধর্ষণের শিকার হলে তার উপরেই অনেকে দোষ চাপানোর চেষ্টা করে।
এই পরিস্থিতি এড়ানোর জন্য অনেকে মামলাও দায়ের করতে চাননা। ফলে অপরাধীরা পার পেয়ে যাচ্ছে বলে মনে করেন খুশি কবির।
ধর্ষণের মামলা না করে আপোষ করা কিংবা মামলা দায়ের করার পরেও আপোষ করার ক্ষেত্রে বিচার ব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রীটাকেই দায়ী করলেন আইন ও সালিস কেন্দ্রের নীনা গোস্বামী।
তিনি বলেন, ধর্ষণের মামলায় চূড়ান্ত সাজা হবার নজীর যেহেতু খুব বেশি নেই, সেজন্য চাপের কাছে নতি স্বীকার করে আপোষ করাটাকেই অনেকে শ্রেয় মনে করেন।
আদালতে অভিযোগ প্রমাণের ক্ষেত্রে সাক্ষ্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
ধর্ষণের মামলায় বেশিরভাগ অভিযুক্ত খালাস পেয়ে যাবার মূল কারণ সাক্ষীর অভাব।
অনেক সময় মামলার বাদীও শেষ পর্যন্ত মামলা লড়তে চাননা।
এর অন্যতম কারণ হচ্ছে, আসামীরা আদালত থেকে জামিনে বেরিয়ে আসার পর ভুক্তভোগীদের উপর ভয়-ভীতিসহ নানা ধরণের চাপ প্রয়োগ করে।
ফলে একসময় অভিযোগকারী বাধ্য হয় মামলার আপোষ করতে।
ঢাকায় ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-কমিশনার ফরিদা ইয়াসমিন বলছেন, পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হলেও অনেক সময় ভিকটিম এবং সাক্ষীদের অনাগ্রহের কারণে অপরাধীরা খালাস পেয়ে যাচ্ছে।
তবে আইনজীবীরা বলছেন, ভিকটিমের নিরাপত্তা এবং সাক্ষী উপস্থাপনের দায়িত্ব পুলিশের।
ভিকটিমের নিরাপত্তা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, সেটি পুলিশকেই নিশ্চিত করতে হবে।
হাইকোর্টের আইনজীবী আইনুন নাহার লিপি মনে করেন, ধর্ষণের মামলা প্রমাণ করার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র পক্ষের সদিচ্ছা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
"ধর্ষণ কেউ সাক্ষী রেখে করেনা। সেখানে মূল সাক্ষী হচ্ছে ভিকটিম এবং তাঁর মেডিক্যাল রিপোর্ট। এক্ষেত্রে আর তো কোন কিছু লাগে না। ধর্ষণ মামলা দ্রুত শেষ করার কোন প্রতিবন্ধকতা নেই," বলছিলেন আইনুন নাহার লিপি।
সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ধর্ষণ এবং হত্যার ঘটনা জনমনে বেশ আলোড়ন তৈরি করেছে।
এক্ষেত্রে শিশু এবং অপ্রাপ্ত বয়স্করাই ঘটনার শিকার হচ্ছে বেশি।
এই প্রেক্ষাপটে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সম্প্রতি ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে ধর্ষণে জড়িতদের জামিন দেবার ক্ষেত্রে আদালতকে কঠোর হবার আহবান জানিয়েছেন।
বিষয়টি নিয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ধর্ষণের ঘটনায় যারা জড়িত থাকবে তাদের কেউ রেহাই পাবেনা।
আইনজীবী এবং মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, ধর্ষণের ঘটনা বন্ধ করার জন্য একমাত্র উপায় হচ্ছে, যদিও অপরাধীদের দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা।
কিন্তু বাস্তবে যেসব সমস্যা রয়েছে সেগুলোর সমাধান না হলে দ্রুত বিচার কঠিন হয়ে দাঁড়াবে বলে তারা মনে করছেন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81