02/23/2025
আবু তাহের বাপ্পা | Published: 2019-12-16 01:20:30
এফটি বাংলা
পাটকল শ্রমিকদের ১১ দফা দাবির অন্যতম হলো, পাট মৌসুমে কাঁচা পাট ক্রয়ের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ দেয়া। এ অর্থ বরাদ্দ না পাওয়ায় কারখানাগুলো মৌসুমে চাহিদা অনুযায়ী কাঁচা পাট ক্রয় করতে পারছে না। ফলে কারখানাগুলোতে কাঁচা পাটের ঘাটতি থেকে যায়। এ অবস্থায় খুলনা অঞ্চলের কারখানাগুলোর উৎপাদন ৬৯ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে।
বাংলাদেশ পাটকল করপোরেশনের (বিজেএমসি) খুলনা অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত লিয়াজোঁ কর্মকর্তা বনিজ উদ্দিন মিঞা বলেন, কারখানাগুলো যথাযথভাবে পাট কিনতে না পারায় উৎপাদনে যেতে পারছে না। কাঁচা পাট সংকটে বর্তমানে কারখানা গুলোয় উৎপাদন এক-তৃতীয়াংশে নেমে এসেছে।
তিনি আরো বলেন, উৎপাদন বন্ধ রেখে শ্রমিকদের অনশনের কারণে খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে গত চারদিনে প্রায় ৪ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে।
বিজেএমসি সূত্র জানায়, খুলনা অঞ্চলের রাষ্ট্রায়ত্ত নয়টি পাটকলে প্রতিদিন পাটজাত পণ্যের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ২৭২ দশমিক ১৭ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে মাত্র ৮৬ দশমিক ৩৯ টন। অর্থাৎ উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে ৬৯ শতাংশ।
এর মধ্যে আলীম জুট মিলে দৈনিক উৎপাদনের লক্ষ্য ১০ দশমিক ৫০ টন। এর বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৩ দশমিক ৬৩ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩৪ দশমিক ৭৯ শতাংশ। কার্পেটিং জুট মিলের লক্ষ্যমাত্রা ৭ দশমিক ৬৮ টনের বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ২ দশমিক ৯০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪৩ দশমিক ৭৫ শতাংশ। ক্রিসেন্ট জুট মিলের লক্ষ্যমাত্রা ৭০ দশমিক ৫০ টন, উৎপাদন হচ্ছে ২৩ দশমিক ৬ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৩২ দশমিক ৬৫ শতাংশ। দৌলতপুর জুট মিলে লক্ষ্যমাত্রা ১০ দশমিক ১১ টন হলেও উৎপাদন হচ্ছে ২ দশমিক ৪৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক ১৬ শতাংশ। ইস্টার্ন জুট মিলের লক্ষ্যমাত্রা ১৬ দশমিক ৩৪ টনের বিপরীতে উৎপাদন হচ্ছে ৭ দশমিক ৯৭ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ৪০ দশমিক ৯ শতাংশ। যশোর জুট ইন্ডাস্ট্রিজের (জেজেআই) লক্ষ্যমাত্রা ২২ দশমিক ২০ টন, কিন্তু উৎপাদন হচ্ছে ৮ দশমিক ১৫ টন। এটি লক্ষ্যমাত্রার ৩৩ দশমিক ২৪ শতাংশ। খালিশপুর জুট মিলের লক্ষ্যমাত্রা ৪৭ দশমিক ৫০ টন, উৎপাদন হচ্ছে ১২ দশমিক ৩০ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২২ দশমিক ৫৮ শতাংশ। প্লাটিনাম জুবিলি জুট মিলের উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৫০ দশমিক ৫৪ টন। সেখানে উৎপাদন হচ্ছে ১৫ দশমিক ৯৮ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। স্টার জুট মিলের লক্ষ্যমাত্রা ৩৬ দশমিক ৮০ টন, উৎপাদন হচ্ছে ৯ দশমিক ৯৫ টন, যা লক্ষ্যমাত্রার ২০ দশমিক ৯৫ শতাংশ।
কাঁচা পাট সংকটের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় আর্থিক সংকটের পরিমাণও বাড়ছে পাটকলগুলোয়। জানা গেছে, খুলনা-যশোর অঞ্চলের নয়টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলে দায়-দেনার পরিমাণ ১ হাজার ১৯৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক মিজানুর রহমান বলেন, সময়মতো প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট কিনতে পারলে মিলগুলোর উৎপাদনে কোনো সমস্যা হতো না। আর মিলের উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করেও বেশি লাভ পাওয়া যেত। কিন্তু বেশি দাম দিয়ে কাঁচা পাট কেনার কারণে পাটকলগুলোকে লোকসান গুনতে হচ্ছে।
প্লাটিনাম জুট মিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন বলেন, পাটকলগুলো আর্থিক সংকটে থাকায় শ্রমিকরা কাজ করেও নিয়মিত মজুরি পাচ্ছেন না। এ কারণেই আন্দোলন করতে হচ্ছে।
ক্রিসেন্ট জুট মিলের সিবিএ নেতা মো. মুরাদ হোসেন বলেন, মূলত মজুরি কমিশন বাস্তবায়নের জন্যই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্লাটিনাম জুট মিলের প্রকল্প প্রধান মো. গোলাম রব্বানী বলেন, শ্রমিকরা কাজে যোগদানের সঙ্গে সঙ্গে কাঁচা পাট ক্রয়ের বিষয়টি চিন্তায় নিতে হয়েছে। কারণ কাঁচা পাট না থাকলে শ্রমিকরা কাজ করতে পারবেন না।
স্টার জুট মিলের প্রকল্পপ্রধান রইজ উদ্দিন আহম্মেদ জানান, মিলের শ্রমিকদের ১০ সপ্তাহ আর কর্মচারীদের দুই মাসের বকেয়া মজুরি ও বেতন পরিশোধ করা হয়েছে; যা ৪ ডিসেম্বর শ্রমিকদের নিজ নিজ ব্যাংক অ্যাকাউন্টে চলে গেছে। শ্রমিকরা ওই টাকা উত্তোলনও করছেন। তবে কর্মকর্তাদের পাওনা টাকা মজুদকৃত পাটপণ্য বিক্রি করে পরিশোধ করা হবে। প্রয়োজনীয় কাঁচা পাট ক্রয় করার নির্দেশনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, মজুরি কমিশন বাস্তবায়নসহ ১১ দফা দাবিতে গত ১৭ নভেম্বর ছয়দিনের কর্মসূচির ডাক দেয় রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল সিবিএ, নন-সিবিএ সংগ্রাম পরিষদ।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81