02/23/2025
Siyam Hoque | Published: 2020-02-29 16:33:50
বিশেষ প্রতিনিধি
প্রবাসি আনোয়ার হোসেনকে টাকা ও সম্পত্তির জন্য অপহরন করার ৮৫ দিন পরে নিউলাইফ নামে মাদকাসক্তি নিরাময় ও পূনর্বাসন কেন্দ্র থেকে উদ্ধার করেছে পুলিশ ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন। ঢাকা মেট্রো দক্ষিন পিবিআই বিশেষ পুলিশ সুপার মো:সাহাদাত হোসেন পিপিএম এর নেতৃত্বে এবং এসআই সাদেকুর রহমানের সহায়তায় আনোয়ার হোসেনকে জীবিত উদ্ধার করে পুলিশ।
আনোয়ার হোসেনের স্ত্রী সাথি আক্তারের দায়েরকৃত মামলার আর্জিতে জানা যায়, বিগত ২৪ই আগষ্ট ২০১৯ইং তারিখ সকাল ৯টায় বাদীনির গেন্ডারিয়ার বাসা হতে ভিকটিম আনোয়ার হোসেন তার টঙ্গীস্থ বাসার উদ্দেশ্যে বের হন। সারাদিনে তার কোন খোঁজ না পাওয়ায় রাত ৮টায় মোবাইলে কল দিলে আনোয়ার হোসেনের মোবাইল বন্ধ পান তার স্ত্রী। বাদীনি দীর্ঘক্ষন নানা জায়গায় খোজাখুজি শেষে নিজ বাসায় চলে আসেন। ২৬ই আগষ্ট ২০১৯ইং তারিখে অজ্ঞাত পরিচয়ে কতিপয় ব্যক্তি বাদীনির ইমো নাম্বারে ফোন দিয়ে ৩৬ লক্ষ টাকা দাবী করে। দাবিকৃত টাকা না দিলে আনোয়ার হোসেনকে মেরে ফেলার হুমকি দেয়া হয়। নিরুপায় হয়ে স্ত্রী সাথি আক্তার বিজ্ঞ আদালতে হাজির হয়ে একটি অপহরন মামলা দায়ের করেন।
মামলা দায়েরের পর তদন্তসূত্রে জানা যায় যে, আনোয়ার হোসেন তার ভাই আমির হোসেন ও মো: খোকনের সাথে জায়গা জমি ও নির্মিত ফ্ল্যাটের ভাগ বাটোয়ারা ও দখল নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বৈরী সম্পর্ক ছিলো।
আনোয়ার হোসেন দীর্ঘদিন বিদেশে থাকাকালে তার সাবেক স্ত্রী শিউলী আক্তার, ভাই আমির হোসেন ও মো: খোকনের ব্যাংক একাউন্টে টাকা পাঠাতেন। পরবর্তীতে সেই অর্থ ব্যয় করে সম্মিলিতভাবে তাদের ৬১, আছাদউল্ল্যা মাতাব্বর রোড, শৈলারগাতি, চেরাগআলী, থানা টংঙ্গী পূর্ব, জেলা গাজীপুরস্থ বাসার ঠিকানায় একটি ৭ তলা ভবন নির্মান করেন। পরবর্তীতে উক্ত ভবনের ফ্ল্যাট এবং নিচের দোকানের ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে ভাইদের সাথে বিরোধ সৃষ্টি হয়।
অন্যদিকে সাবেক স্ত্রী শিউলী আক্তারের সাথে জনৈক মসিউর জামান বাবলুর সুসম্পর্ক থাকায় আনোয়ার হোসেন তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করায় তার সাথেও সম্পত্তি ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে আনোয়ার হোসেনের বিরোধ সৃষ্ঠি হয়।
পরবর্তীতে সম্পত্তির লোভে আনোয়ারকে অপহরন করে মেরে ফেলার পরিকল্পনা করেন ভাই আমির হোসেন ও মশিউরজামান বাবলু। বাবলুর পরিচিত মো: কামরুজ্জামান রায়হানের প্রতিষ্ঠান নিউলাইফ নামীয় মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পূনর্বাসন কেন্দ্রে অপহরন করে আটকে রাখার পরিকল্পনা করা হয়। মো: মশিউর জামান বাবলুর কথায় আনোয়ারকে অপহরনে প্রয়োজনীয় সকল অর্থ যোগান দেন আমির হোসেন ও মো: খোকন।
উদ্ধারের পরে আনোয়ার হোসেনের বরাত দিয়ে এসআই সাদেকুর রহমান এফটি টীমকে জানান; পূর্বপরিকল্পনা মতো ঘটনার দিন ২৪ই আগষ্ট ২০১৯ইং তারিখে সম্পত্তির ভাগ বাটোয়ারা নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা মীমাংসার জন্য আলোচনার কথা বলে আমির হোসেন ভিকটিম আনোয়ার হোসেনকে খবর দিয়ে তাদের টঙ্গীস্থ বাসায় আসতে বলে। আনোয়ার হোসেন তার ভাইদের কথা মত স্ত্রী সাথী আক্তারের গেন্ডারিয়াস্থ বাসা হতে সকাল ৭টায় টঙ্গীস্থ বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করেন। সকাল ১০টার দিকে টঙ্গী এসে আনোয়ার হোসেন তার ভাইদ্বয় আমির হোসেন ও খোকনের সাথে সাক্ষাৎ করলে তারা সন্ধ্যায় আলোচনা করবে জানিয়ে আনোয়ার হোসেনকে তার দোকানে থাকতে বলে। আনোয়ার তখন তার দোকানে অবস্থান করছিলেন। হঠাৎ মো: কামরুজ্জামান রায়হান এর নেতৃত্বে ৪/৫ জন অজ্ঞাতনামা লোক একটি কালো রং-এর হাইএক্স মাইক্রোবাসে (ঢাকা মেট্রো চ- ১৯-৫৮৯২) করে আনোয়ার এর দোকানের সামনে এসে নামে।
ঐসময় তাদের সকলের পরনে ছিল হাতাকাটা জ্যাকেট এবং পরনের প্যান্টের বেল্টের সাথে আইডিকার্ড ঝুলানো ছিল। এ সময় আমির হোসেন তার বাসার সামনে দাড়িয়েছিলো। অজ্ঞাতনামা লোকেরা আনোয়ার হোসেন কিনা জিজ্ঞাসা করলে, আনোয়ার নিজের নাম আনোয়ার হোসেন বলে পরিচয় দেয়। উক্ত অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিগন নিজেদেরকে আইনশৃংখলা বাহিনীর লোক পরিচয় দিয়ে তাকে জঙ্গি বলে সম্বোধন করে এবং তাকে তাদের গাড়িতে তোলার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে জোর করে পাজাকোলো করে গাড়িতে তোলার পর গাড়ির দরজা বন্ধ করে দেয়। গাড়িতে তোলার পরপরই তারা তার চোখ বেধে ফেলে এবং ক্রসফায়ারের ভয় দেখায়। আনোয়ার হোসেন তার অপরাধ সম্পর্কে জানতে চাইলে তারা অফিসে গিয়ে কথা বলবে বলে জানায়। এ অবস্থায় আনোয়ার হোসেনকে চোখ, হাত-মুখ বেধে ফেলে। কামরুজ্জামান ও রায়হান নিউলাইফ নামীয় মাদকাসক্ত নিরাময় প্রতিষ্ঠানের নিচতলার একটি রুমে তাকে আটকে রাখে এবং তার মাথার চুল ন্যাড়া করে দেয় ও সেভ করে মুখের সুন্নতি দাড়ি কেটে ফেলে যাতে করে সহজে তাকে চেনা না যায়।
আনোয়ার হোসেনকে আটক করে আমির হোসেন এবং মসিউরজামান বাবলু সাবেক স্ত্রী শিউলিকে পুনরায় আনোয়ারের সংসারে ফিরিয়ে নিতে এবং তার নামে সকল সম্পত্তি লিখে দিতে জোর করে। অন্যথায় তাকে হত্যা করে লাশ গুম করে ফেলবে বলে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। কিন্তু আনোয়ার হোসেন কিছুতেই রাজি হয়নি।
এদিকে আনোয়ারের পরিবার তাকে বিভিন্ন হাসপাতালসহ নানা জায়গায় খোঁজ করেন। এ বিষয়ে আমির হোসেন, খোকন, শিউলি, মসিউরজামান বাবলু ভিকটিম আনোয়ারের অবস্থান সম্পর্কে জানা সত্বেও পুলিশের তদন্তকালে তাদেরকে জিজ্ঞাসা করা হলে তারা বিষয়টি গোপন করেন।
সূত্রোক্ত মামলাটি দায়েরের দীর্ঘ ৮৫ দিন পর ১৬ই নভেম্বর ২০১৯ইং বিকাল ৪টায় ভিকটিম আনোয়ার হোসেনকে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে এবং সোর্সের সহায়তায় নিউলাইফনামীয় মাদকাসক্তি চিকিৎসা ও পূর্নবাসন কেন্দ্র হতে জীবিত উদ্ধার করা হয় বলে প্রেস ব্রিফিংএ জানান পিবিআই পুলিশ কর্মকর্তাগন।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81