02/23/2025
Siyam Hoque | Published: 2020-03-09 19:59:42
দেশে নতুন করে আর কোনো করোনোভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান আইইডিসিআর।
সোমবার রাজধানীর মহাখালীতে আইইডিসিআরের কার্যালয়ে নিয়মিত সংবাদ ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জাাননো হয়।
আইইডিসিআরের পরিচালক অধ্যাপক ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, রোববার বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত দেশে তিনজনের শরীরে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ে। গত ২৪ ঘণ্টায় আরও চারজনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে তাদের কারোর মধ্যেই করোনাভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া যায়নি। অর্থ্যাৎ এখন পর্যন্ত সর্বমোট শনাক্ত রোগীর সংখ্যা তিনজনই।
ড. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা আরও বলেন, এখর পর্যন্ত করোনা হটলাইনে ৫০৯টি ফোন পেয়েছি। এর মধ্যে ৪৪৯টি করোনা ভাইরাস সংক্রান্ত। পরে চারজনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে।
তিনি বলেন, যারা বিদেশ থেকে আসছেন তাদের অবশ্যই ১৪ দিন বাড়িতে থাকতে হবে। প্রতিবেশির বাড়িতে যাওয়া যাবে না। তবে এটা মনে রাখতে হবে, বিদেশ থেকে এলেই কিন্তু তারা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত না।
করোনাভাইরাসের বিশ্ব পরিস্থিতি তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত দেশের সংখ্যা ১০২টি। নতুনভাবে করোনায় আক্রান্ত হয়েছে ৮টি দেশ। সারা বিশ্বে কারোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ১ লাখ ৫ হাজার ৫৫৯ জন।
এর আগে, রোববার বিকেলে দেশে প্রথমবারের মতো করোনাভাইরাসে আক্রান্ত তিনজন রোগী শনাক্তের কথা জানায় আইইডিসিআর। করোনা আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন ইতালি ফেরত এবং একজন দেশে ছিলেন। তাদের মধ্যে দুইজন পুরুষ ও একজন নারী। আক্রান্তদের বয়স ২৫ থেকে ৩৫ বছর। এদের মধ্যে দু’জন একই পরিবারের।
গত ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের উহানে করোনাভাইরাস প্রথম দেখা দেয়। পরে চীনের অন্যান্য প্রদেশ এবং বিশ্বের নানা দেশে ছড়িয়ে পড়ে। চীনের বাইরে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে ইতালিতে। ইতালি থেকে পুরো ইউরোপ এবং আফ্রিকা ও আমেরিকার বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এ ভাইরাস। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোর মধ্যে ইরানে এ ভাইরাস ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে।
দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শ্রীলঙ্কা, নেপাল, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ভারতে আগেই পৌঁছেছে করোনাভাইরাস। এর মধ্যে ভারতে এ ভাইরাসের সংক্রমণ সবচেয়ে বেশি ধরা পড়েছে। বাংলাদেশে সংক্রমণ ধরা পড়ে রোববার।
করোনায় আশাব্যঞ্জক খবর এসেছে চীনের উহান থেকেই। দুই মাস আগে চীনের এই অঞ্চলেই প্রথম করোনাভাইরাসের সংক্রমণ শনাক্ত হয়। হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহানে নতুন রোগী আরও কমেছে।
মার্চের মাঝামাঝি উহানে নতুন রোগীর সংখ্যা শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে বলে আশা করছেন চীনা চিকিৎসকরা। ফলে শিগগির ওই অঞ্চলের অবরুদ্ধ অবস্থার অবসান ঘটবে বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা। এক মাসের বেশি সময় ধরে কার্যত অবরুদ্ধ ছিল হুবেইর সাড়ে ৫ কোটি মানুষ। কিন্তু চীনের বাইরে প্রতিদিনই নতুন নতুন দেশে এ ভাইরাসের সংক্রমণের তথ্য আসছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ইতালি, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ভারতে বাড়ছে নতুন রোগীর সংখ্যা।
সার্স ও মার্স পরিবারের সদস্য করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ফ্লুর মতো উপসর্গ নিয়ে যে রোগ হচ্ছে তাকে বলা হচ্ছে কভিড-১৯। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, এখন পর্যন্ত এ রোগে মৃত্যুহার ৩.৪ শতাংশ, যেখানে মৌসুমি ফ্লুতে মৃত্যুহার থাকে ১ শতাংশের নিচে। তবে করোনায় ৯ বছরের নিচের কেউ মারা যায়নি। প্রবীণদের মধ্যেই মৃত্যুহার বেশি।
করোনাভাইরাস মূলত শ্বাসতন্ত্রে সংক্রমণ ঘটায়। এর লক্ষণ শুরু হয় জ্বর দিয়ে, সঙ্গে থাকতে পারে সর্দি, শুকনো কাশি, মাথাব্যথা, গলাব্যথা ও শরীর ব্যথা। সপ্তাহখানেকের মধ্যে দেখা দিতে পারে শ্বাসকষ্ট। উপসর্গগুলো হয় অনেকটা নিউমোনিয়ার মতো। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভালো হলে এ রোগ কিছুদিন পর এমনিতেই সেরে যেতে পারে। তবে ডায়াবেটিস, কিডনি, হৃদযন্ত্র বা ফুসফুসের পুরোনো রোগীদের ক্ষেত্রে ডেকে আনতে পারে মৃত্যু। করোনাভাইরাসের কোনো টিকা বা ভ্যাকসিন এখনও তৈরি হয়নি। ফলে এমন কোনো চিকিৎসা এখনও মানুষের জানা নেই, যা এ রোগ ঠেকাতে পারে। আপাতত একমাত্র উপায় হলো আক্রান্তদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, চীনে যে গতিতে সংক্রমণ ছড়িয়েছে, চীনের বাইরে এই সংক্রমণ ১৭ গুণ বেশি। পরিস্থিতির ভয়াবহতা সম্পর্কে সংস্থার মহাপরিচালক টেড্রস অ্যাডানম গেব্রেয়েসুস বলেছেন, এ ভাইরাসকে যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে হবে। এটা আত্মসমর্পণের সময় নয়। কোনো অজুহাতের সময় নয়। কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে এই কঠিন পরিস্থিতির বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।
এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) বলেছে, করোনার কারণে বৈশ্বিক অর্থনীতির সর্বোচ্চ ৩৪ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের ক্ষতি হতে পারে। বহুজাতিক ব্যাংকটির মতে, করোনায় সর্বনিম্ন ক্ষতি হবে ৭ হাজার ৭০০ কোটি ডলার, যা বিশ্বের জিডিপির ০.১ শতাংশ।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81