02/23/2025
Siyam Hoque | Published: 2020-03-11 20:36:45
বিভক্তি, সমন্বয়হীনতা ও হামলা-মামলার ঘটনায় বছরজুড়ে আলোচনায় ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। দীর্ঘ ২৯ বছর পর ছাত্র সংসদটির নির্বাচন হলেও বিরোধ ও বিতর্কে আটকে ছিল অনেক কিছু। এমনকি নিজেদের অভিষেক অনুষ্ঠানও করতে পারেনি ডাকসুর এই কমিটি।
গত এক বছরে শিক্ষার্থীদের কল্যাণে কিছু কাজকর্ম হলেও আলোচিত কাজটিতে হাত দিতে পারেনি ডাকসু। এর প্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় শিক্ষার্থীদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, আবাসিক হলগুলোতে চলা ‘গণরুম’ ও ‘গেস্টরুম’ সংস্কৃতি বন্ধ করবেন। এ বিষয়ে মাঝেমধ্যে আলোচনা উঠলেও এগুলো বন্ধে তাঁদের খুব একটা তৎপর দেখা যায়নি।
দীর্ঘদিন পর সচল হলেও ডাকসুর ভিপি নুরুল হকের সঙ্গে জিএস গোলাম রাব্বানী ও এজিএস সাদ্দাম হোসেনের বৈরী সম্পর্কের কারণে কাজের চেয়ে বিতর্ক-সমালোচনাই হয়েছে বেশি। গত বছরের ২২ ডিসেম্বর ডাকসু ভবনে নুরুলসহ তাঁর সমর্থকদের ওপর হামলার অভিযোগ ওঠে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। সেই তদন্ত শেষ করেনি বিশ্ববিদ্যালয়। এ ছাড়া গত বছরের এপ্রিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সলিমুল্লাহ হলে নুরুলকে লাঞ্ছিত করে ছাত্রলীগ। এ ছাড়া ছাত্রলীগের কনিষ্ঠ এক কর্মী সম্প্রতি নুরুলকে হত্যার হুমকি দিয়েছেন।
ডাকসু নির্বাচনের এক বছর পূর্তি হচ্ছে আজ বুধবার। পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না কেউই।
গত ২১ জানুয়ারি রাতে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত সন্দেহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের চার ছাত্রকে পেটায় ছাত্রলীগ। এরপর হল প্রশাসনের মাধ্যমে আহতদের পুলিশে সোপর্দ করে হল শাখা ছাত্রলীগ। ডাকসুতে সংখ্যাগরিষ্ঠ ছাত্রলীগের প্রতিনিধিরা নির্যাতিত ছাত্রদের জন্য কিছুই করেননি।
ডাকসুর মেয়াদের শেষ ভাগে নানা ঘটনায় ছাত্রলীগের ডাকসু প্রতিনিধিদের মধ্যে কোন্দল প্রকাশ্য হয়। সর্বশেষ ‘ক্যাম্পাসে পরিবহন শৃঙ্খলা ও ভাড়া নির্ধারণ’ নিয়ে পাল্টাপাল্টি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে দুটি পক্ষ। প্রথম বিজ্ঞপ্তিটি দেন ডাকসুর সদস্য তানভীর হাসান ও নজরুল ইসলাম, দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিটি দেন এজিএস সাদ্দাম ও ছাত্র পরিবহন সম্পাদক শামস-ঈ-নোমান।
‘গেস্টরুম’ বহাল
ডাকসুর জিএস ও ছাত্রলীগের পদচ্যুত সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীও মনে করেন, ‘গেস্টরুমে জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ‘গেট-টুগেদার’ হয়। ডাকসুর এজিএস সাদ্দাম হোসেনও ‘গেস্টরুমকে’ দেখেন জ্যেষ্ঠ ও কনিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের ‘মিথস্ক্রিয়ার’ একটি জায়গা হিসেবে। তবে তিনি প্রথম আলোর কাছে স্বীকার করেছেন, ‘নেতিবাচক রাজনীতি চর্চার অংশ হিসেবে’ কেউ কেউ এর ‘অপব্যবহার’ করে থাকে।
সাধারণত হলের অতিথিকক্ষে জ্যেষ্ঠ নেতা-কর্মীরা কনিষ্ঠদের ‘ম্যানার’ শেখান বলে এর নাম ‘গেস্টরুম। সাধারণত প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীদের এই কর্মসূচির মুখোমুখি হতে হয়।
সরকারদলীয় ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ‘গেস্টরুম’ ধারণায় পরিবর্তন আনতে পারেনি ডাকসু।
ডাকসুর ইতিবাচক কর্মকাণ্ড
ডাকসুর বর্তমান কমিটির প্রথম দৃশ্যমান কাজ স্মার্টফোনভিত্তিক বাইসাইকেলসেবা জো-বাইক। ডাকসুর ছাত্র পরিবহন সম্পাদকের উদ্যোগে গত বছরের ১৬ অক্টোবর আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হওয়ার পর থেকে জো-বাইক ব্যবহার করে শিক্ষার্থীরা উপকৃত হচ্ছেন। এরপর ৪ ডিসেম্বর ডাকসুর সদস্য তিলোত্তমা শিকদারের উদ্যোগে ও এসিআই কনজ্যুমার ব্র্যান্ডের সহায়তায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীদের পাঁচটি হলসহ কয়েকটি স্থানে বসানো হয় স্যানিটারি ন্যাপকিন ভেন্ডিং মেশিন। এসব স্থান থেকে ১০ টাকার বিনিময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা স্যানিটারি ন্যাপকিন সংগ্রহ করতে পারছেন।
ডাকসুর অবস্থানের কারণে সান্ধ্য কোর্সের ভর্তি কার্যক্রম স্থগিত করে এগুলো পরিচালনার নীতিমালা তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে প্রশাসন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। ফাইল ছবিপরীক্ষার ফলাফলের দীর্ঘসূত্রতা হ্রাস, বিভিন্ন বিভাগের অযৌক্তিক উন্নয়ন ফি কমানো, আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের জন্য বাস ট্রিপ ও রুটের সংখ্যা বাড়ানো, ছাত্রীদের হলে প্রবেশের সময়সীমা বাড়ানো, গ্রন্থাগারের সময়সীমা বাড়ানো, মেয়েদের বাইসাইকেল শেখানো কর্মসূচি, বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সভা-সেমিনার আয়োজন ইত্যাদির মাধ্যমে বছরজুড়ে প্রয়োজনীয় হয়ে উঠতে চেয়েছে ডাকসু।
ডাকসুর সংস্কৃতিবিষয়ক সম্পাদক আসিফ তালুকদার বিভিন্ন সাংস্কৃতিক আয়োজনের পাশাপাশি করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ব্যাপী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতা ‘ট্যালেন্ট হান্ট’, ক্রীড়া সম্পাদক শাকিল আহমেদ আয়োজন করেছেন ক্রিকেট, ফুটবল, ভলিবল, সাঁতারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিযোগিতা। সাহিত্য সম্পাদক মাজহারুল কবির প্রথমবারের মতো ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বইমেলা’ আয়োজন এবং একাধিক সাহিত্য পত্রিকা প্রকাশ করেছেন। বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবসেও ডাকসু কিছু কর্মসূচি করেছে।
ডাকসু নির্বাচনের বদৌলতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সহাবস্থান পেয়েছে বিএনপির ছাত্রসংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। তবে আগের মতোই ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা হলে থাকতে পারছেন না।
হল সংসদের কর্মকাণ্ড
১৮টি হল সংসদের কোনোটিরই এখন পর্যন্ত বাজেট হয়নি। তবে বিভিন্ন দিবসভিত্তিক কর্মসূচিতে সক্রিয় এই সংসদগুলো। ছাত্রদের হলগুলোতে তেমন পরিবর্তন আনতে না পারলেও ছাত্রী হলগুলোতে বেশ পরিবর্তন এনেছে।
বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলের একটি গণরুমে আগে ৪০-৫০ জন ছাত্রী থাকতেন। কিন্তু হল সংসদের তৎপরতায় এখন এখানে ১০-১৫ জন থাকছেন বলে জানালেন হল সংসদের ভিপি রিকি হায়দার।
ডাকসু ও হল সংসদের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ ২৩ মার্চ। পরবর্তী নির্বাচনের বিষয়ে সুস্পষ্ট কিছু বলতে পারছেন না কেউই। উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানের বক্তব্য, ‘ডাকসু নির্বাচন অনেক বড় কর্মযজ্ঞ, এটি নিয়ে আলাপ–আলোচনা করে দেখতে হবে।’ তবে শিক্ষার্থীরা চান, ডাকসু নির্বাচন নিয়মিত হোক।
রোকেয়া হলের ছাত্রী কনক ফারজানা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে যেখানে কিছুই হতো না, ডাকসু ও হল সংসদ থাকায় এবার কিছু ভালো কাজ তো হয়েছে। নিয়মিত নির্বাচন হলে পরিস্থিতি ধীরে ধীরে আরও পাল্টাবে।’
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81