02/24/2025
আবু তাহের বাপ্পা | Published: 2020-03-16 20:46:24
জামালপুরের ডিসির কেলেঙ্কারির রেশ কাটতে না কাটতেই কুড়িগ্রামের ডিসির কেলেঙ্কারি জনসম্মুখে এলো। কুড়িগ্রামের ডিসি যে কাণ্ডটি করেছেন, তা এক অর্থে জামালপুরের ডিসির থেকেও ভয়াবহ। কারণ তিনি একটি এলাকার দায়িত্ব পালন করা অবস্থায় আইনের প্রতি চরম অশ্রদ্ধা দেখিয়েছেন এবং প্রতিহিংসার আশ্রয় নিয়ে বেপরোয়াভাবে ক্ষমতার দাপট দেখিয়েছেন।
কোন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ক্ষমতার এমন দাপট দেখানো এবং সমালোচককে এভাবে অপদস্থ করার দৃষ্টান্ত দেখাতে পারেনি। আর এই প্রেক্ষাপটেই উঠে এসেছে যে, ডিসিরা কেন দুষ্ট হচ্ছেন?
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ গতকাল রবিবার ডিসিদের বিষয়ে এক অনির্ধারিত আলোচনা করেছে এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ও ডিসিদের বিষয়ে নানারকম অনিয়ম, অনৈতিক কার্যক্রম এবং অপকর্ম নিয়ে আলোচনা করেছে। যদিও কুড়িগ্রামের ডিসিকে প্রত্যাহার করে নিয়ে আসা হয়েছে, কিন্তু জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আজ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সামনে এনেছেন।
দীর্ঘদিন যাবত ডিসি নিয়োগ করা হতো ফিটলিস্টের মাধ্যমে এবং ঐ ব্যাচের উপসচিব পর্যায়ের সবথেকে মেধাবী-দক্ষ এবং যারা প্রশাসনের কাজে অভিজ্ঞ, তাদেরকেই ডিসি হিসেবে ফিটলিস্ট অনুযায়ী নিয়োগ করা হতো। প্রশ্ন হলো যে এই ফিটলিস্ট কিভাবে করা হয়?
মন্ত্রীপরিষদ বিভাগেরই কোন কোন কর্মকর্তা বলছেন যে, সাম্প্রতিক সময়ে এই ধরনের ফিটলিস্টগুলো তৈরি করা হচ্ছে রাজনৈতিক বিবেচনায় এবং রাজনৈতিক তদবিরের মাধ্যমে। রাজনৈতিক বিবেচনায় যখন একজন ডিসি নিয়োগ পাচ্ছেন, তখন তিনি তাঁর যোগ্যতা এবং মেধার বদলে ক্ষমতার দাপট দেখাতে চাইছেন।
বর্তমানে যেই ডিসিকে নিয়ে বিতর্ক চলছে, সেই জাহানারাকে ২০০৮ সালে প্রত্যাহার করা হয়েছিল। কিন্তু তিনি কার ক্ষমতার দাপটে, কার পৃষ্ঠপোষকতায় সেই প্রত্যাহার বাতিল করেছিলেন এবং আবার সেখানে দায়িত্বপালন করেছিলেন সেই প্রশ্ন উঠেছে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অনেক কর্মকর্তাই মনে করছেন যে, ডিসিদের মান নিম্নমুখী। আগে যে রকমভাবে যোগ্যতা যাচাই বাছাই করে ডিসি নিয়োগ করা হতো, সেই নিরীক্ষা এবং মান বজায় রাখা যাচ্ছে না। কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন যে, ডিসি নিয়োগের জন্য এখন তদবিরও হচ্ছে। এ সমস্ত তদবিরের মাধ্যমে যারা জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পাচ্ছেন তারা দুর্বৃত্তে পরিণত হচ্ছেন। বেশ কয়েকটি জেলায় জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তদের যোগসাজশেরও অভিযোগ রয়েছে। মন্ত্রীপরিষদ বিভাগেও এসব অভিযোগ এসেছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, এরকম অন্তত ১৮ থেকে ২০ টি জেলার জেলা প্রশাসক রয়েছেন, যারা জেলা প্রশাসকের দায়িত্ব পালনের চেয়ে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে বেশি মনোনিবেশ করছেন।
আবার অনেক জেলা প্রশাসকই মনে করছেন যে, মন্ত্রী-এমপিদের খুশি রাখলেই জেলা প্রশাসকের পদ বহাল রাখা যাবে। এ সমস্ত কারণে মাঠ প্রশাসনের অবস্থা নজিরবিহীনভাবে খারাপ হয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থা যদি চলতে থাকে, তাহলে মাঠ প্রশাসনে দুর্বৃত্তায়ন এবং দুর্নীতি আরও ব্যাপক আকার ধারণ করবে। এর ফলে তৃণমূলে সুশাসন সুদূর পরাহত হবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে যে, শুধু জেলা প্রশাসক নয়, অনেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও অতিমাত্রায় রাজনীতিপ্রবণ হওয়া এবং এলাকায় নানারকম অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগ উঠেছে।
বিশ্বস্ত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে যে, ২৬ মার্চের পর থেকে এই ডিসিদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান শুরু হবে। ‘দুষ্টু’ ডিসিদের চিহ্নিত করে তাদের প্রত্যাহার করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
তবে এরকম উদ্যোগ এই প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার এরকম উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাজনৈতিক চাপে সেই উদ্যোগগুলো সফল হয়নি।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81