02/24/2025
সামি | Published: 2020-03-19 21:32:16
বিশেষ প্রতিনিধি
করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে দেশে জরুরি অবস্থা জারির জন্য রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আবেদন করেছেন সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় এ আবেদনপত্র গ্রহণ করেছে।
আবেদনকারী তিন আইনজীবী হলেন- শিশির মুনীর, আসাদ উদ্দিন ও জোবায়দুর রহমান।
আবেদনে বলা হয়, মরণব্যাধী করোনাভাইরাসের কারনে এরই মধ্যে বিশ্বের সাতটি দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
দিন দিন করোনাভাইরাস যেভাবে ছড়িয়ে পড়ছে বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সংবিধানের ১৪১ এ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পরামর্শ করে দেশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন।
দেশে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। বুধবার পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪ জন। আজ নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন আরও তিনজন। তবে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন।
এই অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, করোনা মোকেবেলায় অন্যান্য দেশগুলোর মতো বাংলাদেশও কি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারে?
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের সংবিধানে ১৪১ এর ‘ক’ অনুচ্ছেদে জরুরী অবস্থা জারির কথা বলা হয়েছে। জরুরী অবস্থা জারি রাষ্ট্রপতির এখতিয়ার।
সংবিধানের ১৪১ক (১) উপ-অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে যে, ‘রাষ্ট্রপতির নিকট যদি সন্তোষজনকভাবে প্রতীয়মান হয় যে, এমন জরুরি অবস্থা বিদ্যমান রহিয়াছে, যাহাতে যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের দ্বারা বাংলাদেশ বা উহার যে কোন অংশের নিরাপত্তা বা অর্থনৈতিক জীবন বিপদের সম্মুখীন, তাহা হইলে তিনি জরুরি অবস্থা ঘোষণা করিতে পারিবেন: তবে শর্ত থাকে যে, অনুরূপ ঘোষণার বৈধতার জন্য ঘোষণার পূর্বেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি-স্বাক্ষর প্রয়োজন হইবে।’
প্রধানমন্ত্রীর প্রতিস্বাক্ষরের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি দেশে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারেন। তবে বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা জারির যে সাংবাধানিক বিধান, তা খুবই সীমিত। শুধুমাত্র যুদ্ধ বা বহিরাক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের কারণে জরুরী অবস্থা ঘোষণা করা যায়। অন্য কারণে নয়।
বাংলাদেশের জরুরী অবস্থার যে বিধানাবলী সংবিধানে দেয়া হয়েছে, তাতে স্বাস্থ্যগত কারণে বা মহামারীজনিত কারণে জরুরী অবস্থা জারি করার কোন বিধান নেই। কাজেই করোনার কারণে রাষ্ট্রপতি জরুরী অবস্থা ঘোষণা করতে পারবেন কিনা তা নিয়ে আইনজ্ঞদের মধ্যে দ্বিমত রয়েছে। কোন কোন আইনজ্ঞ মনে করছেন যে, অভ্যন্তরীণ গোলযোগটির ব্যাখ্যা সুপ্রীম কোর্ট দিতে পারে। অভ্যন্তরীণ গোলযোগ বলতে করোনা ভাইরাসজনিত মহামারীও হতে পারে এবং জনস্বাস্থ্যের স্বার্থে এটি করতে পারেন। তবে অন্য আইনজ্ঞরা মনে করছেন যে, জরুরী আইনের যে বিধানগুলো বাংলাদেশের সংবিধানের
নবম-ক ভাগে দেওয়া হয়েছে তা সুনির্দিষ্ট স্পষ্ট। এটা শুধু বহিঃ আক্রমণ বা অভ্যন্তরীণ গোলযোগের জন্যই জারি করা হতে পারে। কোনো স্বাস্থ্যগত কারণে বাংলাদেশে জরুরী অবস্থা জারির কোনো সুযোগ নেই। তবে সরকারের উচ্চপর্যায় থেকে বলা হচ্ছে যে, জরুরী অবস্থার কোনো প্রয়োজন নেই। সাধারণ মানুষ তাদের স্বাস্থ্যগত কারণে যেসমস্ত আদেশ নির্দেশ দেওয়া হবে, তা মেনে নেবে। সরকার মনে করছে এখন পর্যন্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। প্রবাসীদের যারা দেশে এসেছেন তারা যদি কঠোরভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলেন, অন্য মানুষের সঙ্গে মেলামেশা না করেন এবং যদি স্বাস্থ্য মন্ত্রণলয়ের গাইডলাইনগুলো অনুসরণ করেন তাহলে পরিস্থিতি এমনিতেই সামাল দেওয়া সম্ভব হবে। এছাড়াও সমাবেশ, ভিড় ইত্যাদি এড়ানোর জন্য সরকার নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে ধাপে ধাপে বেশ কিছু নির্দেশনা দিচ্ছে এবং দেবে। সেই নির্দেশনাগুলো প্রতিপালন করা হলে দেশে জরুরি অবস্থা অবস্থা জারি করা কোনো প্রয়োজন নেই।
এর মধ্যেই সরকার বিভিন্ন বিধি-নিষেধ আরোপ করেছে। ইতিমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো ৩১ শে মার্চ পর্যন্ত বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। যেকোন ধরনের সভা-সমাবেশ এড়িয়ে যাবার সিদ্ধান্ত ইতিমধ্যে নেয়া হয়েছে। গণপরিবহনের ব্যাপারেও খুব শীঘ্রই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে বলে সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের জানিয়েছেন।
আদালত বন্ধ করার ব্যাপারেও প্রধান বিচারপতি জানিয়েছেন যে, তিনি অন্যান্য বিচারপতিদের সঙ্গে আলাপ করে দ্রুত এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।
সাধারণত করোনার ঝুঁকি বাড়ে যদি একই স্থানে লোকজন সমাগম হয়। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র নিয়ম করেছে যে, এক স্থানে ১০ জনের বেশি মানুষ জড়ো হতে পারবে না। ঠিক একইভাবে বাংলাদেশেও লোকজনের সমাগম সীমিত করা এবং অকারণে লোকজন যেন বের না হয় সেজন্য জরুরী অবস্থার প্রয়োজন আছে কিনা- সেই ব্যাপারে নানারকম আলাপ-আলোচনা চলছে।
বিশ্বের ১৭৬টি দেশ ও অঞ্চলে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে। এতে প্রাণ হারিয়েছে ৮ হাজার ৯৬৯ জন, যার অধিকাংশই চীনের নাগরিক। সব মিলিয়ে এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে ২ লাখ ১৯ হাজার ৩৪৫ জন। পরিস্থিতি মোকাবিলায় অনেক দেশেই জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81