02/24/2025
সামি | Published: 2020-03-21 02:30:53
বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস আতঙ্ক। এ পর্যন্ত ২০ জন করোনা রোগী শনাক্ত করা হয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবেলায় সরকার সব ধরনের প্রস্তুতিই গ্রহণ করেছে।
বিশেষ করে বিদেশ থেকে যারা ফেরত এসেছে তাদের হোম কোয়ারেন্টাইন বাধ্যতামূলক করা, পাশাপাশি যারা এখনও বিদেশ থেকে আসছেন তাদের সরাসরি সেনা তত্ত্বাবধানে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে রাখাসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে সরকার।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে দফায় দফায় বৈঠক করে করোনা যেন ছড়িয়ে না পড়ে সে ব্যাপারে নির্দেশনা দিচ্ছেন। আতঙ্কিত না হয়ে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
কিন্তু করোনা নিয়ে সবচেয়ে বড় সংকট তৈরি হয়েছে চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে। ইতিমধ্যেই বেসরকারি এবং সরকারি হাসপাতালগুলো মৌসমী জ্বর, সর্দি জ্বরের মতো সাধারণ জ্বরের চিকিৎসা দিতে অনীহা প্রকাশ করছে এবং তারা চিকিৎসা দিচ্ছে না।
চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে যে, পার্সোনাল প্রটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) না থাকার কারণে তারা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। যেখানে চীন এবং ইউরোপের দেশগুলোর চিকিৎসকরা অভাবনীয় আত্মত্যাগের নজির স্থাপন করেছেন, সেখানে বাংলাদেশের চিকিৎসকদের গড়িমসি, অনীহা, আতঙ্ক জনগণের কাছে মনে নানা প্রশ্ন তুলেছে।
চিকিৎসকদের পিপিই থাকবে কী থাকবে না এটা তাদের বিষয়, কিন্তু অনেক রোগীকে তারা চিকিৎসা দিতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, এটা মেডিকেল ইথিকসের সরাসরি লঙ্ঘন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য সচিব আসাদুল ইসলামের সঙ্গে যোগোযোগ করা হলে তিনি বলেন, কোনো রোগী যেন চিকিৎসাবঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করার জন্য আমরা বারবার চিকিৎসকদের বলছি। প্রয়োজন হলে এ ব্যাপারে আমরা কঠোর হবো।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন যে, চিকিৎসকদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা যেমন জরুরী, তেমনি অসুস্থ মানুষের চিকিৎসা করাও জরুরী।
তিনি জানান, ইতিমধ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের সমস্ত চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীর ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু আমাদের চিকিৎসকদের দায়িত্বশীলতা এবং করোনা মোকাবেলায় তারা কতটুকু ত্যাগ স্বীকার করবে সে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
শুধু করোনার ক্ষেত্রেই নয়, চিকিৎসাব্যবস্থার মেরুদণ্ড চিকিৎসকদের নিয়ে বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় নানা অভিযোগ উঠেছে। চলমান করোনা পরিস্থিতিতে তাদের স্বার্থপরতা এবং তারা যে চিকিৎসকের মহান পেশার আড়ালে নিজেদের ব্যক্তি চিন্তা বড় করে দেখেন তা আবার প্রমাণিত হয়েছে।
বিভিন্ন স্থান থেকে খবর পাওয়া গেছে যে, অনেক চিকিৎসক হোম কোয়ারেন্টাইনের নামে নিজেদের দায়িত্ব থেকে গুঁটিয়ে নিচ্ছেন।
বাংলাদেশের সরকারি চিকিৎসকদের কথা যদি ধরা হয়, তারা সরকারি চাকরি করে আবার প্রাইভেট প্র্যাকটিস করেন। অন্য কোনো সরকারি চাকরিজীবীরা সরকারি চাকরির পাশাপাশি প্রাইভেট প্র্যাকটিস করে না। এটা একমাত্র বাংলাদেশেই সম্ভব।
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে একটা সাধারণ অভিযোগ, হাসপাতালগুলোতে তারা সেবা দেন না। দায়িত্বে অবহেলা করেন। সরকারি হাসপাতালের বদলে ব্যক্তিগত চেম্বার এবং যেখানে রোগী দেখলে বেশি অর্থ পাওয়া যেতে পারে সেই কাজেই তারা বেশি মনোযোগী।
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় অভিযোগ হলো, তারা ইচ্ছেমতো টেস্ট দেন এবং একটা নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সেই টেস্ট করার জন্য বাধ্য করেন। এটার বিনিময়ে তারা কমিশন লাভ করেন।
বাংলাদেশের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে তৃতীয় অভিযোগ হলো, তারা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির ব্র্যান্ড নেইম ব্যবহার করেন জেনেরিক নেইমের বদলে। এবং ওই নির্দিষ্ট ওষুধ কেনার জন্য বাধ্য করেন।
চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে এরকমও অভিযোগ আছে যে, তারা বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানি এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কাছ থেকে মাসোহারা নেন। বৈজ্ঞানিক সম্মেলনসহ চিকিৎসকদের বিভিন্ন সম্মেলনের সব টাকাই জোগায় ওষুধ কোম্পানি আর ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো।
এত অভিযোগের ভীড়েও বাংলাদেশের মানুষের রোগ-শোকের শেষ ভরসা দেশের চিকিৎসকরা। যারা বিত্তবান তার হয়তো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশ যেতে পারেন। কিন্তু সাধারণ নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত জনগণ মানুষের শেষ ভরসা দেশের চিকিৎসকরাই।
সকলেই আশা করেন যে, বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে চিকিৎসকরা তাদের মহান পেশার মর্যাদা পুনরুদ্ধার করবে। এই মহান পেশার মর্যাদা রক্ষার জন্য তারা ব্যক্তি স্বার্থের বদলে রোগীদের চিকিৎসার ব্যাপারে মমত্ববোধ এবং দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবেন। শুধু চিকিৎসকরাই নন, স্বাস্থ্যকর্মীরাও এখন নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া শুরু করেছেন। অজানা আতঙ্কে ভুগছেন তারা।
সাধারণ মানুষ মনে করছে যে, যদি করোনার বিস্তৃতি ঘটে তাহলে এই চিকিৎসক এবং স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যই একটা বড় সংকট সৃষ্টি হবে। যে সংকটটা পরিস্থিতিকে নাজুক করে তুলতে পারে।
Editor & Publisher : Md. Motiur Rahman
Pritam-Zaman Tower, Level 03, Suite No: 401/A, 37/2 Bir Protik Gazi Dastagir Road, Purana Palton, Dhaka-1000
Cell : (+88) 01706 666 716, (+88) 01711 145 898, Phone: +88 02-41051180-81