September 19, 2024, 7:54 am


সামি

Published:
2020-04-11 22:17:49 BdST

করোনার দিনগুলোতে এক মানবিক শিল্পপতির গল্প


নিউজ ডেস্ক 

গোটা বিশ্ব এখন মরনঘাতী করোনার ভয়াল থাবায় নাকাল। পর্যুদস্ত বিশ্ব অর্থনীতি। এমনকি মহামারী করোনার এই বিষাক্ত ছোবলে দিশেহারা বিশ্বের তাবৎ ক্ষমতাধর রাস্ট্রসমূহ।

চিকিৎসক ও বিজ্ঞানীরা হাজারো গবেষণা করেও আবিষ্কার করতে পারছেন না এই রোগের প্রতিষেধক।

সারা বিশ্বের মত এই মহামারী করোনা আঘাত হেনেছে বাংলাদেশেও। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে এই জটিল ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন ৩০ জন। এই রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত মোট শনাক্তকৃত রোগীর সংখ্যা ৪৮২।

এদিকে করোনার কারনে স্থবির হয়ে পড়েছে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতি। এই চরম সংকটে চারিদিকে শুধু দুঃসংবাদের ছড়াছড়ি।

সম্প্রতি হাসপাতালে রোগী না মেলায়  ল্যাব এইডের মালিক তার প্রতিষ্ঠানে কর্মরত চাকুরীজীবিদের অর্ধেক বেতন , ছাটাই করেছেন অনেক কর্মচারী। অন্যদিকে বকেয়া বেতন চাওয়ায় কানিজ গার্মেন্টসে ৮০ জন শ্রমিককে ছাটাই করেছে কর্তৃপক্ষ। এরকম হাজারো সংবাদ কান পাতলেই শোনা যাচ্ছে চারিদিকে।

তবে এতো খারাপ খবরের মাঝেও হঠাৎ শোনা যায় কিছু ব্যতিক্রমী খবর যা আশান্বিত করে মানুষকে। কথায় আছে একেকটি সংকট নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলে দেয়। কথাটি বাস্তবিকই সত্য। যার এক উৎকৃষ্ট উদাহরন নারায়ণগঞ্জের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিক সুবোল চন্দ্র সাহা।

করোনায় যখন দেশের বড় বড় ব্যবসায়ীরা শ্রমিকদের বেতন দিতে গড়িমসি করছেন, কোথাও বা অর্ধেক বেতন দিয়ে দায়িত্ব শেষ করছেন আবার অনেকে শ্রমিক ছাটাই করছেন লোকসানের অজুহাতে; সেখানে এসপি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুবোল সাহা এক বিরল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করলেন।  

গাজীপুরে রয়েছে এসপি গ্রুপের এএমসি নিট কম্পোজিট লিমিটেড ও এসপি ফ্যাশন লিমিটেড নামের দুটি প্রতিষ্ঠান। সেখানে কাজ করেন ৩ হাজার ৩০০ শ্রমিক-কর্মচারী। করোনা ভাইরাস বি’স্তার রোধে গত ২৫ মার্চ থেকে কারখানাটি ছুটি। কিন্তু শ্রমিকদের মার্চ মাসের বেতন-ভাতার পাশাপাশি এপ্রিল মাসেরটাও অগ্রিম দেওয়া হয়েছে।

এতেই শেষ নয়, পরিস্থিতির অবনতি হলে ছুটি বাড়িয়ে দেয়ার পাশাপাশি আসন্ন ঈদুল ফিতরের সময় ঈদ  বিকাশে পাঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা দেন। অন্যদিকে পরিস্থিতি সাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত ঘরে থাকার আহবান জানিয়েছেন এবং চাকুরী নিয়ে দুঃশ্চিন্তা না করতে বলেছেন। প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যত কষ্টই হোক না কেন, তিনি কোন কর্মী ছাটাই করবেন না।

শ্রমিকদের সুর’ক্ষার কথা চিন্তা করেই এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সুবোল চন্দ্র সাহা।

তিনি বলেন, ”ইউরোপের ক্রেতারা তাদের ক্রয়াদেশ স্থ’গিত করেছে। এরপরই আমরা কারখানা বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তবে হাতে পর্যাপ্ত টাকা ছিল না। একটি বেসরকারি ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিয়েছি। তা দিয়ে ৩ হাজার ৩০০ শ্রমিকদের দুই মাসের বেতন–ভাতা পরিশোধ করেছি।”

অগ্রিম বেতন দেওয়ার বিষয়ে এই ব্যবসায়ী বলেন, ”আমি নারায়ণগঞ্জে মাত্র ৩০টি যন্ত্র নিয়ে কারখানা শুরু করেছিলাম। বর্তমানে ৩ হাজার ৩০০ শ্রমিক আমার কারখানায় কাজ করেন। আমার গাড়ি–বাড়ি, সরকারের দেওয়া সিআইপি (বাণিজ্যিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি) মর্যাদা—সবকিছুর পেছনে এই শ্রমিকদের অবদান রয়েছে। এই দুঃসময়ে কীভাবে তাঁদের অবদান অস্বীকার করব?”

শ্রমিকদের হাতে টাকা নেই। মার্চের বেতন খরচ হয়ে গেছে। কারখানা বন্ধ থাকায় এখন তাঁদের সম্মান নিয়ে বেঁচে থাকা কষ্টকর। এপ্রিলের বেতনটা হাতে থাকলে সংকটে পড়বেন না বলে আশা তার।

সরেজমিনে তার কারখানা পরিদর্শন করে শ্রমবান্ধব পরিবেশ এবং শ্রমিকদের জন্য নানা রকম মানবিক সুযোগ সুবিধার দেখা মিলেছে। 

সুবোল সাহা খুব ছোট থেকে অনেক কষ্ট, সংগ্রাম করে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে আজকে একজন বড় শিল্পপতিতে পরিনত হয়েছেন। তাই তিনি বোঝেন শ্রমিকের কষ্ট। 

তার একমাত্র মেয়ে সোমা অস্ট্রেলিয়ার একটি স্কুলে সাধারণ চাকুরী করে। তার বাবার যা আছে, কয়েক পুরুষ বসে খেলেও শেষ হবেনা, তবু সে চাকুরী করে, সাধারণ জীবনযাপন করে। তার একমাত্র ছেলে সজলও সেখানে ব্যবসা করে।

সুবোল সাহা কেবল ব্যবসায়ী নন, একজন দানশীল সমাজসেবকও। তিনি পাবনার ডায়াবেটিক হাসপাতালে অর্ধকোটি টাকা ব্যয় করে একটি ফিজিওথেরাপি সেন্টার করে দিয়েছেন। জেলার চাটমহর, বেলকুচি উপজেলা ও ঢাকার বিভিন্ন স্কুল, আশ্রম ও ধর্মপ্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান প্রদান করেন। দরিদ্র আত্মীয়-স্বজন, এলাকাবাসীর চাকুরী-বিয়ে-চিকিৎসাসহ বিভিন্ন কর্মে সহযোগিতা করেন। অনেক ছেলেমেয়েকে বিদেশে লেখাপড়া করার সুযোগ করে দিয়েছেন।

তাঁর স্ত্রী প্রয়াত সবিতা রাণী সাহাও অনেক পরোপকারী ছিলেন, নীরবে শ্রমিকদের নানাভাবে সহযোগিতা করেছেন।

অনান্য শিল্প ও গার্মেন্টস মালিকরা শ্রমিকদের প্রতি সুবোল সাহার এমন কর্তব্য পালনের বিষয়টি ভাল ভাবে দেখছেন না। এগুলো তাদের জন্য অস্বস্তিকর, কারণ তারা তাদের শ্রমিকদের এমন সুবিধা থেকে বঞ্চিত করেন।

এটাই সত্য যে জীবনের সবটুকু সময় দিয়ে শ্রমিকেরাই এই খাতটাকে টিকিয়ে রেখেছেন। এই খাতের মূল চালিকা শক্তি তাঁরাই। তাই শ্রমিকদের অবশ্যই যথাযথ মূল্যায়ন করতে হবে।

সুবোল চন্দ্র সাহার মতে, তিনি যদি ব্যবস্যা করে শ্রমিকদের প্রতি কর্তব্য পালন করতে পারেন, তাহলে কেন অন্যরা পারেন না?

এফটি টীমের পক্ষ থেকে এই মহৎপ্রাণ মানুষটির প্রতি রইলো বিনম্র শ্রদ্ধা ও গভীর ভালোবাসা

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা