September 19, 2024, 7:51 am


সামিউর রহমান লিপু

Published:
2020-04-13 01:25:05 BdST

চালচুরিঃ আ. লীগের তৃনমূল ধ্বংসের নীলনকশা?


নিউজ ডেস্ক 

সাম্প্রতিক করোনা ভাইরাস নিয়ে যেমন প্রচার-প্রচারণা, জনমনে আতঙ্ক এবং গণমাধ্যমজুড়ে করোনার সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে ঠিক তেমনি সমান্তরালভাবে চলছে দেশের বিভিন্ন স্থানে চালচুরির সংবাদ ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে প্রচার করা।

আর এ সমস্ত সংবাদে কৌশলে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা –কর্মীদের জড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

দুঃসম্পর্কের আত্মীয় হলেও বলা হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগের অমুক নেতার আত্মীয় গম চুরি করেছেন, চাল চুরি করেছেন। সত্য- মিথ্যা যাচাই না করে এই চুরির ঘটনাগুলোকে ফুলে ফেঁপে তৈরি করা হচ্ছে।

কিছু কিছু এলাকায় যে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না, তা না। কিন্তু অধিকাংশ এলাকায় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা সরকারের দিকে না তাকিয়ে নিজেদের স্বউদ্যোগে গরীব মানুষদের সাহায্যের জন্য এগিয়ে আসছেন। অনেক এমপিদের দেখা যাচ্ছে যে তারা প্রতিদিন নিয়ম করে নির্দিষ্টসংখ্যক মানুষকে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাবার সরবরাহ করছেন। অনেক এলাকায় সরকারের সঙ্গে সহযোগিতা করছে প্রশাসন।

এখানে বিচ্ছিন্ন কিছু কিছু ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে দেখানো এবং সেটার সঙ্গে আওয়ামী লীগকে জড়িত করার একটা প্রচেষ্টা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।

তাই প্রশ্ন উঠেছে যে এটা কি সত্যি চাল চুরির ঘটনা, নাকি আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে ধ্বংস করার নীল নকশা?

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যে দীর্ঘদিন ধরে জনপ্রিয় দল হিসেবে টিকে আছে এবং জনগণের আস্থা নিয়ে আছে, তার প্রধান কারণ হলো দলের তৃণমূল। যেকোনো সংকটে আওয়ামী লীগের তৃণমূলই সবসময় সাহসে ভর করে সামনে এসে দাঁড়িয়েছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা যখন পথভ্রষ্ট হয়েছেন, যখন তারা আপসকামিতা করেছেন, যখন তারা সুবিধাবাদী চরিত্র ধারণ করেছেন, তখনও তৃণমূল দৃঢ়চিত্ত ছিল।

বেশি দূরে যাওয়ার দরকার নাই। আমরা যদি ওয়ান ইলেভেনের দিকেই তাকাই, তাহলে দেখতে পাই সে সময় আওয়ামী লীগের তৃণমূলের জন্যই শেখ হাসিনা কারাগার থেকে বেরুতে পেরেছিলেন এবং দলের তার কর্তৃত্ব নিরঙ্কুশ করতে পেরেছিলেন। সেজন্যই তৃণমূল হলো আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় শক্তি। এটা সবসময়ই বলা হয়। আর তাই আমাদের মধ্যে প্রশ্ন উঠতেই পারে যে, করোনা মোকাবেলার সময় আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে ধ্বংস করার কোনো নীলনকশা হচ্ছে না তো?

এমনিতেই আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি গত ১১ বছরে ক্রমশ ক্ষত বিক্ষত এবং ভঙ্গুর হয়ে পড়েছে। একদিকে আওয়ামী লীগে নানা অনুপ্রবেশকারীদের অত্যাচার, অন্যদিকে প্রশাসনের আওয়ামী লীগার হয়ে যাওয়া এবং তারাই যেন রাজনৈতিক দলের অবয়ব পেয়ে আওয়ামী লীগকেই গ্রাস করে ফেলছে। তাই তৃণমূলই এখন আওয়ামী লীগের একমাত্র শক্তি। সে শক্তিকে নষ্ট করার জন্যই প্রশাসনের একটি অংশ উঠে পড়ে লেগেছে কিনা সেই প্রশ্নই এখন উঠতে পারে।

কারণ আমরা দেখেছি, যে ঘটনাগুলোতে আওয়ামী লীগকে জড়ানো হয়েছে তার অনেকগুলোতেই বাস্তবে দলের কোনো নেতা-কর্মী সেভাবে জড়িত ছিল না।

আমরা উদাহরণ দিতে পারি কিশোরগঞ্জের তড়াইল উপজেলায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচীর ১০ টাকা কেজির ৬০ বস্তা চালসহ দিঘদাইর ইউনিয়নের ডিলার মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে মোস্তফাকে আটক করে পুলিশ। মোস্তফাকে বলা হচ্ছিল দিঘদাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি। কিন্তু আসলে দেখা যাচ্ছে যে তিনি দিঘদাই ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের কোনো নেতা না।

একই রকম ঘটনা ঘটেছে ঠাকুরগাঁয়ের বালিয়াডাঙি উপজেলায়। সেখানে ৬৩০ বস্তা চাল উদ্ধার করেছে উপজেলা প্রশাসন। অভিযুক্ত আমরুল ইসলামকে বলা হচ্ছিল আওয়ামী লীগের নেতা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, বাস্তবে তিনি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত নন।

এরকম অনেক এলাকার উদাহরণ দেওয়া যায়, যেখানে জোর করে চালচোরকে আওয়ামী লীগার বলা হচ্ছে। অথচ যে জায়গাগুলোতে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতা কর্মীরা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন তাদের কথা গণমাধ্যমে আসছে না।

আমরা জানি যে, বাংলাদেশের প্রশাসন অনেক বেশি আওয়ামী লীগার হয়ে গেছে। তাদের আওয়ামী লীগ আত্মীকরণের পথে প্রধান বাঁধা হলো তৃণমূল।

আমরা লক্ষ্য করেছি যে, গত ১০ বছরে পরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের অঙ্গ সহযোগী সংগঠনগুলোকে কলুষিত, কলংকিত করে অকেজো করে দেওয়া হয়েছিল।

বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগকে অকার্যকর প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা হয়েছে। ছাত্রলীগের অবস্থাও তাই। স্বেচ্ছাসেবকলীগকেও নানাভাবে অভিযুক্ত করে ঘরবন্দি করে রাখা হয়েছে। এখন শুধুমাত্র তৃণমূলের শক্তিতে আওয়ামী লীগ যেটুকু নিঃশ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে।

তাই আমাদেরকে ভাবতে হবে, এটা কোনো পরিকল্পিত নীল নকশা কিনা। যে নকশায় আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য তৃণমূলকেও কলঙ্কিত করা হবে।

কারণ আওয়ামী লীগের তৃণমূলকে যদি কলঙ্কিত করা যায় এবং তৃণমূলকে যদি ধ্বংস করা যায়, তাহলে আওয়ামী লীগ এমনিই ভঙ্গুর অবস্থায় পড়বে। সেই পরিকল্পনার বাস্তবায়নই চলছে কিনা তা একটু ভেবে দেখা দরকার।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা