March 29, 2024, 3:57 pm


Sumaiya Sultana

Published:
2020-05-19 18:18:29 BdST

করোনাকালিন সংকটে মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা


সাবধান থাকুন আতংকিত নয়, যদিও সারাবিশ্ব আজ থমকে গেছে করোনার ভয়াবহ প্রতাপের কাছে, তবুও পরাজিত বা আতংকিত হওয়া যাবেনা কোনভাবেই। আতংক কখনোই সুফল বয়ে আনতে পারেনা বরং এই আতংক আপনার মস্তিষ্কের চিন্তাশক্তি নষ্ট করে,নষ্ট করে আমাদের শরীরের অটোমেকানিজম। আতংক বা ভয় থেকে নিঃসরিত হওয়া হরমোন মানব শরীরে মারাত্মক প্রভাব ফেলে। আতংকিত হওয়া মানেই শরীরে হরমোনের পরিবর্তন, যা মানব দেহের স্বাভাবিক ইমিউনিটি ব্যবস্থাকে দূর্বল করে। দুঃশ্চিন্তামুক্ত থাকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। ক্রনিক দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ততার ফলে কর্টিসল নামক হরমোন সহ আরো কিছু হরমোন দেহের সম্মুখ অটোমেকানিজমকে ভোতা করে দিতে পারে। ক্রনিক দুঃশ্চিন্তা-উদ্বিগ্নতা, হতাশা, পরিপাকতন্ত্র সমস্যা, মাথাব্যথা, হ্রদরোগ, নিদ্রাহীনতা, ওবেসিটি বা দেহের স্থুলতা, স্মৃতিশক্তিলোপ বা একাগ্রতাহীনতা ইত্যাদি থেকে দুঃশ্চিন্তা আস্তে আস্তে ক্রনিকে রুপ নেয়। তাই এই করোনাকালিন সময়ে সাবধানতা অবলম্বন করে আতংক ও উত্তেজনা পরিহার করা বাঞ্চনীয়। মানুষের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা তার দেহে সরাসরিই প্রভাব ফেলে। কার্যতই, দিনভর দুঃচিন্তা বা আতংকিত থাকলে, লাভবান তো নয়ই, উপরন্তু সমস্যা অধিকতর ঘনীভুত হবে। ঘরেই থাকুন, বাসায় থাকুন। ঘণ্টায় ঘণ্টায় করোনা রোগীর সংখ্যা, তথ্য-উপাত্ত, মৃত্যুহার-এসব জানার চেষ্ঠা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়, মস্তিষ্কের বিশ্রাম অতীব জরুরী তার কর্মক্ষমতা, চিন্তাশক্তির স্বাভাবিকতার জন্যই। দ্বিতীয়ত, মেডিটেশন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ধর্মানুযায়ী পবিত্র কোরান, বাইবেল, গীতা পড়া যেতে পারে। নিয়মিত প্রার্থনা অসম্ভবকে সাধন করার শক্তি রাখে। মানবজাতি ও প্রিয়জন সবার জন্যই প্রার্থনা হতে পারে। চোখ বুজে মনঃসংযোগ করা যেতে পারে। এটা মানবমনে একধরনের প্রশান্তি দেয়, মনকুঠুরীতে তৌরী হয় এক বিশেষ ধরনের হিলিং পাওয়ার, যা বডি ইমিউনিটি বাড়াতে সহায়তা করে। আলাদা করে মেডিটেশন করা যেতে পারে। মেডিটেশন দুঃশ্চিন্তা-হতাশা কমায়, মানসিক স্বাস্ত্য ঠিক রাখে। মনঃসংযোগ বাড়ায়-এমন কাজ শারীরিক ভাবে সুস্থ থাকতে সাহায্য করে। ঘুম অন্যতম অপরিহার্য বিষয়। গভীরনিদ্রা দেহ ও মনকে সুস্থ ও সতেজ রাখে। ঘুমানোর আগে হালকা স্ট্রেস রিলিফ বা ডিপ স্লিপ মিউজিক শোনা যেতে পারে। ব্যায়ামের প্রয়োজনীয়তার কথা ভুললে চলবে না। বাসার ছাদে বা বাগানে হালকা ফ্রিহ্যান্ড এক্সারসাইজ করা বেশ জরুরী।২০/৩০ মিনিট হাটাহাটি এবং ১০ মিনিটের একটি ইয়োগা সেশন শরীর ও মনের জন্য অসাধ্য সাধন করতে পারে। বাসায় যদি পোষা প্রানী থাকে,সেও সংগী হতে দোষ কি তাতে। বাড়ির বয়স্ক এবং বাচ্চারাও যোগ দিলে পরে, এটি একটি নিয়মিত আনন্দময় অনুসংগ হয়ে যেতে পারে। বাসার সব সদস্যদের কিছু কিছু কাজে নিয়োজিত করা যেতে পারে। এই করোনাকালিন সময়ে জীবনের ফেলে রাখা কাজগুলো গুছিয়ে রাখা যেতে পারে। হয়ত আধাসমাপ্ত কোন উপন্যাস বা গল্পের বই শোকেসের কোনে পরে আছে। তুমুল উৎসাহে কেনা সেই প্রিয় বইটি ধুলোর আস্তর থেকে উদ্ধার করা যেতে পারে। উয়িশ লিস্টে থাকা কবিতা, সাহিত্য, নিতান্তই কাজের, চাকরি সংক্রান্ত বইগুলো পড়ার এইতো উপযুক্ত সময়। ভাললাগার যেকোন বই-ই হতে পারে এই নিঃসীম নিস্তব্ধতার নির্মোহ সংগী। দেখে ফেলতে পারেন মন ছুয়ে যাওয়া নাটক বা মুভি, হতে পারে কোন ক্ল্যাসিক মুভি, যা দেখার জন্য এতোদিন সময় করে উঠা হয়নি হয়তো । বাচ্চাদের নিয়েও শিশু চলচ্চিত্র দেখা যেতে পারে।নিজের শখের বাগানের যত্ন নেয়া যেতে পারে। আপনার নরম কোমল হাতের স্পর্শ পেয়ে তাদের মনও সজীব হয়ে যেতে পারে। এইসব কাজেই পরিবারের সদস্যদের অংশীদার করা আবশ্যক। ঢিলেঢালা সম্পর্ক মজবুত করে মেরামতের এইতো সময়। মানসিক ও দৈহিক স্বাস্থ্যের পাশাপাশি খাদ্যাভ্যাসের সমন্বয় অত্যন্ত জরুরী। করোনা প্রতিরোধে সুষম খাদ্য গ্রহন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্যতালিকায় আমিষ, শর্করা, ফ্যাট, ভিটামিন ও মিনারেলের সমন্বয় থাকতে হবে। চিনি পরিহার করে মধু খাওয়া যেতে পারে।সাধারন কার্বোহাইড্রেট যেমন আটা, ময়দা,বিস্কুট, পাস্তা জাতীয় খাবার পরিহার করা প্রয়োজন। এসবের পরিবর্তে লাল চালের ভাত, লাল চিনি, মধু, খেজুর, ফল, শাক সবজি, এবং প্রচুর পানি পান করুন। ডাবের পানি (পরিমিত পরিমাণে), ফলের জুস( চিনি লবন ছাড়া) খাওয়া যেতে পারে। রেড মিট, যেমন, গরু ও খাসীর মাংস জাতীয় খাবার পরিহার করে মাছ, মুরগী ও ডিম আমিষের ভাল উৎস হতে পারে।প্রচুর সবজি খেতে হবে। তৈলাক্ত খাবার পরিহার করতে হবে। খালি পেটে একটু আদা দিয়ে কাচাছোলা খুবই স্বাস্থ্যকর।যতটা পারা যায় রিফাইন্ড খাবার পরিহার করা প্রয়োজন। বাইরের খাবার না খাওয়াই উত্তম। বয়স্ক ও বাচ্চাদের জন্য মুরগীর স্যুপ হতে পারে আদর্শ ডায়েট। আমাদের খাদ্যাভ্যাসে আমূল পরিবর্তন আনা একান্ত প্রয়োজন। বডিটাইপ, ওজন,উচ্চতা অনুযায়ী খাবার গ্রহন করা অতীব জরুরী। আরো স্মরণীয় যে, খাবারের অপচয় রোধ করা জীবনবোধের অনন্য দিক। বাসায় খাবার উচ্ছিষ্ট না ফেলে পরিমান মতো রান্না করা উন্নত রুচিবোধেরই পরিচায়ক। উদরপূর্তি খাবার তো নয়ই। বাজারের বর্ধিত অর্থ সাশ্রয় করে সাহায্যের হাতকে প্রশস্ত করা এই সময়ের দাবী। অসহায়, দুস্থ মানুষের মুখে দুমুঠো অন্ন যে কারোরই আত্মায় বয়ে আনবে নির্মল প্রশান্তি। সুনাগরিক হয়ে উঠার এ এক অনন্য সুযোগ । আমাদের সবার নৈতিক দ্বায়িত্ব করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসা। এটি একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তাই বিশ্বের প্রতিটি নাগরিকের উচিৎ হবে তার আশেপাশের মানুষগুলোকে ভাল রাখা, আমাদের এই ভূবন কে ভালবাসাময় করে তোলা। করোনা সংকটে আমাদের মানবিক মূল্যবোধ অধিকতর জাগ্রত হোক, এখানেই আমাদের সার্থকতা, পরাজিত হওয়ায় নয়। নিজের স্বাস্থ্য, দেহ, মন, প্রশান্ত আত্মা ও আশপাশের কল্যাণ নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে আমরা নিশ্চয়ই করোনা বিরুদ্ধে বিজয়ী হবো- সেই প্রত্যাশায়।

• লেখকঃ চীফ কোর্ডিনেটর,মিডিয়া এন্ড কমিউনিকেশনস, বেটার বাংলাদেশ ফাউন্ডেশন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা