September 20, 2024, 4:40 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-08-17 07:30:08 BdST

পিতা-পুত্রের সঙ্গে মিলে সাহেদের আরেক অপকর্মের আদ্যোপান্ত


রিজেন্ট গ্রুপের চেয়ারম্যান সাহেদ করিম ও আরেক অভিযুক্ত দুর্ণীতিবাজ সাবেক ফারমার্স ব্যাংকের (বর্তমানে পদ্মা ব্যাংক) পরিচালক মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতীর সহায়তায় ঋণের নামে প্রায় পৌনে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

দুর্ণীতি দমন কমিশনের (দুদক) অনুসন্ধানে এর প্রমাণ মিলেছে। সাহেদ রিজেন্ট হাসপাতালের এমআরআই মেশিন কেনার জন্য দুই কোটি টাকার ঋণের জন্য পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখায় আবেদন করেন ২০১৫ সালের ১১ জানুয়রি। ২০১৫ সালের ১৯ জানুয়ারি পদ্মা ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে ওই মেশিন কেনার জন্য সরবরাহকারী হিসেবে আর্বটস মেডিকেল ইকুইপমেন্টের’ নামে দুই কোটি টাকার পে-অর্ডার ইস্যু করা হয়।

দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদন দেখা যায় যে, ওই মেশিনটি ক্রয়ের জন্য ২ কোটি টাকার পে-অর্ডারটি শাহ্জালাল ইসলামী ব্যাংকের উত্তরা মহিলা শাখায় ক্লিয়ারিংয়ের মাধ্যমে স্থানান্তর করা হয়। কিন্তু মেশিন কেনা হয়েছে এমন কোন নথিপত্র ব্যাংকে দাখিল করা হয়নি এবং ঋণের বিপরীতে জামানত রাখা হয়নি। ওই অর্থ এমআরআই মেশিন ক্রয় না করে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়েছে বলে প্রমান পাওয়া যায়।

জানা গেছে, রিজেন্ট হাসপাতালের সঙ্গে বাবুল চিশতী এবং তার পুত্র রাশেদুল হক চিশতীর কোন ব্যবসায়িক সম্পর্ক নেই। অথচ সাহেদের কাছ থেকে রাশেদুল হক চিশতীর বকশীগঞ্জ জুট মিলের হিসাবে ৩৫ লাখ টাকা গ্রহণ ও তুলে নেওয়া হয়। এতে প্রমাণ মেলে যে, বাবুল চিশতী ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী অর্থের বিনিময়ে সাহেদকে অবৈধভাবে ঋণ পাইয়ে দেন যা, দুদকের অনুসন্ধান প্রতিবেদনে এসেছে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আসামিরা অসৎ উদ্দেশ্যে ক্ষমতার অপব্যবহার করে পদ্মা ব্যাংকের গুলশান করপোরেট শাখা থেকে ১ কোটি টাকা ঋণ নেন। ১৫ জুলাই পর্যন্ত যার স্থিতি ২ কোটি ৭১ লাখ টাকা। আসামিরা এ অর্থ স্থানান্তর, রূপান্তরের মাধ্যমে আত্মসাৎ করেন।

অপরদিকে ওই দুই কোটি টাকার ঋণ মঞ্জুর করার আগেই সাহেদ ঘুষ হিসেবে পদ্মা ব্যাংকের বকশীগঞ্জ শাখায় বাবুল চিশতীর মালিকানাধীন বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের নামে খোলা ০১১১১০০০০২৩৬৩ নং হিসাবে ৩৫লক্ষ টাকা জমা করেন। জমা রশিদ নং ৩০। পরে জমাকৃত ওই টাকা ২০১৫ সালের ১৮ ও ২০ জানুয়ারি উত্তোলন করেন বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের এমডি ও বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল হক চিশতী।

এই রাশেদুল হক চিশতীও পদ্মা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দায়ের করা মামলার আসামী।

দুদক জানায়, ঘুষের ৩৫ লক্ষ টাকা বাবুল চিশতীর ছেলে রাশেদুল চিশতী বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্স লিমিটেডের হিসাব থেকে উত্তোলন করলেও ঘুষ গ্রহণের পেছনে সব কলকাঠি নেড়েছেন বাবুল চিশতী। তিনি বকশীগঞ্জ জুট স্পিনার্সের চেয়ারম্যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনুসন্ধানের সঙ্গে যুক্ত দুদকের এক কর্মকর্তা বলেন, চোর চেনে চোরকে। সাহেদ খুঁজে খুঁজে সেই বাবুল চিশতীকে বের করেছেন। কাজেও লাগিয়েছেন। পদ্মা ব্যাংকের বড় অঙ্কের অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে দুদকের বিভিন্ন মামলায় বর্তমানে বাবুল চিশতী ও তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতী জেলে আছেন।

এর আগে ২৭ জুলাই দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ বাদী হয়ে সাহেদসহ চার জনের বিরুদ্ধে দুদকের সমন্বিত জেলা কার্যালয় ঢাকা-১ এ মামলাটি করেন।

পরদিন ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক-কে এম ইমরুল কায়েশ মামলার এজাহার গ্রহণ করে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য ১৬ আগষ্ট দিন ধার্য করেন।

৬ আগষ্ট, বৃহস্পতিবার ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েশের আদালতে পদ্মা ব্যাংকের অর্থ আত্মসাতের মামলায় রিজেন্ট গ্রুপ ও রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান সাহেদ করীমকে ১০ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দুদকের উপসহকারী পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান মিরাজ।

বিচারক আসামির উপস্থিতিতে রিমান্ড শুনানির জন্য ১০ আগষ্ট দিন ধার্য করেন। ১০ আগষ্ট, সোমবার শুনানির শেষে সাহেদ করিমকে ৭ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত। একই দিনে রাশেদুল হক চিশতী দুদকে দায়েরকৃত মামলা নং. ২০৯/২০১৯, জামিন এর আবেদন করেন এবং বিজ্ঞ আদালত-এ জামিন আবেদন না শুনে এ বছরের ১৭ আগষ্ট শুনানির দিন ধার্য্য করেন। প্রতারক সাহেদের অপর দুটি মামলায় মাহবুবুল হক চিশতী ওরফে বাবুল চিশতী এবং তার ছেলে রাশেদুল হক চিশতীকে দুদকে দায়েরকৃত মামলা মেট্রো সেশন নং-৬৪/২০২০ এবং ৬৯/২০২০ এ দুদক আদালত বরাবর শোন এ্যারেষ্ট এর আবেদন করলে মেট্রো সেশন জজ জনাব ইমরুল কায়েস আজ আবেদনটি মঞ্জুর করেন।

অপরদিকে, দুদকের দায়েকৃত অপর একটি মামলায় আজ মামলার প্রধান আসামী রাশেদুল হক চিশতীসহ অপর আসামীর বিরুদ্ধে কগনিজেন্স হিয়ারিং এর জন্য ধার্য্য ছিল। দুদকের পক্ষে জনাব খুরশীদ আলম খান এতে শুনানি করেন। তার সাথে ছিলেন দুদকের আর এক আইনজীবি জনাব আহসান উল্লাহ।

ফাহমিদা কাদের, সিনিয়র স্পেশাল জজ, টাঙ্গাইল; আইনজীবিদের বক্তব্য শোনেন এবং কগনিজেন্স না নিয়ে পরবর্তী তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ধার্য করেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা