March 29, 2024, 4:07 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-11-16 22:44:42 BdST

চীনের নেতৃত্বে নতুন বাণিজ্য জোট: কি পাবে বাংলাদেশ?


বিশ্ব বাণিজ্যে যোগ হয়েছে এক নতুন মাত্রা। এসেছে এক নতুন জোট। রোববার অ্যাসোসিয়েশন অব সাউথইস্ট এশিয়ান ন্যাশনস, আসিয়ানের সম্মেলনে স্বাক্ষরিত হয় এই রিজিওনাল কম্প্রিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ ,আরসিইপি চুক্তি।

আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ ছাড়াও এই জোটের অন্তর্ভুক্ত চীন, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড।

এই জোটের কারণে এশিয়ায় বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীনের সঙ্গে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, জাপান ও কোরিয়ার বাণিজ্যের পথ আরও সুগম হবে। এ অঞ্চলের বাণিজ্যিক নীতি প্রণয়নেও এগিয়ে থাকবে চীন।

জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে বাণিজ্যিক শুল্ক কমানোর লক্ষ্যেই এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এই জোটভুক্ত দেশগুলোর অর্থনৈতিক আয়তন বৈশ্বিক অর্থনীতির ৩০ শতাংশ।

কিন্তু এই জোট থেকে কি সুবিধা পাবে বাংলাদেশ, সে প্রশ্ন না চাইতেও সামনে এসেই যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চীন সমর্থিত ১৫টি এশিয়া ও প্যাসিফিক অঞ্চলের অর্থনীতির সমন্বয়ে গঠিত নতুন এই জোট বিশ্ববাজারে বাংলাদেশকে নতুন এক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি দাঁড় করাবে।

বাংলাদেশের মোট রপ্তানির ৮৫ শতাংশই তৈরি পোশাক খাত। আর বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের এই রপ্তানি পণ্যটির প্রধান প্রতিদ্বন্দী ভিয়েতনাম।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলডিসিভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ এখন চীন, কোরিয়া, অস্ট্রেলিয়াসহ অন্যান্য বড় বাজারে বেশকিছু সুবিধা পায়। স্বল্পোন্নত দেশগুলোর তালিকা থেকে বেরিয়ে আসলে বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত সুবিধাসহ অনেক সুযোগ হারাবে। আর এই চুক্তির আওতায় ভিয়েতনামসহ বাংলাদেশের প্রতিদ্বন্দী অন্য দেশগুলো শুল্ক বাধা দূর করে সেই সুযোগ কাজে লাগাবে।

আরসিইপি চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী দেশগুলির মধ্যে বাংলাদেশ জাপানে সর্বোচ্চ ১২০ কোটি ডলার এবং অস্ট্রেলিয়ায় ৬ কোটি ৮০ লাখ ডলারের পণ্য রফতানি করে। স্বল্পোন্নত দেশ হিসাবে বাংলাদেশ এখন দুই দেশের শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে।

আসিয়ানভুক্ত দেশ হিসেবে বাংলাদেশ চীনের বাজারে বছরে মাত্র ৬০ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করে। যেখানে ভিয়েতনাম করে বছরে ৬ হাজার ৪শ কোটি ডলার।

এছাড়া বাংলাদেশ দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া এবং সিঙ্গাপুরে বিপুল সংখ্যক পণ্য রফতানি করে। তবে আরসিইপি চুক্তির কারণে ভিয়েতনাম এই দেশগুলিতেও অতিরিক্ত সুবিধা পাবে।

পোশাক ছাড়াও ভিয়েতনাম বিশ্ব বাণিজ্যে বাংলাদেশের চেয়ে অনেক এগিয়ে। ২০১৯ সালে ভিয়েতনামের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিলো ৫২ হাজার কোটি ডলার। এর মধ্যে শুধু রফতানির পরিমাণ ছিলো সাড়ে ২৬ হাজার কোটি ডলার। বিপরীতে, গত বছর বাংলাদেশের বিশ্ব বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল মাত্র ১০ হাজার কোটি ডলার এবং আর রফতানি হয়েছিল মাত্র ৪ হাজার কোটি ডলার।

গত দুই দশকে, ভিয়েতনাম ট্রান্স-প্যাসিফিক অংশীদারিত্বসহ বেশকিছু বাণিজ্য চুক্তি করেছে। যার মধ্যে ১৩ টি কার্যকর হয়েছে এবং বেশিরভাগ দেশেই এলডিসি সুবিধার পাশাপাশি শুল্কমুক্ত সুবিধা ভোগ করছে দেশটি।

উল্টোদিকে বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে ১৩টি বাণিজ্য চুক্তি বাস্তবায়নে কাজ করে আসছে। যার মধ্যে মাত্র তিনটির সুফল তারা ভোগ করতে পারছে।

এই চুক্তির লক্ষ্য হল শুল্ক কমানো, পরিষেবাগুলিতে বাণিজ্য উন্মুক্ত করা এবং উদীয়মান অর্থনীতিগুলিকে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলির সাথে যোগাযোগ রাখতে সহায়তা করার জন্য বিনিয়োগের প্রচার করা। বিশেষ করে, আরসিইপি সদস্যভুক্ত প্রতিটি দেশকে ব্লকের মধ্যে যে কোনও জায়গায় পণ্য রফতানি করার অনুমতি দিয়ে সংস্থাগুলির জন্য ব্যয় এবং সময় কমাতে সহায়তা করবে।

কিন্তু অচিরেই স্বল্পোন্নত থেকে উন্নত দেশের তকমা লাগতে যাওয়া বাংলাদেশ এই সুবিধার সবটুকু ভোগ করতে পারবে না। উল্টো নতুন এই জোট গঠনের ফলে পোশাক রপ্তানিসহ অন্যান্য বিষয়েও বাংলাদেশ এখন ভিয়েতনামের সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতার মুখে পড়বে বলেই মনে করা হচ্ছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা