April 26, 2024, 1:03 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-11-19 19:59:12 BdST

পবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁস৩ বছরেও আলোর মুখ দেখেনি তদন্ত প্রতিবেদন


পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসের ঘটনায় গঠিত কমিটির তদন্ত গত তিন বছরেও শেষ হয়নি।

এ ঘটনায় তদন্ত কমিটির সদস্যসচিবের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান নিজেও ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। তবে সদস্যসচিব তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি না করার পেছনে কমিটির অন্য সদস্যদের অসহযোগিতার কথা বলছেন।

অভিযোগ আছে, প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্ত পবিপ্রবির একজন সহকারী রেজিস্ট্রার তদন্ত কার্যক্রমকে ধামাচাপা দেয়ার ক্ষেত্রে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগানোর চেষ্টা করছেন। অবশ্য তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি না হওয়ার পেছনে করোনাকে অন্যতম প্রধান কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন অর রশিদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের ভর্তি পরীক্ষায় পর পর ৪ বছর প্রশ্নফাঁসের ঘটনা ঘটে। এর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় এক শিক্ষকসহ প্রশাসনের কয়েকজন কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এই প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে অভিযুক্তরা কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন।

তাদের মধ্যে সংস্থাপন শাখার দুজন সহকারী রেজিস্ট্রার জড়িত বলে জানা গেছে। এছাড়া কাউন্সিল শাখার একজন সহকারী রেজিস্ট্রার ও পবিপ্রবিতে কর্মরত একজন প্রকৌশলী প্রশ্নফাঁসে জড়িত থাকার তথ্য মিলেছে।

অভিযোগ রয়েছে, প্রশ্নফাঁসের মাধ্যমে কোটি টাকা অবৈধ পন্থায় উপার্জন করেছেন এমন একজন সহকারী রেজিস্ট্রার পটুয়াখালীর দুমকিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পূবপাশে পীরতলা বাজারে বিলাসবহুল বহুতল ভবন নির্মাণ করেছেন। অপর একজনের দুমকি থানার কাছে ৬তলার ফাউন্ডেশনে ভবন নির্মাণাধীন। ওই তিন সহকারী রেজিস্ট্রার আগামী মাসে চাকরিতে পদোন্নতিও পেতে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে।

প্রশ্নফাঁস এবং তদন্ত কার্যক্রম ধামাচাপা দেয়ার ক্ষেত্রে অভিযুক্তরা সংঘবদ্ধ হয়ে প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন বলেও জানা গেছে।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, পবিপ্রবিতে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগ তদন্তে ২০১৭ সালের শেষের দিকে ওই কমিটি গঠন করা হয়। কমিটির চেয়ারম্যান করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমী বিভাগের প্রধান প্রফেসর ড. আ ক ম মোস্তফা জামানকে। ওই তদন্ত কমিটির সদস্যসচিবের দায়িত্বে রয়েছেন একই বিভাগের প্রফেসর পুর্নেন্দু বিশ্বাস।

এখানে উল্লেখ্য, একই ঘটনায় এর আগে আরও একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই কমিটিতেও প্রফেসর পুর্নেন্দু বিশ্বাস ছিলেন। কিন্তু বর্তমান উপাচার্য দায়িত্ব গ্রহণের পর আগের কমিটির তদন্তে প্রতিবেদনে সন্তুষ্ট হতে না পেরে এই কমিটি করেছিলেন ৩ বছর আগে।

তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে, দু'বছর আগে তদন্ত কমিটির একটি বৈঠকে হয়। সেই বৈঠকে তদন্তে প্রাপ্ত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে কমিটির সদস্যসচিব প্রফেসর পুর্নেন্দু নিজেই দায়িত্ব নেন। এরপর দু'ছর কেটে গেলেও এ পর্যন্ত তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি।

সূত্র বলছে, বর্তমান উপাচার্য ড. হারুন অর রশিদের মেয়াদ আছে আর মাত্র দেড় মাস। আগামী জানুয়ারির ৬ তারিখে তিনি অবসরে যাবেন। এর আগেই কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে প্রশ্নফাঁসের অভিযোগের তদন্ত ফাইল গায়েব করে দেয়ার জোর তৎপরতা চালাচ্ছে প্রশ্নফাঁসে অভিযুক্তচক্র।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তদন্ত কমিটির চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোস্তফা জামান বলেন, তিন বছরেও তদন্ত শেষ করতে না পারা সত্যিই হতাশার। দু'বছর আগে কমিটির সদস্যসচিব নিজেই বৈঠকের সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে খসড়া প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্ব নেন। অদ্যবধি তিনি সেই প্রতিবেদন তৈরি করে জমা দেননি। একাধিকবার তাকে তাগাদা দেয়া হয়েছে। তারপরও কাজ হয়নি।

অবশ্য সদস্যসচিব পুর্নেন্দু বিশ্বাস বলেছেন ভিন্ন কথা। ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‌'অনেককে ডাকা হয়েছিল জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। কিন্তু কেউ কোনও তথ্য প্রমাণ দিতে পারেনি।'

যদিও তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেয়া সহকারী রেজিস্ট্রার সাইদুর রহমান জুয়েল বলেছেন, আমার কাছে প্রশ্নফাঁসের অডিও রেকর্ড আছে। আমি সেই রেকর্ড ও লিখিত অভিযোগ কমিটির কাছে জমা দিয়েছি। সেই রিসিপ কপিও আমার কাছে আছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পবিপ্রবি'র উপাচার্য প্রফেসর ড. হারুন-অর-রশিদ বলেন, করোনার কারণে একবছর ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ। এ কারণে তদন্ত প্রতিবেদন তৈরিতে বিলম্ব হচ্ছে। তবে তদন্ত শেষ করে প্রতিবেদন জমা দেয়ার জন্য লিখিত নোটিশ করে তার পক্ষ থেকে কমিটিকে তাগাদা দেয়া হয়েছে বলেও জানান উপাচার্য।

তিনি আরও বলেন, আমার দায়িত্ব শেষ হলেও তদন্ত একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা অব্যাহত থাকবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা