September 20, 2024, 10:02 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-12-10 22:22:42 BdST

পদ্মার দুই তীরে স্বপ্নের সংযোগ


অবশেষে সত্যি হলো স্বপ্ন। দৃশ্যমান হলে পুরো পদ্মা সেতু। সংযুক্ত হলো পদ্মার এপার-ওপার, মুন্সিগঞ্জের মাওয়া থেকে শরীয়তপুরের জাজিরা। সবগুলো স্প্যান বসাতে লাগলো ৩ বছরের বেশি সময়।

২০২২ সালের ২৬ মার্চ সেতু উদ্বোধনের পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

পদ্মা নদীতে এখন দৃশ্যমান পদ্মাসেতুর ৬.১৫ কিলোমিটার। বৃহস্পতিবার সকালে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া প্রান্তে সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর বসানো হয়েছে ৪১তম, অর্থাৎ সবশেষ স্প্যানটি। ৪০তম স্প্যান বসানোর ৬ দিনের মাথায় বসানো হলো এ স্প্যান। ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের একটি স্প্যান বসানোয় ৬ হাজার ১৫০ মিটার সেতুর অবকাঠামো দৃশ্যমান হলো।

ঘন কুয়াশা, ঝড়-বৃষ্টি কিংবা নাব্যতা সংকট, এর কোনো একটি হলেই ফেরি ও লঞ্চসহ সব ধরনের নৌযান বন্ধ হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই ফেরি পারের অপেক্ষায় ঘাটে আটকে থাকতে হয় কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে প্রায় আধাদিন বা একদিন। ফেরির অপেক্ষায় থাকতে থাকতে ঘাটে রোগীর মৃত্যুর মতো ঘটনাও ঘটেছে।

পদ্মা সেতুর কারণে এমন চরম ভোগান্তি থেকে অবশেষে মুক্তি পেতে যাচ্ছে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার জনগণ।

গেল ২ মাসে সেতুতে ৮টি স্প্যান বসিয়ে রেকর্ড গড়েছেন দেশি-বিদেশি প্রকৌশলীরা। এ মাসেও ২টি স্প্যান স্থাপন করার মাধ্যমে বিজয়ের মাসে স্প্যান বসানোর কাজটি সম্পন্ন হলো।

সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ওপর ৪১তম স্প্যান 'টু-এফ' সফলভাবে স্থাপন করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন সেতুর নির্বাহী প্রকৌশলী ও প্রকল্প ব্যবস্থাপক (মূল সেতু) দেওয়ান আবদুল কাদের।

এর আগে, বুধবার বিকেল ৫টার দিকে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড থেকে 'তিয়ান-ই' নামের ভাসমান ক্রেনটি ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের স্প্যানটিকে বহন করে রওনা দেয়। প্রায় পৌনে এক ঘণ্টা পর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের কাছে পৌঁছায় স্প্যানবহনকারী ক্রেনটি। এরপর নোঙর করার কাজটিও সম্পন্ন করে রাখা হয়েছিল। আর কোনো নৌযান যাতে বাধা তৈরি না করে এর জন্য সেনাবাহিনীর সদস্যরা বুধবার থেকে সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছেন।

পদ্মা সেতুর কর্তৃপক্ষ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ২ পিলারের মধ্যবর্তী স্থানে স্প্যান বহনকারী ভাসমান ক্রেনটি পজিশনিং করে। এরপর স্প্যানটিকে ইঞ্চি ইঞ্চি মেপে তোলা হয় পিলারের উচ্চতায়। তারপর রাখা হয় ২টি পিলারের বেয়ারিংয়ের ওপর। স্প্যানটি বসানোর জন্য ধাপগুলো সফলভাবে সম্পন্ন হওয়ায় প্রকৌশলীদের বেগ পেতে হয়নি। কোনো রকম বাধা ছাড়াই স্প্যানটি বসানোর মাধ্যমে খুশি সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।

শেষ স্প্যানটি বসানোয় বিজয়ের মাসে পদ্মা জয় করলো পদ্মা সেতু। এখন নদীর ওপর দেখা যাচ্ছে ৬ হাজার ১৫০ মিটার দৈর্ঘ্যের অবকাঠামো। সেতুর কাজে নিয়োজিত দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, শ্রমিকরাও শেষ স্প্যান বসিয়ে আনন্দিত। চলতি বছর করোনা পরিস্থিতি ও বন্যার কারণে ৪ মাস স্প্যান বসানো হয়নি। পদ্মাপাড়ের সবার চোখে মুখে এখন আনন্দের হাসি।

২০১৪ সালের ডিসেম্বরে পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের দ্বিতল সেতুটি কংক্রিট ও স্ট্রিল দিয়ে নির্মাণ করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুতে ৪২টি পিলারের ওপর বসাবে ৪১টি স্প্যান। ২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর সেতুর জাজিরা প্রান্তে ৩৭-৩৮ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান বসানোর মধ্য দিয়ে সেতু দৃশ্যমান হয়।

মূল সেতু নির্মাণের জন্য কাজ করছে চীনের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি (এমবিইসি) ও নদী শাসনের কাজ করছে দেশটির আরেকটি প্রতিষ্ঠান সিনো হাইড্রো করপোরেশন। সেতুর ওপরের অংশে যানবাহন ও নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা