September 20, 2024, 10:01 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2020-12-18 06:54:04 BdST

সমৃদ্ধিতে পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে বাংলাদেশ


পশ্চিম পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তানের আলাদা হওয়ার কারণগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল অর্থনৈতিক বৈষম্য।

দেশের জনসংখ্যার বড় অংশ হয়েও সরকারি চাকরিতে পশ্চিম পাকিস্তানিদের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছিল পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ। পূর্ব পাকিস্তানের পাট রপ্তানি করে সিংহভাগ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হলেও এর সুফল থেকে বঞ্চিত ছিল এই অংশের মানুষ। বিদেশি সাহায্য সহযোগিতা ও ঋণের অর্থ বেশিরভাগই ব্যয় হত পশ্চিম অংশের উন্নয়নে।

শাসকগোষ্ঠীর বৈষম্যমূলক মনোভাবের কারণে দিন দিন বাড়তে থাকে পূর্ব ও পশ্চিম অংশের মধ্যে উন্নয়ন বৈষম্য। দু:শাসন ও অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে ক্ষোভের সঞ্চার হয় পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের মধ্যে। পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আলাদা হওয়ার ঐক্যমত্য গড়ে উঠে তাদের মধ্যে; যা রুপ নেয় মুক্তির সংগ্রামে। 

দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয় অর্জন করে বাংলাদেশ। কিন্তু অর্থনৈতিক বৈষম্য থেকে মুক্তির আকাঙ্খায় নতুন দেশের জন্ম হলেও যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশকে পুর্নগঠন করাই হয়ে দাঁড়ায় বড় চ্যালেঞ্জ।

প্রায় সবধরণের অবকাঠামোই ছিল এক একটি ধ্বংসস্তূপ, ছিল না বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রাষ্ট্রীয় কোষাগারের অর্থ। এই অবস্থায় নতুন দেশের সরকারের জন্য দেশ পরিচালনা ও দেশের উন্নয়ন কার্যক্রম চালানো জটিল হয়ে পড়ে। উন্নয়নের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয় বিদেশি সাহায্যের ওপর।

শুরুর দিকে পদে পদে হোঁচট খাওয়া বাংলাদেশ ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়াতে শুরু করে। অর্থনৈতিক উন্নয়নের পাশাপাশি গুরুত্ব পায় সামাজিক উন্নয়নও।

সরকারি বেসরকারি প্রচেষ্টায় সামাজিক উন্নয়নের বিভিন্ন সূচকে অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করতে শুরু করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানসহ প্রতিবেশি অনেক দেশকেই সামাজিক উন্নয়নের সূচকগুলোতে পেছনে ফেলতে থাকে। গড় আয়ু, স্বাক্ষরতার হার, নারীর প্রতি বৈষম্য নিরসনসহ বিভিন্ন সূচকে পাকিস্তানের চেয়ে এখন অনেক এগিয়ে তাদের কাছ থেকে আলাদা হওয়া দেশটি। সামাজিক উন্নয়নের সুফলের সঙ্গে অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রেও পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যেতে  সক্ষম হয় বাংলাদেশ। 

২০২১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করতে যাচ্ছে। এর আগেই অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতে পাকিস্তানের চেয়ে অনেক এগিয়ে বাংলাদেশ।

যেমন, মোট দেশজ উৎপাদনে (জিডিপি) এখন পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি হয় ৩ দশমিক ২৯ শতাংশ।

গত এক দশকে বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় দ্বিগুণের বেশি হলেও পাকিস্তানে মাত্র ৫০ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় ছিল ১ হাজার ৬৫২ মার্কিন ডলার। সে বছর বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৭৫১ মার্কিন ডলার। পরের বছর তা আরও বেড়ে হয় ১ হাজার ৯০৯ ডলার। অন্যদিকে পাকিস্তানের মাথাপিছু আয় কমে ১ হাজার ৪৯৭ ডলারে নেমে যায়।

এভাবেই কয়েক দশক ধরে অর্থনৈতিক ও সামাজিক খাতের প্রায় সব সূচকে পাকিস্তানের ওপরে উঠে বাংলাদেশ।

পাকিস্তানকে পেছনে ফেলে জিডিপির আকারের ভিত্তিতে বৃহৎ অর্থনীতির দেশের তালিকায় ৪১তম অবস্থানে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যভিত্তিক অর্থনৈতিক পরামর্শ কেন্দ্র ‘সেন্টার ফর ইকোনোমিকস এন্ড বিজনেস রিসার্চ’ (সিইবিআর) এর ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লিগ টেবিল’ (ডব্লিউইএলটি) প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে আসে। 

সিইবিআর প্রতিবেদনের দশম সংস্করণ ছিল এটি। প্রতিবেদনে আভাস দেওয়া হয়েছে, সামনের বছরগুলোতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করবে। ২০০৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত নেওয়া তথ্য পর্যালোচনা করে মূল্যায়ন করা হয়েছে ১৯৩টি দেশের বার্ষিক অবস্থান। পাশাপাশি ভবিষ্যৎ সম্ভাব্যতা বিচার করে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত দেশগুলোর অবস্থানের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক লীগ টেবিল অনুযায়ী, আগামী ১৫ বছরে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে। ২০২৩ সাল নাগাদ শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান ৩৬তম হবে। আর ২০২৮ সাল নাগাদ ২৭তম অবস্থানে চলে আসবে বাংলাদেশ। ২০৩৩ সাল নাগাদ এ অবস্থান হবে ২৪তম।

সিইবিআর-এর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৮-২০৩৩ সালের মধ্যে বাংলাদেশে গড়ে ৭ শতাংশ বার্ষিক প্রবৃদ্ধি হওয়ার কথা। এর মধ্য দিয়ে ২০১৮ সালের তুলনায় ২০৩৩ সালে ১৯ ধাপ অগ্রগতি হয়ে ২৪তম বৃহত্তর অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। 

পাকিস্তানকে ছাড়িয়ে যাওয়ার পর মাথাপিছু জিডিপিতে ভারতকেও পেছনে ফেলেছে বাংলাদেশ।

আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)-এর প্রতিবেদন বলছে, ২০২০ পঞ্জিকাবর্ষে বাংলাদেশের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৮৮ ডলার, আর ভারতের মাথাপিছু জিডিপি হবে ১ হাজার ৮৭৭ ডলার।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা