April 25, 2024, 11:04 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2021-05-03 04:32:47 BdST

যেসব কারণে বিজেপির ভরাডুবি হলো পশ্চিমবাংলায়


পশ্চিমবাংলার নির্বাচনে যে এক্সিট পোল ছিলো সেই এক্সিট পোলের ফলাফল ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এক্সিট পোলে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছিলো মমতা ব্যানার্জি আর নরেন্দ্র মোদির মধ্যে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত হাড্ডাহাড্ডি লড়াই তো দূরে থাকুক দুই-তৃতীয়াংশ আসনে জয়ী হয়েছেন মমতা ব্যানার্জি।

এই নির্বাচনে জয়ী হতে নরেন্দ্র মোদি এবং অমিত শাহ বারবার ছুটে এসেছিলেন পশ্চিমবাংলায়। কিন্তু তারপরও পশ্চিমবাংলার মানুষ তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিলো।

এই নির্বাচনে কেন এত বিপর্যয় ঘটলো বিজেপির, বিশেষ করে নির্বাচনের আগেও যখন মনে করা হচ্ছিল যে বিজেপি শক্ত আসন গড়তে যাচ্ছে, কলকাতায় মমতা ব্যানার্জির অবস্থান টলটলায়মান হয়ে যাবে সেই রকম পরিস্থিতির মধ্যে কিভাবে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে বিজেপির এত বড় বিপর্যয় ঘটলাে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা পাঁচটি কারণ খুঁজে পেয়েছেন, 

দল বদলের আত্মঘাতী নীতি

বিজেপি নির্বাচনে জয়ী হওয়ার আগে তৃণমূল থেকে লোক ভাগিয়ে নেওয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলো। শুভেন্দুসহ তৃণমূলের অনেক হেভিওয়েট নেতাকে বিজেপিতে নিয়ে আসা হয়েছিলো। এরাই ১০ বছর মমতা ব্যানার্জির ডান হাত বাম হাত ছিলেন। ফলে সাধারণ জনগণ বুঝতে পারে যে, বিজেপি শুধুমাত্র ক্ষমতা চায়। এই জন্য সুবিধাবাদীদেরকে ফিরিয়ে নিয়ে এসেছে দলের মধ্যে। এটি সাধারণ মানুষ পছন্দ করেনি।

হিন্দুত্ববাদকে প্রত্যাখ্যান

নরেন্দ্র মোদির নির্বাচনের প্রচারণার মূল কৌশল ছিলো হিন্দু ভোটারদেরকে একাট্টা করে জয় ছিনিয়ে আনা। কিন্তু এই সাম্প্রদায়িক হিন্দুত্ববাদী নীতিকে পশ্চিম বাংলার জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছে।

উন্নয়নের গালভরা বুলি

বিজেপি যে উন্নয়নের গালভরা বুলি দিয়েছে সেটি মানুষ বিশ্বাস করেনি এবং মানুষ মনে করেছে যে, এগুলো স্রেফ নির্বাচনে জেতার জন্য কথার কথা। 

মমতা দৃঢ়তা

নরেন্দ্র মোদি, অমিত শাহ`র মতো ডাকসাইটে নেতাদের প্রচারণা, কেন্দ্রের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ এবং নির্বাচন কমিশনকে পক্ষপাত করার চেষ্টার পরও মমতা ব্যানার্জি এতোটুকু দমে যান নি বরং নির্বাচনে তিনি তার সবটুকু উজাড় করে দিয়েছেন। তার পুরস্কার দিয়েছে পশ্চিমবাংলার জনগণ।

করোনা পরিস্থিতি

অনেকেই মনে করেন যে, সারা ভারতে করোনার যে অবনতি এটি বিজেপির একটি ব্যর্থতা এবং ব্যর্থতার আঁচড় লেগেছে এই নির্বাচনে।

মূলত এই ৫ কারণেই মোদির বিপর্যয় হয়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

এদিকে, এই হারের জন্য দায়ী করে দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদি ও অমিত শাহর দিকে আঙুল তোলা শুরু করেছেন বিজেপির রাজ্য নেতাদের একাংশ।

সরাসরি মোদি-শাহর নাম মুখে না নিলেও রাজ্যের এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘সেনাপতি হয়েছিলেন যারা জিতলে তারা কৃতিত্ব নিতেন। এখন হারের দায়ও তাদেরই নিতে হবে।’

প্রথম থেকেই পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব রাজ্যের হাত থেকে নিয়ে নেন কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। কোন এলাকায় দল কেমন অবস্থায় রয়েছে তা দেখভাল করতে কেন্দ্রীয় পাঁচ নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হয়।

রাজ্য বিজেপির এক শীর্ষ নেতা বলেন, ‘জেলায় জেলায় অন্য রাজ্য থেকে আসা পর্যবেক্ষকরা স্থানীয় নেতৃত্বের প্রতি অবিশ্বাস দেখিয়েছেন। বাংলার রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা না থাকলেও নিজেদের রাজ্যের অভিজ্ঞতা বাংলায় প্রয়োগ করতে চেয়েছেন। বারবার বলেও কাজ হয়নি। যে ফল হতে চলেছে তাতে এটা স্পষ্ট যে, সেটা ঠিক হয়নি।’

বিজেপির ভেতরের পারস্পারিক দোষারোপ এখনো সামনে না এলেও এমন আলোচনাও শুরু হয়েছে যে, অনেক জায়গাতেই দলের পুরোনো নেতাকর্মীদের ওপরে ভরসা না করে নবাগতদের অতিরিক্ত গুরুত্ব দেয়া হয়েছে।

রাজ্য বিজেপির এক ক্ষুব্ধ নেতার বললেন, ‘প্রার্থী ঠিক করার ক্ষেত্রেও রাজ্য নেতাদের কথা অনেক সময়েই শোনা হয়নি। তাতে নিচুস্তরের কর্মীদের মনোবল ভাঙা হয়েছিল। এখন এটা স্পষ্ট হয়ে গেল যে, সমর্থকদের মনোবলও ভেঙে গিয়েছিল।’

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা