April 19, 2024, 5:23 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2021-05-05 08:55:45 BdST

পশ্চিমবাংলায় হেরেও জিতলো বিজেপি?


আজ বুধবার তৃতীয়বারের মত মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিতে যাচ্ছেন মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূল কংগ্রেস এবার নির্বাচনে বিপুল বিজয়ী হয়েছে। এই নির্বাচনের মাধ্যমে অসাম্প্রদায়িক শক্তির বিজয় হয়েছে বলে বলা হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প উপড়ে ফেলা হয়েছে এমন কথাও বলা হচ্ছে।

তবে এই নির্বাচনকে নির্মোহ বিশ্লেষণ করলে, নির্বাচন বিশ্লেষণে আবেগকে সরিয়ে রাখলে দেখা যায় পশ্চিমবাংলার নির্বাচনে সাম্প্রদায়িক অপশক্তির পরাজয় ঘটেনি বরং সাম্প্রদায়িক শক্তি নতুন করে সঙ্ঘবদ্ধ হয়েছে এবং সাম্প্রদায়িক শক্তি জানান দিয়েছে যে তারা আসছে।

এই নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেস পেয়েছে ২৯২ টি আসনের মধ্যে ২১৩ টি আসন। নিরঙ্কুশ বিজয় পেয়েছে তারা। কিন্তু এই নির্বাচনের সবচেয়ে অবাক করা ব্যাপার হলো যে বিজেপি পেয়েছে ৭৭ টি আসন অর্থাৎ মোট আসনের ৩৮ শতাংশ পেয়েছে বিজেপি। পশ্চিমবাংলাকে মনে করা হয় যে, সেকুলার ভারতের এক রুপচিত্র।

এখানে এক অসাম্প্রদায়িক চিন্তা-চেতনা সবসময় লালন করা হয়। আর এ কারণেই এখানে দীর্ঘ ৩৪ বছর বামফ্রন্ট শাসন করেছিল। বামফ্রন্টের শাসনের পর তৃণমূল এসেছে। পশ্চিমবঙ্গে এমন একটি জায়গা যেখানে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কখনোই জায়গা দেওয়া হয়নি।

কিন্তু এবার নির্বাচনের ফলাফল যদি আমরা বিশ্লেষণ করি তাহলে দেখব যে এই নির্বাচনে সেকুলার রাজনৈতিক দলগুলো শোচনীয়ভাবে হেরেছে। সেকুলার রাজনৈতিক শক্তি বামফ্রন্ট এখানে কোন আসন পায়নি। কংগ্রেসের শেকড় উপড়ে ফেলা হয়েছে। অর্থাৎ এই নির্বাচনের মধ্যে দিয়ে তৃণমূল এবং বিজেপি মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়ালো, যেখানে পশ্চিমবাংলার মত অসম্প্রদায়িক একটি রাজ্যের প্রধান প্রতিপক্ষ হলো। তারা যে ৭৭ টি আসন পেয়েছে সেটি তাদের জন্য এক বিরাট অর্জন। তৃতীয়বারের মতো মমতা ব্যানার্জির তৃণমূল বিজয়ী হয়েছে। আগামী নির্বাচনে নিশ্চয়ই বিজেপি আরও কঠোর অবস্থান নিয়ে আসবে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে পশ্চিমবাংলায় ভোটারদের মধ্যে যে ধর্মীয় উন্মাদনার বিষবাষ্প বিজেপি ছড়িয়ে দিতে পেরেছে। ২০১৬ এর নির্বাচন থেকে এই নির্বাচনে তারা বেশী ভোট পেয়েছে, সেটি বিজেপির জন্য অনেক ইতিবাচক।

সবচেয়ে বড় কথা হলো এই নির্বাচনে তারা সেকুলার শক্তিকে রাজনীতির মাঠ থেকে বিতাড়িত করেছেন এবং চটজলদি বামফ্রন্ট ও কংগ্রেসের এখন রাজনৈতিক শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই।

এই নির্বাচনের ফলাফলের মধ্যে দিয়ে দক্ষিণপন্থী উগ্র হিন্দুত্ববাদ যে পশ্চিমবাংলায় ছড়িয়ে দেওয়া হলো সেটি আমাদের অগোচরে থাকলে চলবে না। কারণ এই নির্বাচনের পুরো প্রচারণায় নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ হিন্দুত্ব জাগরণ এবং সাম্প্রদায়িক উস্কানির মদদ দিয়েছেন। এর ফলে একটা বিরাট জনগোষ্ঠী এখন বিজেপির সাম্প্রদায়িক চিন্তাধারায় উৎসাহিত হবে এবং এটির একটি প্রভাব পড়বে পুরো ভারতের রাজনীতিতে।

সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে বিজেপি প্রমাণ করতে পেরেছে যে, পশ্চিমবাংলার মত সেকুলার রাজ্যেই যদি তাদের এরকম উত্থান ঘটতে থাকে তাহলে অবশ্যই অন্যান্য রাজ্যগুলোতে বিশেষ করে ধর্মীয় জিকির তুলে, হিন্দুত্ববাদের আওয়াজ তুলে যেকোনো রাজ্যে তার আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। সেই ধারার একটি দিক রচিত হলো এই নির্বাচনের মাধ্যমে।

আর এই নির্বাচনে বিজেপি হারলো বটে তবে পশ্চিমবাংলায় তারা যে শক্ত খুঁটি গাড়লো সেটির ভবিষ্যতে বিজেপির জন্য এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির জন্য একটি বড় প্রেরণা হয়েই থাকবে। তাই ৭৭ আসন পেয়েও বিজেপি অখুশি নয়। কারণ তারা জানে যে, পশ্চিমবাংলায় তারা সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ঢোকাতে পেরেছে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা