April 25, 2024, 11:31 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2021-05-05 09:11:01 BdST

কি ছিলো ইসলামী বিপ্লবের নীলনকশায়?


২০১৩ সালের ৫ মে। বাংলাদেশে একটি ইসলামী বিপ্লব সংগঠনের নীলনকশা বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিলো।

আজ ৫ মে, সেই ষড়যন্ত্রের ব্যর্থতার আট বছর পূর্তি। কি ছিল সেদিনের ওই ইসলামী বিপ্লবের নীলনকশায়?

২০১৩ সালের ৫ মে কে হেফাজত তার গোপন দলিলে ইসলামী বিপ্লবের প্রয়াস হিসাবে চিহ্নিত করে। ঐ দিন তারা ঢাকা অবরোধ কর্মসূচি দিয়েছিলো গণজাগরণ মঞ্চের বিরুদ্ধে।

সারাদেশ থেকে পায়ে হেঁটে হেফাজতের কওমি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা ঢাকায় এসেছিলো। তাদেরকে উস্কে দেওয়া হয়েছিল এবং এই উস্কানিতেই তারা পল্টন, মতিঝিল, শাপলা চত্বর, বায়তুল মোকাররমসহ বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক ভাঙচুর করে। বহু মানুষকে নিগৃহীত করে। একটি তাণ্ডবের রাজত্ব কায়েম করেছিলো তারা। তারা সেদিন ঢাকায় স্থায়ী অবস্থান গ্রহণ করতে চেয়েছিল  এবং তাদের মূল পরিকল্পনা ছিলো আওয়ামী লীগ সরকারের পতন এবং একটি ইসলামী বিপ্লবী সরকার গঠন করা। 

এত বছর পর যখন আবার হেফাজতের নেতাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী তাণ্ডবের অভিযোগে তখন হেফাজতের নেতারাই ইসলামী বিপ্লবের নীলনকশার কিছু অবয়ব দিয়েছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে। এই ইসলামী বিপ্লবের নীলনকশায় মোট ১০টি বিষয়ের সন্ধান পাওয়া যায়, সেগুলো ছিলো,

সরকার কাঠামো

শাপলা চত্বরের মাধ্যমে তারা সরকার পতনে বাধ্য করাতো এবং একটি অস্থায়ী ইসলামী বিপ্লবী সরকার গঠনের ঘোষণা দিতো। অস্থায়ী ইসলামী বিপ্লবী সরকারের রাষ্ট্রপতি হতেন প্রয়াত আহমদ শফী আর প্রধানমন্ত্রী হতেন জুনায়েদ বাবুনগরী। এছাড়াও তারা ১০ সদস্যের একটি মন্ত্রিপরিষদ গঠন করতো

সংবিধান স্থগিত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পরই হেফাজতের নেতৃত্বে ইসলামী বিপ্লবী সরকার বর্তমান সংবিধানকে স্থগিত করে দিতো এবং নতুন সংবিধান না হওয়া পর্যন্ত কোরআন সুন্নাহর আলোকে দেশ পরিচালনার ঘোষণা দিতো।

শরিয়া আইন কার্যকর করা

বর্তমান সংবিধান স্থগিত করে বিভিন্ন অপরাধের বিচারের জন্য শরিয়া আইনকে কার্যকর করার পরিকল্পনা ছিলো ওই ইসলামী বিপ্লবের নীলনকশায়।

ক্ষমতাসীন দলের বিচার

ওই ইসলামী বিপ্লবের পর আওয়ামী লীগের সকলকে আটক করা এবং শরিয়া আইন অনুযায়ী তাদের বিচার করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো হেফাজত। 

আলেম-ওলামাদের নিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের কমিটি

বিভিন্ন আলেম-ওলামাদের নিয়ে ইসলামী শাসনতন্ত্র প্রণয়নের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছিলো হেফাজত। আল্লামা আহমদ শফীকে এটির সভাপতিসহ আরো কয়েকজন বিভিন্ন মাদ্রাসার শিক্ষককে এই কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিলো। 

নারীর কার্যক্রম সীমিত করা

ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে নারীদের কার্যক্রম সীমিত করার পরিকল্পনা নিয়েছিলো হেফাজত। ইসলামী বিপ্লব হলে নারীদের কর্মকাণ্ড সীমিত করা হবে এ ব্যাপারে একটি পৃথক আদেশ জারি করার চিন্তা-ভাবনা ছিলো তাদের। 

গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদের প্রকাশ্যে ফাঁসি

গণজাগরণ মঞ্চের নেতাদেরকে প্রকাশ্যে ফাঁসির ঘোষণা দেয়ার কথা ছিলো বিপ্লবী ইসলামী সরকারের।

মুরতাদদের তালিকা প্রকাশ

ইসলামী বিপ্লবের মাধ্যমে বাংলাদেশে যারা তাদের ভাষায় ধর্মান্ধ, কাফের, মুরতাদ তাদের তালিকা প্রণয়ন করার কথা ছিলো হেফাজতে ইসলামের এবং এই তালিকা প্রকাশ্যে দিয়ে তালিকায় যাদের নাম থাকবে তাদের প্রকাশ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিলো তাদের।

কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দান

হেফাজতের দাবির একটি ছিলো কওমি মাদ্রাসাকে স্বীকৃতি দেওয়া এবং সারা দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আরবি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা। 

ব্লাসফেমি আইন প্রণয়ন করা

হেফাজত ইসলামী বিপ্লব করার পর যারা মুসলমান নয় তাদের অধিকার সীমিত করা এবং ধর্মের বিরুদ্ধে কটুক্তি বা ধর্মের বিরুদ্ধে কোনো মন্তব্য করার জন্য ব্লাসফেমি আইনের প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো হেফাজত।

কিন্তু ইসলামী বিপ্লবের ওই নীলনকশা ৫ মে রাতে আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নস্যাৎ করে দেয়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা