April 20, 2024, 2:55 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2021-07-07 23:57:45 BdST

নেপথ্যে পোশাক খাতের চোরাই সিন্ডিকেট ব্যবসা!আশুলিয়ার জামগড়ায় এস আই আলীমের তিলোত্তমা বাড়ী


বাংলাদেশ পুলিশের এসআই আব্দুল আলীম খান। বর্তমানে তিনি কর্মরত আছেন চট্টগ্রামের কর্নফুলি থানায়। গ্রামের বাড়ী মানিকগঞ্জ হলেও তিনি রাজধানীর আশুলিয়া থানার জামগড়া এলাকায় নির্মাণ করেছেন বিশাল এলাকা জুড়ে আলীশান ভবন। জামগড়া এলাকার রশিদ মার্কেট পার হয়ে সড়ক ধরে একটু সামনে এগোলেই আহমেদ মুন্সি জামে মসজিদ। এখানে যে কাউকেই জিজ্ঞেস করলেই বাড়ীটি দেখিয়ে দেবেন। কারণ এ বাড়ীটি এলাকায় পুলিশ বাড়ী হিসেবে পরিচিত।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে এ পুলিশ বাড়ী ঘিরেই ঢাকা এবং চট্টগ্রামে গড়ে উঠেছে বিদেশী গার্মেন্টস পণ্যের একটি চোরাই সিন্ডিকেট। দেশের নামি দামি গার্মেন্টেসর পন্য বিদেশে রপ্তানী করার সময়ে কখনো বন্দর থেকে আবার কখনো কারখানা থেকে বিশেষ কায়দায় চুরি করে তা আবার বিদেশী অসাধূ ব্যবসাীদের কাছেই বিক্রি করে আসছে এই চক্রটি। আর এর মাঝ দিয়ে নিজেরা বিপুল বিত্তবৈভবের মালিক বনে গেলেও মার খাচ্ছে রপ্তানী মুখি গার্মেন্টস খাতের সুনাম। সেই সাথে বিরাট আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছেন দেশের শিল্প উদ্যোক্তাদের অনেকেই । আর সে সিন্ডিকেটের নেপথ্য নায়ক হিসেবে কাজ করছেন এসআই আব্দুল আলীম খান। 

জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দর ও শীর্ষ স্থানীয় কয়েকটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি ঘিরে এ চোরাই চক্রটি কাজ করছে। সম্প্রতি একটি রপ্তানীমুখী গার্মেন্টসের কোটি টাকার বিদেশী জ্যাকেট চুরি করে এই সিন্ডিকেট। সেই চোরাই পণ্যের বড় একটি অংশ তারা নিয়ে আসে ঢাকায়। আর তা গুদামজাত করে এসআই আব্দুল আলীম খানের জামগড়াস্থ তৃতীয় তলা পুলিশ ভবনের দ্বিতীয় তলার ১০/২৮ নং ফ্লাটে।

গণমাধ্যমের কাছে সংবাদ পৌঁছুলে গতকাল (৬ জুলাই বিকেলে) সে বাড়ীতে হাজির হয় গণমাধ্যমের একটি টিম। সে টিমের কাছে রুমে অবৈধ জ্যাকেট থাকার কথা স্বীকার করেন এসআই আব্দুল আলীম খানের স্ত্রী।

তিনি গণমাধ্যম কর্মিদের জানান, হঠাৎ করে ভাড়াটিয়া এসে অফার করায় তারা রুমটি ভাড়া দিয়েছেন। ভেতরের মালামাল তাদের। ভাড়াটিয়ার কোন তথ্য আছে কিনা, যেমন ভোটার আইডি কার্ড, ফোন নস্বর বা ডিড এমন প্রশ্নে উত্তরে তিনি জানান, না এমন কিছুই তার কাছে নাই। গণমাধ্যম কর্মিদের কাছে এক সময় তিনি স্বীকার করেন রুমে রক্ষিত মালামাল তার ছোট বোনের স্বামীর।

এই বিষয়ে জানতে চাইলে এস আই আব্দুল আলীম খান মোবাইলে বলেন, বাড়ীতে কি মাল রয়েছে তা তিনি জানেন না। তাছাড়া বাড়ীটি তার স্ত্রীর নামে। এ ব্যাপারে তিনিই ভাল বলতে পারবেন।

চোরাই চালানটি চট্রগ্রাম থেকে এসেছে। আপনি চট্রগ্রামে কর্মরত আছেন। আবার এর সাথে জড়িত আপনার একজন ঘনিষ্ট আত্মীয়। এখানে আপনার কোন যোগসূত্র রয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি খানিকটা নীরব থেকে বলেন, আমি বিষয়টা নিয়ে পরে কথা বলবো।

ভাড়াটিয়া বলা হলেও চট্ট্রগ্রাম থেকে চুরির এ মালামাল এনেছেন আপনার ভায়রা ভাই এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার স্ত্রীর সাথে কয়েক বছর আগে ডিভোর্স হয়ে গেছে। এ সময় গণমাধ্যম কর্মিদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন এসআই আব্দুল আলীম খানের মেয়ের জামাই এডভোকেট রবিউল ইসলাম। তিনি নিজেকে ঢাকা কোর্টে প্রাকটিসরত বলে দাবি করেন।

শ্বাশুড়ী ডিভোর্সের পর একই বাড়ীতে সন্তানদের সাথে তিনি কিভাবে থাকছেন এবং চোরাই ব্যবসার সাথে নিজেকে জড়িয়ে রেখেছেন এমন প্রশ্নের জবাবে রবিউল ইসলাম বলেন, এটা পারিবারিক ব্যাপার।

একাধিক সূত্রমতে, চোরাই সিন্ডিকেটের সাথে সম্পর্ক রক্ষা ও একজন এসআই এর প্রাসাদসমবাড়ীসহ বহু অর্জিত সম্পত্তি রক্ষার কৌশল হিসেবে এস আই আব্দুল আলীম খান বাড়ীটি স্ত্রীর নামে দেয়ার পর স্ত্রীকে ডিভোর্স দেয়ার নাটক সাজালেও সংসার ও ব্যবসার কাজ করে যাচ্ছেন সমানতালে।

জানা গেছে, পুলিশের বাড়ীতে চোরাই পণ্যের বিষয়টি গণমাধ্যমের নজরে আসার পর স্থানীয় আশুলিয়া থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে গভীর রাতে পিক আপ যোগে মালামাল অনত্রে সরিয়ে নিয়েছে সিন্ডিকেট। এ কাজে মোটা অংকের অর্থ বিনিময়সহ পেছনে ভূমিকা রেখেছেন এসআই আব্দুল আলীম খান।

সূত্রমতে, আশুলিয়া থানার এসআই সুদীপ কুমারের নেতৃত্বে গভীর রাতে (রাত আনুমানিক ২.৩০ থেকে -৩টার মধ্যে) পিকআপযোগে মাল অনত্রে নিয়ে যাওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আশুলিয়া থানার এসআই সুদ্বীপ কুমার জানান, গণমাধ্যম কর্মিরা বাড়ীতে গিয়েছে এটা তাকে বাড়ীর অধিবাসীরা জানয়েছেন। তারা বলেছেন, তারা রুম ভাড়া দিয়েছেন। ভাড়াটিয়া চাবি নিয়ে গেছে। ভাড়াটিয়া ফিরলে যেন থানাকে অবহিত করা হয় এ কথা বলে তারা চলে এসেছেন। কিন্তু রাতেই পুলিশের সহযোগিতায় মালামাল সরানো, আর্থিক লেনদেন সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না বলে জানান। বাড়ীতে রক্ষিত সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই সব পরিষ্কার হবে এমন তথ্য জানালে এস আই সুদীপ কুমার এ ব্যাপারে থানায় গিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেন।

একই বিষয়ে আশুলিয়া থানার অপর এসআই মিলন ফকির জানান, তিনি এসআই সুদীপের সাথে ঘটনাস্থলে গিয়েছিলেন। এর বাইরে কোন কথা বলতে চাননি তিনি। তিনি বলেন, যা জানার সুদীপের কাছ থেকেই জানতে পারবেন।

এ দিকে রাতে বাড়ী থেকে মালামাল পুলিশের সহযোগিতায় অনত্রে সরিয়ে ফেলা সম্পর্কে জানতে এসআই আব্দুল আলীম বলেন, বিষয়টি আমি আশুলিয়া থানাকে জানাই। এর পর আশুলিয়া থানা পুলিশের টিম গিয়ে বাড়ীতে থাকা মালামাল জব্দ করে।

এদিকে এই ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর থেকেই এসআই আব্দুল আলীমের স্ত্রীর মোবাইল নম্বরটি বন্ধ করে রাখা হয়েছে। মেয়ের জামাই এডভোকেট রবিউল ইসলামও ফোন রিসিভ করেননি।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা