April 24, 2024, 10:10 pm


জাহিদুল ইসলাম শিশির

Published:
2021-07-21 02:19:27 BdST

সবার সহযোগিতায় নতুন স্বপ্নে বাঁচার সাহস পাচ্ছি: রেজবিন হাফিজ


রেজবিন হাফিজ। একজন নারী উদ্যোক্তা। অক্লান্ত পরিশ্রম, মেধা, সততা ও নিষ্ঠা দিয়ে গড়ে তুলেছেন পিপলস ফুটওয়্যার লিমিটেড নামে একটি জুতা তৈরীর কারখানা। কাজের স্বীকৃতি স্বরুপ পেয়েছেন ২০২০ সালে সেরা উদ্যোক্তা পুরুষ্কার। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে তিনি এ পুরুষ্কার গ্রহণ করেন।

কাজের পরিধি বেড়ে যাওয়ায় আশুলিয়ার জিরাবো এলাকার সু মে-কার নামক একটি ফ্যাক্টরীর মেশিনপত্র উপযুক্ত দলিল মূল্যে তিনি ক্রয় করে ২০২০ সালে গড়ে তোলেন পিপলস ফুটওয়্যার কারখানাটি। 

সম্প্রতি রেজবিন হাফিজের স্বপ্নের সেই কারখানায় হানা দেয় একদল দূর্বৃত্ত। তারা গায়ের জোরে দখল নিতে চায় পিপলস ফুটওয়্যার লিমিটেড ফ্যাক্টরীটি। বিছিন্ন করে দেয় কারখানার বিদ্যুতের সংযোগ। কারখানার প্রবেশ পথে বালু ফেলে ও বালুর ট্রাক দিয়ে আটকে দেয় যাতায়াতের পথ। পবিত্র কুরবাণীর ঈদ সামনে রেখে তারা কারখানাটি দখল নিতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তারা ভাড়াটে মাস্তানদের সহযোগিতায় শ্রমিকদের কাজ বন্ধ করে দেয়। রেজবিন হাফিজের জীবন বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেয়।

নিজের শ্রম আর স্বপ্নের এমন অপমৃত্যু রুখে দিতে তিনি নানা ভাবে বিভিন্ন মহলের সহযোগিতা কামনা করতে থাকেন। কিন্তু প্রথম দিকে কেউ তাতে কর্নপাত না করায় হতাশ হয়ে পড়েন তিনি। অবশেষে নিজের জীবন বাজি রেখে সন্ত্রাসীদের আক্রমনের মুখেই ফেসবুক লাইভে এসে নিজের জীবন ও কারখানা রক্ষায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসীর সহযোগিতা চান তিনি। মুুহুর্তেই ভাইরাল হয়ে যায় তার সেই হৃদয় বিদারক ও কান্নাভেজা আঁকুতি জড়ানো আহবানটি। এতেই নড়ে বসে প্রশাসন থেকে গণমাধ্যম ও সামাজিক সংগঠনসহ রেজবিন হাফিজের কর্মকান্ড সংশ্লিষ্ট দপ্তর অধিদপ্তরগুলো। সক্রিয় হয়ে ওঠে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী প্রায় সব বাহিনী ও এজেন্সি। বিশেষ করে আন্তরিকতার সর্বোচ্চ মানসিকতা নিয়ে তার পাশে দাঁড়ান পুলিশের ডিআইজি হাবিবুর রহমান। সেই সাথে স্থানীয় আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান। তিনি আক্রমনকারিদের হাত থেকে রেজবিন হাফিজের কারখানা উদ্ধারসহ কেটে দেয়া বিদ্যুতের সংযোগ স্থাপন, রাস্তায় ফেলে রাখা বালু ও ট্রাক সরিয়ে নিয়ে দ্রুত কারখানা চালুর উদ্যোগ নেন। বন্ধ থাকার ০৫ পর আজ ( ২০ জুলাই থেকে ) আবার কাজ শুরু হয়েছে কারখানাটিতে।

ঘটনার সূচনা পর্ব থেকেই 'দি ফিন্যান্স টুডে' এ নিয়ে বার বার কথা বলেছে রেজবিন হাফিজের সাথে। তাকে সাহস দেয়ার চেষ্টা করেছে। সর্বশেষ আজ (২০ জুলাই) কারখানা চালু হওয়া ও সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় রেজবিন হাফিজ বলেন, আমার ভয় অনেকটাই কেটে যাচ্ছে। আমি নতুন স্বপ্নে আবার বাঁচার সাহস পাচ্ছি।

তিনি আরো জানান, সন্ত্রাসীদের আক্রমনের মুখে আমি সত্যিই হতাশ হয়ে পড়েছিলাম। আমার ভয় হচ্ছিল তারা বোধ হয় আমাকে বাঁচতে দেবে না। আমার সব কিছু শেষ হয়ে যাচ্ছে। কারণ আক্রমনকারিরা একদিকে কারখানার বিদ্যুৎ বিছিন্ন করে দিয়েছে। রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। শ্রমিকদের বের করে দিয়েছে। আমার উপরও শারীরিক আক্রমন করে বসেছে। কিন্তু সেই সময় পর্যন্ত আমি কোন কর্ণার থেকেই কাঙ্খিত সহযোগিতা পাচ্ছিলাম না। সবাই যেন ঘটনা এড়িয়ে যাচ্ছে এমন মনে হচ্ছিল আমার। তাই জীবনের নিরাপত্তাহীনতার মাঝেই সর্বশেষ চেষ্টা হিসেবে আমি ফেসবুক লাইভে এসে আমার কষ্টের কথা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চেয়েছি। বলেছি। কারণ আমার বিশ্বাস ছিলো সব আলো নিভে গেলেও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দরজা আমার জন্য শুধূ নয়, দেশের প্রতিটি নিপীড়িত মানুষের জন্য মুক্ত থাকবে। সেই ভরসায় আমি ফেসবুক লাইভে আসি। আর গণমাধ্যমসহ সোস্যাল মিডিয়ার কল্যাণে তা অনেকেরই দৃষ্টি কাড়ে। ডিআইজি হাবিবুর রহমানের দৃষ্টি পড়ে আমার ফেসবুক লাইভে। তিনি নিজে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়ে আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সেই সাথে আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান নিজে আন্তরিকতার সর্বোচ্চ সহযোগিতার মানসিকতা নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছেন। র‌্যাব, ডিবি, সিআইডি এর পাশাপাশি গণমাধ্যমের কর্মিরা আমার পাশে শক্ত অবস্থানে এসে দাঁড়িয়েছে। তারা নানাভাবে আমাকে পরামর্শ ও সাহস দিয়েছেন। কয়েকটি মন্ত্রণালয় থেকেও আমাকে প্রত্যক্ষ সহযোগিতা করা হয়েছে। বিশেষ করে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, মহিলা বিষয়ক মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে আমাকে সহযোগিতা করা হয়েছে। ভবিষ্যতের যে কোন প্রয়োজনে আমার পাশে থাকার আশ্বাস দেয়া হয়েছে।

তিনি আরো জানান, বিসিক চেয়ারম্যান মোস্তাক হাসান এনডিসি ও এসএমই ফাউন্ডেশন এর এমডি ড. মফিজুর রহমান আমাকে সহযোগিতা করেছেন। সেই সাথে অনেক ব্যবসায়িক ও সামাজিক সংগঠন , মানবাধিকার সংগঠন থেকে আমাকে সযোগিতা করা হয়েছে। সব মিলে একবাক্যে বলা যায় রাষ্ট্র তার পবিত্র দায়িত্ব নিয়ে আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। যা আমাকে সত্যিকারার্থেই আশ্বস্ত করেছে। আমাকে নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখাচ্ছে।

রেজবিন হাফিজ বলেন এটা সত্যি অভূতপূর্ব একটি ব্যাপার। কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে আমার প্রাপ্ত সহযোগিতার মাত্রা । এ জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রীসহ দেশবাসী সকলের কাছে কৃতজ্ঞতা জানান। একই সাথে তিনি ভবিষ্যতের কোন দুর্যোগ এলে তা মোকাবেলায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

তিনি জানান, আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কামরুজ্জামান এর আন্তরিকতায় কারখানা চালু হলেও যারা আক্রমন করেছে বা কারখানা দখল করে নিতে চেয়েছে তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। আইনগত ভিত্তি বিশ্লেষণ করে দোষীদের কঠোর শাস্তি চান তিনি। সেই সাথে ভবিষ্যতে যেন এমন কোন ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যাপারেও সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

রেজবিন বিশেষ করে গণমাধ্যমের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, মিডিয়ার উপস্থিতি তাকে আশ্বস্ত করেছে। তার হারিয়ে যাওয়া বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে গণমাধ্যমের কর্মিরা কাজ করেছেন।

রেজবিন হাফিজ বলেন, এদেশে এমনিতেই অনেক বাঁধা পেরিয়ে একজন নারী উদ্যোক্তাকে কাজ করতে হয়। একটি সমাজ বদলের অংশ হিসেবে নারীকে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবলা করতে হয়। সে সময় প্রয়োজন রাষ্ট্র ও সমাজের নিরবচ্ছিন্ন সমর্থন ও সহযোগিতা। তার বদলে যদি চাদাঁবাজি, দখল দারিত্বের মতো সমস্যায় পড়তে হয় তাহলে নারীর পক্ষে সামনে এগোনো কঠিন হবে। এ কারণে ব্যবসায়িক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় তিনি সকল অবস্থায় সবার সহযোগিতা কামনা করেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা