April 25, 2024, 7:26 am


নেহাল আহমেদ, রাজবাড়ী

Published:
2022-08-06 21:46:57 BdST

আজ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ৮১ তম প্রয়াণ দিবস


‘আছে দুঃখ, আছে মৃত্যু, বিরহদহন লাগে
তবুও শান্তি, তবু আনন্দ, তবু অনন্ত জাগে'

বাইশে শ্রাবণ বিশ্বব্যাপী রবী-ভক্তদের কাছে একটি শূন্য দিন, আপন মানুষ হারানোর দিন।রবীন্দ্রনাথ কাব্যসাহিত্যের বিশাল একটি অংশে যে পরমার্থের সন্ধান করেছিলেন, সেই পরমার্থের সঙ্গে তিনি লীন হয়েছিলেন এদিন।

রবীন্দ্রকাব্যে মৃত্যু এসেছে বিভিন্নভাবে।

জীবদ্দশায় মৃত্যুকে তিনি জয় করেছেন বারবার। মৃত্যুবন্দনা করেছেন তিনি এভাবে- ‘মরণ রে, তুঁহু মম শ্যাম সমান। মেঘবরণ তুঝ, মেঘ জটাজুট! রক্ত কমলকর, রক্ত-অধরপুট, তাপ বিমোচন করুণ কোর তব মৃত্যু-অমৃত করে দান’। 

জীবনের শেষ নববর্ষের সময় রবীন্দ্রনাথ ছিলেন তার সাধের শান্তিনিকেতনে। সেদিন তার কলমে রচিত হয়েছিল ‘সভ্যতার সংকট’ নামের অমূল্য লেখাটি। তারও ক’দিন পর ১৯৪১ সালেরই ১৩ মে লিখে রাখলেন, রোগশয্যায় শুয়েই ‘আমারই জন্মদিন মাঝে আমি হারা’।

শান্তিনিকেতনে রবীন্দ্রনাথের শেষ দিনগুলোতে কখনো তিনি শয্যাশায়ী, কখনো মন্দের ভাল। শেষের দিকে ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই, শান্তি নিকেতনের আশ্রম বালক-বালিকাদের ভোরের সঙ্গীত অর্ঘ তিনি গ্রহণ করেন তার উদয়ন গৃহের পূর্বের জানলার কাছে বসে। উদয়নের প্রবেশদ্বার থেকে ছেলেমেয়েরা গেয়ে উঠেন কবিরই লেখা ‘এদিন আজি কোন ঘরে গো খুলে দিল দ্বার, আজি প্রাতে সূর্য ওঠা সফল হল আজ’।

রবীন্দ্র জীবনীকার প্রভাত কুমার মুখোপাধ্যায় ‘রবীন্দ্র জীবন কথা‘য় কবির মৃত্যু নিয়ে লিখেছেন। তিনি লিখেন ‘ শান্তি নিকেতনে কবি এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে পড়েন। দেহ আর চলছিল না। চিকিৎসা সেবারও ত্রুটি নেই। অবশেষে ডাক্তাররা পরামর্শ করে ঠিক করলেন, অপারেশন ছাড়া উপায় নেই।

৯ শ্রাবণ (২৫ জুলাই) শান্তি নিকেতন থেকে কবিকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়া হলো। শান্তি নিকেতনের সাথে ৭০ বছরের স্মৃতি জড়িত। কবি কি বুঝতে পেরেছিলেন এই তার শেষ যাত্রা? যাবার সময় চোখে রুমাল দিচ্ছেন দেখা গেছে।

৩০ জুলাই জোড়াসাঁকোর বাড়িতে কবির শরীরে অস্ত্রোপাচার হল। তার কিছু পূর্বে শেষ কবিতা রচনা করেন ‘তোমার সৃষ্টির পথ রেখেছ আকীর্ণ করি, বিচিত্র ছলনাজালে হে ছলনাময়ী।’ চিকিৎসকরা অস্ত্রোপাচার করলেন তা নিস্ফল হয়। অবস্থা দ্রুত মন্দের দিকে যেতে লাগলো। জ্ঞান হারালেন। শেষ নিশ্বাস পড়লো রাখি পূর্ণিমার দিন মধ্যাহ্নে, বাংলা ১৩৪৮ সালের ২২ শে শ্রাবণ , ইংরেজি ১৯৪১সালের ৭ আগস্ট। কবি চলে গেলেন অমৃতলোকে।

ব্যক্তিগত ও পারিবারিক জীবনে রবীন্দ্রনাথ বারবার নানা বিপর্যয়ের সম্মুখীন হন। ১৯০২ সালে কবিপত্নী মৃণালিনী দেবীর মৃত্যু হয়। এর কয়েক মাসের মধ্যে কন্যা রেণুকা মারা যান।১৯০৫ সালে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ দেহত্যাগ করেন এবং ১৯০৭ সালে মৃত্যু ঘটে কবির কনিষ্ঠ পুত্র শমীন্দ্রনাথের।

এতগুলি মৃত্যুর শোক রবীন্দ্রনাথকে বিহবল করে তুললেও তিনি শান্তচিত্তে আশ্রমের দায়িত্ব পালন করে যান। পারিবারিক বিপর্যয়ের সঙ্গে সে সময় কবি চরম অর্থসঙ্কটে পড়েন। কিন্তু সমস্ত সঙ্কট থেকে উত্তরণের এক মহাশক্তি তাঁর মধ্যে ছিল। তাই তাঁর কর্মযজ্ঞে ছেদ পড়েনি, থেমে থাকেনি সাহিত্যসাধনা।

বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বিশ্ব দরবারে চিনিয়েছেন বাংলা ভাষাকে। ছিনিয়ে এনেছেন সাহিত্যের নোবেল। বাংলা ভাষার সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ কবি রবীন্দ্রনাথকে গুরুদেব, কবিগুরু ও বিশ্বকবি অভিধায় ভূষিত করা হয়।

এখনো বাঙালির মানসপটে তার দৃঢ় অবস্থান। তাকে বাদ দিয়ে বাঙালির চিন্তা, ভাবের প্রকাশ, রস আস্বাদন— কিছুই সম্ভব না। বাঙালি সত্তায় রবীন্দ্রনাথ সদা জাগ্রত। বাঙালি জীবনে যত ভাব-বৈচিত্র্যের সমারোহ, তার পুরোটাই তিনি ধারণ করেছেন তার গল্প, কবিতা, উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, গান, স্মৃতিকথা আর দর্শনে।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাঙালি জাতির দিকনির্দেশক এক আলোকবর্তিকা। বাঙালির প্রাত্যহিক জীবনের সবকিছুর সঙ্গেই একটু একটু করে মিশে আছে রবীন্দ্রনাথ!

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্ম ১৮৬১ সালের ৭ মে (১২৬৮ বঙ্গাব্দের ২৫ বৈশাখ) কলকাতার জোড়াসাঁকোর অভিজাত ঠাকুর পরিবারে। তাঁর পিতা মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং পিতামহ প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।

তার সাহিত্যকর্ম, সংগীত, জীবনদর্শন, মানবতা— সবকিছুই সত্যিকারের বাঙালি হতে অনুপ্রেরণা জোগায়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা