May 18, 2024, 3:38 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2022-12-10 06:35:13 BdST

আক্রমণাত্মক ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী: কৌশল কি?


প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা আক্রমণাত্মক ভূমিকায় গেছেন। গতকাল আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরী উত্তর এবং দক্ষিণের যৌথ সমাবেশে আকস্মিকভাবেই তিনি যুক্ত হয়েছিলেন।

সম্পাদকদের নিয়ে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হচ্ছিল। প্রধানমন্ত্রী সেখানে টেলিফোন করেন এবং অনলাইনে যুক্ত হয়ে কঠিন এবং কঠোর ভাষায় বক্তব্য রাখেন। সাম্প্রতিক সময়ে এত কঠোর অবস্থানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেখা যায়নি।

প্রধানমন্ত্রী তার গতকালের বক্তৃতায় একদিকে যেমন বিএনপির কঠোর সমালোচনা করেছেন, আওয়ামী লীগকে বিএনপির জ্বালাও-পোড়াও সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে দাঁতভাঙ্গা জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন, অন্যদিকে তিনি সুশীল সমাজ, বিদেশি কূটনীতিক, এমনকি মিডিয়ার সমালোচনা করতেও ছাড়েননি।

প্রশ্ন উঠেছে, প্রধানমন্ত্রী কেন এত আক্রমণাত্মক ভূমিকায় অবতীর্ণ হলেন? তাঁর রাজনৈতিক কৌশল কি?

সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু করতে চাইছে। আন্দোলনের অংশ হিসেবে আগামীকাল ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ করার কথা। কিন্তু এই মহাসমাবেশের আগেই ৭ ডিসেম্বর বিএনপি নয়াপল্টন এলাকা দখল করার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। পুলিশের সঙ্গে বিএনপি সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এই সংঘর্ষের প্রেক্ষিতে রাজনীতিতে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে।

এই উত্তেজনার প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রী নেতাদের সামনে তার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করলেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তৃতায় বলেছেন, এরপর আগুন দিতে গেলে সবার হাতে মোবাইল ফোনে ভিডিও করে যে হাত দিয়ে আগুন দিতে যাবে ওই হাত ওই আগুনে পুড়িয়ে দিতে হবে, পোড়ার যন্ত্রণাটা তাদের বুঝিয়ে দিতে হবে। শুধু তাই নয়, প্রধানমন্ত্রী এটিও বলেছেন যে, আওয়ামী লীগ ভেসে আসেনি, আওয়ামী লীগ কারো পকেটের সংগঠন নয়। তিনি বলেছেন, যে হাত দিয়ে আঘাত করা হবে সেই হাত ভেঙে দেওয়া হবে।

এছাড়াও প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে কূটনীতিকদেরও তীব্র সমালোচনা করেন। বিশেষ করে তারেক জিয়াকে বাংলাদেশে ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য তিনি আবার ব্রিটিশ সরকারকে আহ্বান জানান। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বলবো তারেক জিয়াকে দেশে ফেরত পাঠাতে। কারণ, সে সাজাপ্রাপ্ত আসামি। তারা বহিঃবিশ্বে মানবতার কথা বলে, দুর্নীতির কথা বলে আবার সেই খুনিকে, দুর্নীতিবাজকে তাদের দেশে আশ্রয় দেয়। কাজেই, তাদেরকে বাংলাদেশে হ্যান্ডওভার করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রী একই সাথে কিছু কিছু মিডিয়ার অতিরিক্ত বিরোধীদল প্রীতিরও কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, যে সমস্ত মিডিয়া এখন বিএনপির কাছে ধরনা দিচ্ছে এত টেলিভিশন আমারই দেওয়া। আমি যদি উন্মুক্ত করে না দিতাম এতগুলো মানুষের চাকরি হতো না, এত মানুষ ব্যবসাও করতে পারতো না। তিনি এটিও বলেন যে, মিডিয়ার এত তেল মারা কেন, এই তেল মারাও তিনি দেখতে চান।

এই সমস্ত বক্তব্যের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি সুস্পষ্ট একটি বার্তা দিলেন। তিনি জানিয়ে দিলেন যে, এখন আওয়ামী লীগ তার নেতৃত্বে আক্রমনাত্মক ভূমিকায়।

সবসময় বলা হয়, 'অফেন্স ইস দ্যা বেস্ট ডিফেন্স'। এই আক্রমণাত্মক ভূমিকায় প্রধানমন্ত্রী অবতীর্ণ হলেন। কারণ, সাম্প্রতিক সময়ে বিএনপির আন্দোলনের চেয়েও ষড়যন্ত্র হচ্ছে বেশি। বিশেষ করে বিএনপি ছোটখাটো আন্দোলনগুলোকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে তোলা, একটু আন্দোলনের প্রেক্ষিতে কূটনৈতিক মহলে নানা রকম বিবৃতি, অতি উৎসাহ এবং সুশীল সমাজের মধ্যে এক ধরনের আহাজারি, সবকিছু মিলিয়ে সরকারকে চাপে ফেলার চেষ্টা চলছে।

এই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী তার কঠোর অবস্থান স্পষ্ট করলেন। এর মাধ্যমে যারা ষড়যন্ত্র করছে তাদের জন্য অন্তত একটি বার্তা গেলো যে, শেখ হাসিনা অত্যন্ত সাহসী, তিনি এসবে ভয় পান না। আর এই বার্তাটির ফলে একটি বিষয় সুস্পষ্ট হলো, যারা ষড়যন্ত্রকারী, যারা প্রকাশ্যে বা গোপনে বিরোধীদলের সহিংসতায় উস্কানি দিচ্ছে বা সহায়তা করছে তারা দ্বিতীয়বার চিন্তা করবেন। কারণ, শেখ হাসিনা যেটি বলেন সেটি করেন।

যাদেরকেই রাষ্ট্র, সরকার এবং জনগণের বিরুদ্ধে পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে তিনি এতোটুকু কার্পূণ্য করবেন না। এটি তিনি অতীতেও প্রমাণ করেছেন, এই বার্তা দিয়ে তিনি আবার সেটি প্রমাণ করলেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা