May 18, 2024, 6:25 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-01-10 05:33:04 BdST

আইডিআরএ'র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে নিয়োগ # দুদকের মামলা দায়ের # ডিবি কর্তৃক গ্রেফতারের পর রহস্যজনক কারনে মুক্তিদুর্নীতির মামলায় দন্ডিত হয়েও বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন হেমায়েত উল্লাহ


একসময়ে ভালো ব্যবসা করা ফারইষ্ট লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকুরীকালীন সময়ে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাৎ, অব্যবস্থাপনা, নানাবিধ আর্থিক অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে বরখাস্তকৃত সাবেক মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা হেমায়েত উল্লাহ বীমা নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ'র নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বহাল তবিয়তে চাকুরী করছেন পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডে। 

দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হওয়ায় হেমায়েত উল্লাহকে অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানে নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা জারি করে বীমা উন্নয়ন ও কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। 

গত বছরের ২১শে ডিসেম্বর বীমা কোম্পানিগুলোর উদ্দেশে এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে সংস্থাটি। প্রজ্ঞাপনটি সব লাইফ ও নন-লাইফ বীমা প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের কাছেও পাঠানো হয়।

চিঠিতে বলা হয়েছে, কোম্পানি পরিচালনার ক্ষেত্রে বিভিন্ন অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, আর্থিক অনিয়ম, বীমা পলিসি গ্রাহক ও বীমাকারীর স্বার্থের জন্য ক্ষতিকর কর্মকাণ্ডের তথ্য আইডিআরএর নজরে এসেছে। বীমা গ্রাহকদের অভিযোগও রয়েছে তাঁর বিরুদ্ধে। সব অনিয়মের তথ্য–প্রমাণ আইডিআরএর কাছে আছে।

বলা হয়েছে, হেমায়েত উল্লাহর বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন করে তা নিজ ভোগ দখলে রেখে এবং মিথ্যা তথ্যসংবলিত সম্পদ বিবরণী দাখিলের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। তাঁর বিদেশ গমনেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।

হেমায়েত উল্লাহর এসব কর্মকাণ্ডের ফলে বীমা শিল্পের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুন্ন হয়েছে। এসব কোম্পানিতে বীমা পলিসি গ্রাহকগণ তাদের ন্যায্য দাবি পাচ্ছে না। ফলে জনমনে বীমা শিল্পের প্রতি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে। এসবের জন্য বীমা প্রতিষ্ঠানগুলো নতুন ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হচ্ছে।

বীমা শিল্প তথা বীমা গ্রাহকদের স্বার্থ রক্ষার্থে এবং দুদক ও কর্তৃপক্ষের চলমান কার্যক্রম সমাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত হেমায়ত উল্লাহকে কোনো বীমা প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে পারবে না। তাকে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে আইডিআরএর অনাপত্তি নিতে হবে।

এরপরও ফারইস্ট থেকে চাকুরিচ্যুত হওয়ার পর হেমায়েত পদ্মা ইসলামী লাইফে সিইও হিসেবে যোগদানের চেষ্টা করে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ তার নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দেয়নি। ফলে পদ্মা লাইফে তিনি সিইও হতে না পারলেও পরবর্তীতে চীফ কনসাল্টেন্ট হিসেবে যোগদান করে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মা ইসলামী লাইফের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফখরুল ইসলাম বলেন, হেমায়েত উল্লাহকে সিইও হিসেবে নিয়োগের জন্য পর্ষদ আইডিআর এর অনুমোদন পায়নি। পরবর্তীতে তাকে চীফ কনসাল্টেন্ট হিসেবে রাখা হয়।

বিষয়টি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরে আসার পর আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনী দুদকের দায়ের করা মামলার পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের ১৯শে সেপ্টেম্বর হেমায়েত উল্লাহকে পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানির অফিস থেকে গ্রেফতার করেও অজ্ঞাত কারনে ছেড়ে দেয়। 

শাহবাগ থানায় দায়েরকৃত ৮শ’ কোটি টাকা আত্মসাতের মামলায় ফারইস্ট ইসলামী লাইফের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম ও সাবেক দুই পরিচালক এম এ খালেক ও তার ছেলে রুবাইয়াত খালেদকে গ্রেফতার করে আইন-শৃংখলা বাহিনী। এই মামলার ১০ নং এজাহারভুক্ত আসামি হেমায়েত উল্লাহ।

ছাড়া পেয়ে হেমায়েত উল্লাহ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠে এবং পুনরায় পদ্মা লাইফ ইন্স্যুরেন্সে চাকুরীতে যোগ দেন যা মূলত আইন পরিপন্থী। 

অর্থ ও ক্ষমতার জোরে আইন, আদালত, দুদক এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে যাচ্ছেন হেমায়েত উল্লাহ। কাউকেই তিনি তোয়াক্কা করছেন না।

দুর্নীতি দমন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর, বীমা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাকের ডগায় এই সমস্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

এরপর ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে বিশেষ নিরীক্ষক নিয়োগ ও দুর্নীতির তদন্ত শুরু করে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), সরকারের আর্থিক গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ ফাইনান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এবং বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।

উল্লেখ্য যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের করা মামলায় অবৈধভাবে সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগে দুদক আইনের ২৬ (২), ও ২৭ (১) ধারা ও দন্ডবিধির ১০৯ ধারা মোতাবেক ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ ও তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারকে পৃথকভাবে চার বছর করে সশ্রম কারাদণ্ড দেয় আদালত। একই সঙ্গে উভয়কে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়েছিল।

মামলার বিবরণে জানা যায়, ফারইস্ট ইসলামি লাইফ ইন্সুরেন্সের প্রধান নির্বাহী মো. হেমায়েত উল্ল্যাহ ও তার স্ত্রী ফরিদা আক্তারের বিরুদ্ধে মোট ৬ কোটি ৪২ লাখ ৭৫ হাজার ৫৪৮ টাকার অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের অভিযোগ আনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ২০১৯ সালের ২৫ জুলাই এ অভিযোগে দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক মো. মোশাররফ হোসেন মৃধা বাদি হয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। পরে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে মর্মে ২০২১ সালে অভিযোগ দাখিল করা হয়। 

দীর্ঘদিন শুনানি শেষে আদালত রায় ঘোষণা করেন। মামলার আভিযোগে বলা হয়, হেমায়েত উল্ল্যাহ অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জন করে স্ত্রীর নামে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করেন। তাঁর স্ত্রী গৃহিনী হলেও দুদকের নোটিশের জবাবে ব্যবসায়ী হিসেবে প্রদর্শন করা হয়।

হেমায়েত উল্লাহ ২০১১ থেকে ২০২১ সালের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিরবচ্ছিন্নভাবে ফারইস্ট ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানিতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। তিনি বীমা আইন, ২০১০ ও বীমা আইনের বিভিন্ন বিধিবিধান অনুযায়ী কোম্পানি পরিচালনার জন্য দায়ী থাকবেন মর্মে তার নিয়োগপত্রে সুস্পষ্টভাবে শর্ত আরোপ করা হয়েছিল। কিন্তু দায়িত্বকালে কোম্পানিতে ব্যাপক অনিয়ম সংঘটিত হয়েছে মর্মে সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়। এজন্য তিনি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে দায়ী।

বীমা খাতের একজন ক্ষমতাধর ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হওয়ার পর সাজা হওয়ার মধ্য দিয়ে একটি দৃষ্টান্ত স্থাপিত হলেও উক্ত ব্যক্তি গ্রেফতার হয়েও রহস্যজনকভাবে ছাড়া পেয়ে আরেকটি বীমা কোম্পানিতে উচ্চ পদে বহাল তবিয়তে চাকুরী করায় বীমাখাত সংশ্লিষ্টদের মধ্যে যেমন হতাশা বিরাজ করছে তেমনি দুর্নীতিবাজরা এতে আরও প্রশ্রয় পাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা, যেটি কোনভাবেই কাম্য নয়।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা