April 26, 2024, 5:05 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-02-13 10:33:05 BdST

গেন্ডারিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিপনের নির্দেশে সাংবাদিককে হত্যার হুমকি


পুরাতন ঢাকার মানুষের কাছে এক মূর্তমান আতংকের নাম ভয়ংকর সন্ত্রাসী শিপন। শিপন বাহিনীর অন্যতম সহযোগী দূর্ধর্ষ আলমগীর হোসেন, পিতা-মন্তাজ উদ্দিন, সাং-৪৫/১, কে.বি. রোড থানা-গেন্ডারিয়া, সন্ত্রাসী শিপনের ডানহাত নামে খ্যাত ফয়সাল। (ফয়সালের ঠিকানা: ঢালকানগর নেসারিয়া মাদ্রাসা ও ছাপড়া মসজিদ গলি।

তাদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে রাজধানী জুড়ে ১০০টির ও বেশি কিশোর গ্যাং। শিপনের অন্যতম বিশ্বস্ত সহযোগী আলমগীর লোক দেখানো দোকানের কর্মচারীর তকমা লাগালেও, তার মূল কাজ শিপনের অবৈধ টাকা আদান প্রদান করা। তাইতো পলাতক শিপনের বাসায় প্রবেশাধিকার যে একমাত্র আলমগীরের।

গত ১ যুগেরও বেশি সময় ধরে শিপনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে ভীত সন্ত্রস্ত সাধারণ জনগণ। নতুন বাড়ি নির্মাণ করলেই চাঁদা দিতে হয়ে শিপনকে। জেলে থাকা ২৩ শীর্ষ সন্ত্রাসীর অন্যতম সন্ত্রাসী পিচ্চি হেলাল, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) এর অংগ সংগঠন ছাত্রদল নেতা ইসহাক সরকার এর নির্দেশে সকল অপকর্ম নিয়ন্ত্রণ করে শিপন।

টাকার বিনিময়ে মানুষ খুন, চাঁদাবাজি, অস্ত্র ব্যবসা, মাদক ব্যবসায় বেপরোয়া শিপন ও আলমগীর বর্তমানে সরাসরি বিএনপি রাজনীতির সাথে জড়িত। আগে ছিল গেন্ডারিয়া থানা যুবদলের সহ-সভাপতি। বর্তমানে আলমগীর কেবি রোডে ইউনিটের সভাপতি, আর শিপন ৪৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সিনিয়র সহ সভাপতি। গেন্ডারিয়া থানা বিএনপির প্রতিটি প্রোগ্রামে তাদের সতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ দেখা যায়।

জানা যায়, সরকারবিরোধী কর্মসূচির নামে জ্বালাও পোড়াও এবং নানান নাশকতামূলক কর্মকান্ডে শিপন ও তার বাহিনীর সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে।

গেন্ডারিয়ার কুখ্যাত সন্ত্রাসী আশরাফ উদ্দিন শিপন ওরফে লম্বু ওরফে কিলার শিপন , পিতা-মৃত লাল মিয়া মেম্বার, সাং-৪৫/১ কে.বি. রোড, থানা-গেন্ডারিয়া, ঢাকা-১২০৪। (শিপনের সম্ভাব্য অবস্থানের ঠিকানা: হাসনাবাদ, বসুন্ধরা রিভারভিউ যাওয়ার পথে মাদার ড্রিম কিন্ডাগার্টেন স্কুল গলি)। যার নামে রয়েছে হত্যা, চাঁদাবাজি, চোরাচালান, মাদক ব্যাবসা, ধর্মীয় উস্কানি, বিশেষ ক্ষমতা আইনে অস্ত্র, বিস্ফোরক মামলাসহ রাজধানীর বংশাল, সূত্রাপুর, গেন্ডারিয়া, শ্যামপুর, কদমতলী থানায় প্রায় অর্ধশত মামলা ও জিডি রয়েছে।

এমনকি আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন থাকাবস্থায়ও বিএনপি দলীয় ক্যাডার শিপনের হাত থেকে রেহাই পায়নি সরকার দলীয় ৪৬নং ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ সাধারণ সম্পাদক দ্বীন ইসলাম দিলা ও সাধারণ সম্পাদক শরিফুর রহমান শরীফ।

শিপনের বিরুদ্ধে রয়েছে অসংখ্য হত্যার অভিযোগ ও মামলা। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগ ৪৬নং ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক দিন ইসলাম দিলা হত্যা, রুনু হত্যা, রাজিব হত্যা, সিদ্দিক হত্যাসহ একাধিক চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদক, ১৩ বস্তা ফেন্সিডিল মামলা, চোরাচালান, ছিনতাই, বিস্ফোরক ও বিশেষ ক্ষমতা আইনে অর্ধশত মামলা।

সরকার যখন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স দেখিয়ে চলছে, সেখানে কার মদদে কুখ্যাত সন্ত্রাস কিলার শিপন তার অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে এমন প্রশ্ন থেকেই যায়।

অভিযোগ উঠেছে যে, সম্প্রতি শিপনের বর্তমান টার্গেট সিনিয়র সাংবাদিক ও "বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি" ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক আল বারু মুস্তাকিম নিবিড়কে হত্যা করা।

সাংবাদিক মুস্তাকিম নিবিড় সস্পর্কে তার সৎ ভাতিজা। চাচার অপকর্মের প্রতিবাদ করা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারন করা এবং অবৈধ খাল উচ্ছেদের সংবাদ প্রকাশ করে এলাকায় ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠে সাংবাদিক মুস্তাকিম নিবিড়। তাই তো গাত্রদাহ শিপন ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের। তাই শিপনের সহযোগীরা সাংবাদিক মুস্তাকিম নিবিড়কে হত্যার হুমকি দিয়েছে। জীবন রক্ষার্থে এই সন্ত্রাসী গংয়ের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় বিভিন্ন সময়ে দুটি জিডি করা আছে সাংবাদিক মুস্তাকিম নিবিড়ের। জিডি নংঃ ৪৯৬ এবং ৭২৫।

সাংবাদিক নিবিড়কে হুমকি প্রদানের তীব্র নিন্দা জানিয়েছে জাতীয় প্রেসক্লাব, প্রেস কাউন্সিল এর সদস্যগন, বিএমএসএফ, ডিইউজে, ওল্ড ঢাকা সাংবাদিক ফোরাম সহ অন্যান্য সাংবাদিক সংগঠন। তারা হুশিয়ারি দিয়েছে কোন বিএনপি জামাতের সন্ত্রাসী সাংবাদিক মুস্তাকিম নিবিড়ের গায়ে হাত দিলে সাংবাদিক সমাজ একচুলও ছাড় দিবে না।

এদিকে বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমি মহানগর দক্ষিণের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মুস্তাকিম নিবিড়কে হুমকি দেয়ায় ক্ষোভে ফুসছে বঙ্গবন্ধু শিশু একাডেমির কেন্দ্রীয় এবং ঢাঃমঃদঃ এর সকল থানা ইউনিটের নেতৃবৃন্দ।

এলাকায় বিএনপির রাজত্ব কায়েম করতে প্রায়ই নানা অপতৎপরতা চালায় শিপন। হিন্দুদের লীজ নেয়া জমিতে মসজিদ নির্মাণ করিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা সৃষ্টি করে বর্তমান সরকার উৎখাতের প্রয়াসও চালিয়েছে সন্ত্রাসী শিপন। স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা শরিফুর রহমান শরিফকে ৬ রাউন্ড গুলি করে হত্যার চেষ্টা ও বংশাল থানা এলাকায় সিদ্দিক হত্যা মামলার হুলিয়া নিয়ে ২০১৩ সনে একাধিক অস্ত্রসহ ঢাকা গোয়েন্দা পুলিশ ডিবি’র কাছে আটক হয় শিপন। কিন্তু রহস্যজনক কারণে কিছুদিন পর ফের জামিনে বেরিয়ে আরও বেপরোয়া হয়ে পড়ে শিপন। ২০১৮ সালে ছিনতাই করতে গিয়ে শ্যামপুর থানা পুলিশের কাছে হাতেনাতে ধরা পড়েও জামিনে বেরিয়ে যায় শিপন।

গেন্ডারিয়াসহ আশপাশের এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আসছে শিপন। ক্রসফায়ারে নিহত এক সময়ের কুখ্যাত সন্ত্রাস ডাকাত শহিদ ও ফিরোজ আলম পিন্টুর অন্যতম সহযোগী আশরাফ উদ্দিন শিপন। বর্তমানে কেরানীগঞ্জ হাসনাবাদ এলাকায় বসবাস করেও সন্ত্রাসী বাহিনীর মাধ্যমে পুরান ঢাকায় চাঁদাবাজি, অস্ত্র, মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি নামধারী সন্ত্রাসী কিলার শিপন। করছে সরকারবিরোধী নানান নীলনকশা। দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় হরহামেশাই দেখা যায় কিলার শিপনের নানান অপরাধের ফিরিস্তি।

প্রশাসনের সন্ত্রাসীদের তালিকায় রেড এলার্টে রয়েছে তার নাম। ইন্টারপোলের রেড নোটিশপ্রাপ্ত ও সরকারের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী কচির সহযোগী আশরাফ উদ্দিন ওরফে শিপনকে গত ২০ এপ্রিল ২০১৮ ইং তারিখ শুক্রবার রাতে শ্যামপুরের আইজি গেট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে শ্যামপুর থানা পুলিশ। এ সময় কচির দুই সহযোগী ইমন এবং ইরফান পালিয়ে যায়। শিপনের বিরুদ্ধে শ্যামপুর থানায় আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নকারী অপরাধ (দ্রুত বিচার) আইন ২০০২ (সংশোধনী/০৯) আইনে মামলা করা হয়। এছাড়াও শিপনের বিরুদ্ধে ২০১০ সালে গেন্ডারিয়া থানায় খুনের মামলা, ২০১২ সালে চাঁদাবাজির মামলা, ২০১৩ সালে কদমতলী থানায় অস্ত্র আইনে ও ২০১৮ সালে গেন্ডারিয়া থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে একাধিক মামলা রয়েছে। শিপনের নামে শ্যামপুর, গেন্ডারিয়া এবং কদমতলী থানায় হত্যা, অস্ত্র এবং চাঁদাবাজির পাঁচটি মামলা রয়েছে।

এমন আরও অনেক ঘটনাই পুলিশের নথিভুক্ত হয় না। দেশের বাইরে পলাতক বা কারাবন্দি শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনুপস্থিতির সুযোগে তাদের সহযোগী হিসেবে কিংবা নিজেরাই দল গঠন করে রাজধানী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে শিপনরা। এলাকাভিত্তিক সন্ত্রাসী কার্যক্রম, চাঁদাবাজি, ছিনতাই, মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে দেদারছে। এছাড়াও বিএনপির অগ্নিসন্ত্রাসের রাজনীতির সাথে সরাসরি জড়িত এই শিপন। সন্ত্রাসী শিপনের নির্দেশেই বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী সরকারকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় নাশকতার সৃষ্টি করা হয়। সম্প্রতি রাজধানীতে কয়েকটি গাড়িতে অগ্নিসংযোগের ঘটনা সরাসরি নির্দেশদাতা এই শিপন। যা তার মোবাইল নম্বর ট্র্যাকিংসহ অধিকতর তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে।

শতাধিক মামলা ও সাধারণ ডায়েরি থাকার পরেও এখনও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরাছোঁয়ার বাইরে কুখ্যাত সন্ত্রাসী শিপন। ভুক্তভোগী সাধারণ জনগনের একটাই আকাঙ্খা কবে শাস্তির মুখোমুখি হবে এই কুখ্যাত সন্ত্রাসী কিলার শিপন ও তার সহযোগীরা।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা