May 5, 2024, 12:46 pm


নেহাল আহমেদ

Published:
2023-02-17 19:58:47 BdST

আজ জীবনানন্দ দাশের জন্মদিন


জীবনানন্দ দাশ ছিলেন বিংশ শতাব্দীর প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক, শিক্ষাবিদ ও প্রাবন্ধিক। তিনি ‘ব্রহ্মবাদী’ পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন।

জীবনানন্দ দাশ ১৮৯৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি বরিশালে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁদের আদি নিবাস ছিল বিক্রমপুরের গাওপাড়া গ্রামে। তাঁর পিতা সত্যানন্দ দাশ ছিলেন স্কুলশিক্ষক ও সমাজসেবক। তিনি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। মাতা কুসুমকুমারী দাশ ছিলেন একজন কবি।

জীবনানন্দের মাতা কুসুমকুমারী দাশ কবিতা লিখতেন। তাঁর সুপরিচিত কবিতা আদর্শ ছেলে (আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না বড় হয়ে কাজে বড়ো হবে) আজও শিশুশ্রেণির পাঠ্য।

জীবনানন্দ দাশ বরিশাল ব্রজমোহন স্কুল থেকে ম্যাট্রিক, বি এম কলেজ থেকে আই এ এবং কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে ইংরেজিতে অনার্সসহ বি.এ ও ইংরেজিতে এম.এ পাস করেন। আইন কলেজে ভর্তি হলেও শেষ পর্যন্ত তিনি পরীক্ষা দেননি।

জীবনানন্দ কলকাতা সিটি কলেজে ১৯২২ সালে ইংরেজি সাহিত্যে অধ্যাপনা শুরু করেন। ১৯২৯ সালে তিনি সদ্য প্রতিষ্ঠিত বাগেরহাট প্রফুল্লচন্দ্র কলেজে যোগ দেন, কিন্তু কিছুদিন পর চাকরি ছেড়ে কলকাতায় চলে যান

জীবনানন্দ দাশ বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃতদের মধ্যে অন্যতম। বুদ্ধদেব বসু তাঁকে ‘নির্জনতম কবি’ এবং অন্নদাশঙ্কর রায় ‘শুদ্ধতম কবি’ অভিধায় আখ্যায়িত করেছেন। তিনি ছিলেন একজন কালসচেতন ও ইতিহাসচেতন কবি।

বিখ্যাত গ্রন্থগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, জীবনানন্দ দাশের শ্রেষ্ঠ কবিতা, রূপসী বাংলা, বেলা অবেলা কালবেলা। তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন।

জীবনানন্দ দাশ ১৯৫৫ সালে কলকাতায় এক ট্রাম দুর্ঘটনায় আহত হন। পরে ২২ অক্টোবর মারা যান।

জীবনান্দদাসের মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকাজ ও অশোকের বিদর্ভ নগর।

বনলতার চুলের সৌন্দর্যের উপমা দিতে গিয়ে কবি লিখেছেন ‘চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা’। বিদিশার নিশা কি শুধুই বনলতার চুলের সৌন্দর্যের উপমায় ব্যবহার করা হয়েছে? নাকি এরও গুঢ় অর্থ রয়েছে?

কালিদাসের মেঘদূত-এ আছে এই প্রশ্নের উত্তর। খুব ছোটবেলা থেকেই কালীদাসের রচনাবলি পড়া শুরু করেছিলেন জীবনানন্দ। আর একটু তলিয়ে দেখলে জানা যায় মেঘদূতে প্রাচীন ভারতের এই বিদিশা নগরীকে উপস্থাপন করা হয়েছে সকল পাপাচারের কেন্দ্র হিসেবে। পেশাদার পতিতাদের আশ্রয়স্থল হিসেবেও এই নগরীকে দেখানো হয়েছে মেঘদূতে।

শ্রাবস্তী হচ্ছে কোশল রাজ্যের এক সমৃদ্ধশালী নগরী। প্রাচীন ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের শুরু খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকে। এর আগেও যে প্রাচীন ভারতে রাজনৈতিক ইতিহাস ছিল না তা নয়, তবে সেই ইতিবৃত্তটি আজও তেমন স্পষ্ট নয়। খ্রিস্টপূর্ব ষষ্ঠ শতকের দিকে প্রাচীন ভারতে ষোলোটি স্থানীয় রাজ্য গড়ে উঠেছিল। এই রাজ্যেরই এক সমৃদ্ধশালী নগরী ছিল শ্রাবস্তী।

পণ্ডিতগণ স্থির করিয়াছেন,-বিহারের অন্তর্গত বর্তমান রাজগীর হইতে সাত মাইল দূরে, বরগাঁ (Bar gaon) গ্রামে, প্ৰাচীন কালে নালন্দার বিশ্ববিদ্যালয় অবস্থিত ছিল। আজিও তাহার যে ধ্বংসাবশেষ দৃষ্ট হয়, তাহা প্রকৃতই বিস্ময়াবহ। নালন্দার অবস্থান সম্বন্ধে নানা মতভেদ দৃষ্ট হয়। পাশ্চাত্য প্রত্নতত্ত্ববিৎ বুকানন ঐ স্থানের ভগ্নস্তুপ দেখিয়া স্থির করিয়াছিলেন, প্ৰাচীন কালে কোনও রাজা ঐ নগরে রাজত্ব করিতেন। বিহারের জৈনধৰ্ম্ম-যাজকগণ র্তাহাকে বলিয়াছিলেন,-
উহ্য রাজা শ্রেণিকের এবং তাঙ্গার পূর্ব-পুরুষগণের রাজধানীর ভগ্নাবশেষ। হিন্দুগণের মতে ঐ স্থানে অতি প্ৰাচীন কালে বিদর্ভ-রাজের রাজধানী পুরাণ-প্ৰসিদ্ধ কুণ্ডিন নগর বিদ্যমান ছিল। বৰ্ত্তমান বেরার-প্ৰদেশ প্রাচীন কালে বিন্দর্ভ নামে অভিহিত হইত।

বাংলা কবিতার জীবনানন্দ দাশ সম্পর্কে কিছু বিশ্রী মিথ আছে যা ভেঙে যাওয়া জরুরি।
জীবননান্দ সম্পর্কে যেমন বলা হয়ে থাকে জীবনানন্দ দাশ অনভিজাত ও দরিদ্র ছিলেন। এটা পুরোপুরি ভুল।

জীবনানন্দের পরিবার বরিশালের অতি সম্মানিত পরিবার ছিল। তাঁর পিতা সম্মানিত শিক্ষক ছিলেন এবং শহরের ব্রাহ্ম সমাজের আচার্য ছিলেন। ব্রজমোহন বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে দীর্ঘসময় দায়িত্ব পালন করেন এবং বরিশাল ব্রাহ্মসমাজের সম্পাদক ও উপাচার্য ছিলেন। এছাড়াও তিনি ব্রহ্মবাদী পত্রিকার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন। ধর্ম, নীতি, শিক্ষা ও সমাজ-বিষয়ে তার বহু রচনা ব্রহ্মবাদী, তত্ত্বকৌমুদী, প্রবাসী প্রভৃতি পত্রিকায় নিয়মিত প্রকাশিত হত।।

তার মা কুসুম কুমারীকে সবাই চেনেন। তার বিখ্যাত কবিতা 'আমাদের দেশে সেই ছেলে কবে হবে, কথায় বড় না হয়ে কাজে বড় হবে'।

শুধু তাই নয় রবীন্দ্রনাথের সঙ্গে পরিবারটির যোগাযোগ ছিল। বাবার সূত্রেই জীবনানন্দ একাধিক চাকরি পেয়েছিলেন, কিন্তু টেঁকাতে পারেননি। সেটাও সম্ভবত কবিতার প্রতি ভালবাসার কারনে। কিংবা কবি জীবন যাপনের কারনে। জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তাঁর জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি।

দেশভাগের আগে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার কারনে জীবনানন্দ কলকাতা চলে যান। পরবর্তীতে দেশভাগের সময় বরিশাল পাকিস্তানের এবং কলকাতা ভারতের অন্তর্গত হয়ে যাওয়ায় বরিশালে আর ফিরতে পারেননি। যদিও তার নিজ জন্মস্থানে ফিরে যাওয়ার আকুলতা সবসময় কাজ করেছে।

১৯৫৩ সালে কবি কায়সুল হকের কাছে পাঠানো একটা চিঠিতে লিখেছিলেন ’পূর্বপাকিস্তান আমার জন্মস্থান, সেখানে যেতে আমি অনেকদিন থেকেই ব্যাকুল, কিন্তু পার্সপোর্ট ইত্যাদি কবে জোগাড় করে উঠতে পারব বলে যেতে পারছি না…।”

কবি শামসুর রহমান এবং কায়সুল হকের সাথে প্রায়ই দেখা করতেন। জীবনানন্দ তখন কবিতা লিখলে প্রশংসার থেকে সমালোচিত বেশি হতেন।

সজনীকান্ত সহ আরও কয়েকজন রীতিমত জীবনানন্দের প্রতিটি কবিতা তুলোধুনো করে ছাড়তেন। এক বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের পক্ষে শুধু কলম ধরেছিলেন।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা