May 5, 2024, 3:55 am


নেহাল আহমেদ

Published:
2023-02-20 21:27:05 BdST

উপেক্ষিত আদালতের আদেশনামফলকে বাংলার ব্যবহারে সর্বত্র অনীহা


বিশ্বের দরবারে বাংলা ভাষা বুক উঁচু করে দাঁড়ালেও, বাংলাদেশের অবস্থা নাজুক। সারা বছর জুতা পায়ে শহীদ মিনারে বসে আড্ডা দেয়া আর ২১ ফেব্রুয়ারির সকালে খালি পায়ে ফুল দেয়া। অনেক শহীদ মিনারের পাশে রাতে বসে নেশার আড্ডা। শুধু কি তাই? দেশের অধিকাংশ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য পড়ানো হয় না। এই কি বাংলার প্রতি ভালবাসা?

এখানেই ক্ষান্ত নয়, রাজধানী থেকে শুরু করে মফস্বল শহরগুলোর অলিতে-গলিতে ইংরেজি  মিডিয়াম স্কুলের ছড়াছড়ি। নিম্নবিত্ত থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত সবাই সন্তানদের নিয়ে এসব তথাকথিত ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ছুটছেন।

সরকারের বিনামূল্যের প্রাথমিক শিক্ষাকে গরিবি শিক্ষা ভেবে অনেক অভিভাবকই সেদিকে যাচ্ছেন না। টেলিভিশন নাটক, এফএম রেডিওতে এমন ভাষা বলা হচ্ছে যার সাথে প্রকৃত বাংলার কোনো সম্পর্কই নেই।

সোশ্যাল মাধ্যমগুলোতে ইংরেজি বানানে বাংলার অভিনব রূপ দেখা যাচ্ছে। এমন বাংলাদেশের জন্যই কি ১৯৫২-তে প্রাণ দিয়েছিলেন রফিক, জব্বার, বরকত, শফিক, সালামসহ আরো অনেকে?

দেশের এই বেহাল দশা দেখেই সম্প্রতি মহামান্য হাইকোর্ট সর্বস্তরে বাংলা ভাষা ব্যবহারের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। আমরা তো সবই পারি। তার প্রমাণ দিয়েছি ১৯৫২, ১৯৬৯ আর ১৯৭১-এ।

সেই আমরাই কি আবার হেরে যাব? না, যে জাতি নির্ভীক, দুর্বার সে জাতি হারতে পারে না। তাই যে করেই হোক দেশের ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতির বিকাশ ও চর্চা করে বিদেশি অপসংস্কৃতি রোধ করতে হবে

বাঙালি জাতিসত্তা ও স্বাধীনতা আন্দোলনের উন্মেষ ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। পৃথিবীতে একমাত্র রাষ্ট্র হিসেবে মাতৃভাষার জন্য সংগ্রামের গৌরবও একমাত্র বাংলাদেশের বাঙালিদের। মাতৃভাষার জন্য বাঙালির আন্দোলন ও আত্মত্যাগ আজ বিশ্ব স্বীকৃত। ভাষা শহীদদের আত্মত্যাগের পথ ধরেই বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। মাতৃভাষা রক্ষার জন্য বাংলার সূর্য সন্তানদের আত্মত্যাগ কালক্রমে বাংলাদেশের সীমা অতিক্রম করে বিশ্বের সব ভাষাভাষীর জন্য পরিণত হয়েছে মাতৃভাষা রক্ষার অনুপ্রেরণায়। দিবসটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ইউনেসকোর ঘোষণা দেওয়া ছিল সেই আত্মত্যাগের অসামান্য স্বীকৃতি।

কিন্তু শহীদদের আত্মত্যাগের ভাষা আন্দোলনের দীর্ঘ বছর পার হয়ে গেলেও বাংলাদেশে এখনও নিশ্চিত করা যায়নি সর্বত্র বাংলার ব্যবহার। ২০২১ সালেই বাংলাদেশ পালন করলো স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী। কিন্তু দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও এখনও বাংলাদেশের অফিস-আদালতের কার্যক্রম থেকে শুরু করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকেও নিশ্চিত করা যায়নি বাংলার ব্যবহার।

ফেব্রুয়ারি মাস এলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের নামফলকে ইংরেজির পরিবর্তে বাংলা ভাষার ব্যবহার নিশ্চিতকরণে কিছু অভিযান দৃশ্যমান হলেও এখনও এ বিষয়ে রয়েছে কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা।

সরেজমিনে দেখা যায়, রাজবাড়ীর বিভিন্ন এলাকায় বিশেষ করে কর্পোরেট অফিসের পাশাপাশি শপিং মল ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নাম ইংরেজিতেই বাংলা অক্ষরের ছিটে ফোটাও নেই।কারো কারো সাথে কথা বলে জানা যায় তারা আসলে এতে ভুলের কিছু দেখেন না। একই অবস্থা এলাকার অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের নামফলকেও। বিশেষ করে বিভিন্ন রেঁস্তোরার নামকরণ এখনও ইংরেজিতে। প্রতিষ্ঠানের নামফলকে ইংরেজি ব্যবহারের চিত্র রাজবাড়ী সহ সারাদেশে প্রায় একই রকম।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা