May 18, 2024, 10:48 pm


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2023-06-17 16:35:59 BdST

মোহাম্মদপুরে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী কর্তৃক স্বামীকে হত্যা


রাজধানীর মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডে বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও সমাজসেবক আমিনুল ইসলাম মিঠু (৪৮) কে তার স্ত্রী শামীমা ইসলাম ইভা (৪২) কর্তৃক হত্যা করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাদের পরিবারে স্বামী স্ত্রী ছাড়াও কলেজ পড়ুয়া একমাত্র কন্যা সন্তান রয়েছে।

১১ই জুন রাত আনুমানিক ৩টায় এ ঘটনা ঘটে। ১৪ই জুন এই বিষয়ে মোহাম্মদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন নিহতের বড় ভাই আবুল কালাম আজাদ। মামলা নং ৬৮/২৩। উক্ত মামলায় শামীমা ইসলাম ইভাকে প্রধান আাসামি করা হয়েছে। ২ নাম্বার আসামী করা হয়েছে গৃহশিক্ষক এজাজ বিন হোসাইনকে।

আমিনুল ইসলাম মিঠুকে হত্যার পর তার স্ত্রী আত্মীয়স্বজনকে না জানিয়ে বাসার সামনে লাশবাহী গাড়ি নিয়ে আসে। এতে এলাকাবাসীর সন্দেহ হলে তারা মোহাম্মদপুর থানায় অবগত করলে থানা থেকে পুলিশ এসে লাশ উদ্ধার করে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।

আমিনুল ইসলাম মিঠুর শরীরে আঘাতের চিহ্ন দেখে সন্দেহ হলে মিঠুর স্ত্রী ইভাকে প্রশ্ন করা হয়। এসময় তিনি অসংলগ্ন কথা বলতে থাকেন। একপর্যায়ে তাকে বাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ।

মিঠুর স্ত্রীর সাথে তাদের একমাত্র কন্যা মাইশার গৃহশিক্ষক এজাজ বিন হোসাইনের অনৈতিক  সম্পর্ক ছিলো বলে স্থানীয়দের ধারণা। বেশ কিছুদিন তাদের চালচলনে এমন সন্দেহের সৃষ্টি হয়।

এলাকাবাসী, বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়স্বজন সবাই বলছেন এটা স্বাভাবিক মৃত্যু নয়। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড। 

এদিকে, লাশ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের নিকট হস্তান্তর করার পর পারিবারিকভাবে দাফন সম্পন্ন করা হয়।

মিঠুর কয়েকজন বন্ধু বলেন, মিঠুর স্ত্রী ১২ই জুন সকাল ১১ টার সময় মিঠুর এক বন্ধুকে ফোন করে জানান, আপনার ভাই ঘুম থেকে উঠছে না।পরে সেই বন্ধু গিয়ে দেখেন, নিহতকে চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে। পরবর্তীতে লাশের উপর থেকে চাদরটি উঠালে নিহতের মুখমন্ডলে আঘাতের চিহ্ন দেখা যায় এবং রক্তের দাগ লেগে আছে। এতে বোঝা যায় মিঠুকে হত্যা করা হয়েছে।

মিঠুর স্ত্রীকে রক্তের বিষয়ে বললে তিনি বলেন, আপনার ভাই বাথরুমে পড়ে গিয়ে আঘাত পেয়েছিল। ঐ বন্ধু মিঠুর বাথরুমে ঢুকে দেখেন বাথরুম পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রয়েছে। এতেই সন্দেহ হয় মিঠুর বন্ধুদের। নিহতের এক বন্ধু বলেন মৃত্যুর মোটিভ দেখে মনে হচ্ছে আমিনুল ইসলাম মিঠুকে হত্যা করা হয়েছে। 

এই বিষয়ে জানতে চাইলে মিঠুর বোন নাঈমা আহমেদ বলেন, 'ভাড়াটিয়ার কাছ থেকে ভাইর মৃত্যুর খবর শুনে তাজমহল রোডের বাড়িতে এসে ভাইয়ের মৃতদেহ দেখে তার স্ত্রীর কাছে জানতে চাইলে বলেন রাতে নাকি অসুস্থ হয়ে তিনি মারা গেছে, যা কখনোই বিশ্বাসযোগ্য নয়।'

তিনি আরও বলেন, '১১ই জুন ভাইয়ের সাথে দেখা করে এসেছিলাম। আমার বাসা আদাবর এলাকায়। ১২ তারিখ রাতে যদি আমার ভাই অসুস্থ হবে তাহলে কেনো তার স্ত্রী হাসপাতালে ভর্তি করালোনা, আমাকে কেনো ফোন দিলোনা?'

তিনি সাংবাদিকদের বলেন, 'আমার ভাই মারা যাওয়ার পরেও আমাকে তার স্ত্রী ফোন করেনি। ভাইয়ের বাসার ভাড়াটিয়ারা আমাকে ফোন করে বলেছেন, আমার ভাই মারা গেছে। খবর পেয়ে বাসার সামনে এসে দেখি লাশবাহী একটা এম্বুলেন্স। আমাদেরকে না জানিয়ে কে আনলেন লাশ বাহী এম্বুলেন্স এটার সঠিক তদন্ত হওয়া দরকার। আমার ভাইয়ের হত্যার বিচার চাই। এই হত্যার সঠিক তদন্ত করে অপরাধীর সঠিক বিচার করতে হবে।'

স্থানীয়রা বলেন, মিঠুর একমাত্র মেয়েটি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। মূলত এই মেয়ের শিক্ষকের সাথেই নিহতের স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্ক ছিলো। এ নিয়ে মাঝে মধ্যেই তাদের সাংসারিক জীবনে দেখা দেয় দাম্পত্য কলহ।

স্থানীয় সূত্রে আরও জানা যায়, নিহতের কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি রয়েছে মোহাম্মদপুরসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে। এর অধিকাংশ সম্পত্তির নমিনি রয়েছেন মিঠুর স্ত্রী। অনেকের ধারণা হয়তো সেজন্যও আমিনুল ইসলাম মিঠুকে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে।

মোহাম্মদপুর থানা সূত্রে জানা যায়, লাশের প্রাথমিক সুরতহালে কিছু অস্বাভাবিক চিহ্ন দেখা গেছে। নিহতের নাকে ও মুখে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে যেটা দেখে মনে হয়নি এটা একটি স্বাভাবিক মৃত্যু।'

এই বিষয়ে মামলার তদন্তপ্রাপ্ত কর্মকর্তা উপ পরিদর্শক এসআই শফিউল 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে বলেন, 'মামলার ২ নম্বর আসামীকে গ্রেফতারের জোর চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। সঠিক তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে পেশ করা হবে।'

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা