May 18, 2024, 11:14 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-07-06 02:39:02 BdST

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে বেপরোয়া টেন্ডার সিন্ডিকেট


জনসংখ্যার হার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সহায়তা এবং সে লক্ষে ইউনিয়ন পর্যায়ের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রসমূহ পরিচালনা করতেই মূলত গঠন করা হয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। এর বাইরেও অসংখ্য কাজ রয়েছে এ কর্তৃপক্ষের।

বস্তুত তা জানা থাকলেও কার্যত হচ্ছে তার উল্টো। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর এখন অনিয়ম-দুর্নীতিতে অভিযুক্ত লুটতরাজদের আঁতুড় ঘর বলেও দাবি করছে অধিদপ্তরটির একাধিক সূত্র।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই অধিদপ্তরে দীর্ঘদিন ধরে অদৃশ্য ইশারায় চলছে টেন্ডার বানিজ্যের তুঘলকি কারবার। কর্মচারীদের ট্রেড ইউনিয়ন এবং কর্মকর্তাদের একটি অংশ মিলে দীর্ঘদিন ধরে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে  গড়ে তুলেছে টেন্ডার বানিজ্যের একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা কর্মচারী এখন কোটি কোটি টাকার মালিক। এদের টেন্ডার বানিজ্যের ডালপালা এখন দেশব্যাপী বিস্তৃত। 

অধিকাংশ সময়ে এই সিন্ডিকেট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ অমান্য করেই নানা উপায়ে টেন্ডার বাণিজ্যের ফন্দি-ফিকির করে থাকে। এদের মূল কাজই হচ্ছে বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটার সুযোগ বের করে দরপত্র আহবান করা। আর এই দরপত্রের মাধ্যমে নিজেদের পছন্দমত প্রতিষ্ঠানকে কাজ পাইয়ে দেয়ার বিনিময়ে মোটা অংকের টাকা বাগিয়ে নেয়া।           

এই সিন্ডিকেট এতটাই শক্তিশালী যে সচিব ও মহাপরিচালক এদের কাছে অসহায়। কখনো কখনো সচিব, মহাপরিচালকের দাপ্তরিক সিদ্ধান্ত পর্যন্ত কার্যকর হতে দেয়া হয় না।

সরকারের এই গুরুত্বপূর্ণ বিভাগে চলমান নানা অনিয়ম, দুর্নীতির বিষয়ে গনমাধ্যমে একের পর এক সংবাদ প্রকাশের পরও বেপরোয়া এই টেন্ডার সিন্ডিকেটের লাগাম টানা যাচ্ছে না কিছুতেই। সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে ২৬৮ কোটি টাকার অডিট আপত্তি ধরা পড়ার পরও টনক নড়েনি টেন্ডারবাজিতে সিদ্ধহস্ত দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের নিয়ে গড়ে ওঠা এই সিন্ডিকেটের। 

এতে করে মাঠ প্রশাসনের ভেতরে চরম অসন্তোষ বিরাজ করছে। সরকারের ঊর্ধতন মহলের আশু হস্তক্ষেপ চাইছেন এখানে কর্মরত অনেকেই।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে অনিয়ম, দুর্নীতি, লুটপাট কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমল থেকেই এখানে ঘাটে ঘাটে লুটপাটের সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে। প্রশাসনের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তা পরিবর্তন হয় কিন্তু লুটেরা সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্য বন্ধ হয় না। বরং ঘাপটি মেরে থাকা দুর্নীতিবাজরা নতুন করে লুটপাটের মহোৎসবে মেতে ওঠে। এই অধিদপ্তরে সারা বছরই চলে কেনাকাটার নামে টেন্ডার বাণিজ্য। এক্ষেত্রে লাখ লাখ টাকা লেনদেনের বিষয়টি এখন ওপেন সিক্রেট।

এই সংঘবদ্ধ সিন্ডিকেট পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের যাবতীয় টেন্ডার কাজ নিয়ন্ত্রণ করছে। সিন্ডিকেট এতটাই বেপরোয়া যে, নিয়মনীতি—আইনকানুন পরোয়া করে না। ইউনিয়ন পর্যায়ে, পরিবার পরিকল্পনা ক্লিনিক, নতুন ভবন নির্মাণ ও মেরামতের কাজে সিডিউলবহির্ভূত নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এসব ক্ষেত্রে তদারকি চলে ঢিমেতালে। বিভিন্ন কেনাকাটা,  নির্মাণ ও উন্নয়নমূলক কাজে টেন্ডার, পুনঃ টেন্ডার, পরীক্ষা, যাচাই-বাছাইসহ নানা অজুহাতে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের ব্যাপারেও অভিযোগ আছে।

সম্প্রতি পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে দুই ধরনের সার্জিকাল রাবার গ্লাভস সরবরাহের জন্য একটি দরপত্র আহবান করে। উক্ত দরপত্রে সর্বমোট ১৩টি প্রতিষ্ঠান অংশগ্রহণ করে।

স্বাভাবিক নিয়মানুযায়ী সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানের কাজ পাওয়ার কথা থাকলেও এই দরপত্রে নিয়মের ব্যত্যয় হতে যাচ্ছে স্বার্থান্বেষী সিন্ডিকেটের কারনে। আনুমানিক দুই কোটি টাকার এই দরপত্রে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটিয়ে নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার পায়তারা করছে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের লজিস্টিক শাখা।

লজিস্টিক শাখার বর্তমান পরিচালক মারজিয়া হক অত্যন্ত মেধাবী একজন কর্মকর্তা। কিন্তু সিন্ডিকেটটি নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য কারিগরী বিষয়ের দোহাই দিয়ে তাকে নানাভাবে বিভ্রান্ত ও কলুষিত করার জন্য পায়তারা করছে।

প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা গেছে, উক্ত দরপত্রে ট্রান্স ট্রেডার্স সর্বনিম্ন দরদাতা হলেও নতুন করে দরপত্রে কিছু স্পেসিফিকেশন ঢুকিয়ে বাংলাদেশ সাইন্স হাউজ এবং মেডিলিংক টেকনো হাট নামক দুটি বিশেষ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার পায়তারা করছে ঐ সিন্ডিকেট।

তথ্যসূত্র বলছে, টেন্ডার সিন্ডিকেটের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা নিজেদের পছন্দের প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার পায়তারা করছেন। এরফলে হয়তো কর্মকর্তারা ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হবে কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হবে রাষ্ট্র। রাষ্ট্রের বিপুল পরিমাণ অর্থের লোকসান হবে; যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না।    

মূলত টেকনিক্যাল স্পেসিফিকেশনের নামে যোগ্য কোম্পানিগুলোকে বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটের সাথে ঘনিষ্ঠ প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাজ দেওয়া হচ্ছে বলে একাধিক অভিযোগ পাওয়া গেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা একটি নির্দিষ্ট চক্র এরকম কিছু কিছু কোম্পানিকে দীর্ঘদিন সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের অধিপতি থাকার পরেও সিসিএসডিপি ও লজিস্টিক সার্ভিস উভয়ে নিয়ম নীতি তোয়াক্কা না করে এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানা ধরনের কেনাকাটায় ব্যস্ত।

একই ভাবে অবৈধ অর্থের বিনিময়ে কয়েক বছর যাবত সিসিএসডিপি'র মালামাল ক্রয় করা হচ্ছে। হাইব্রিড ব্যবসায়িক সিন্ডিকেটের সাথে এদের রয়েছে বিশাল পরিকল্পিত গোষ্ঠ। এতে প্রকারান্তরে ভাবমূর্তি ও অর্থ নস্ট হচ্ছে সরকারের।

একদিনে নোয়া ইস্যু, তরিঘরি করে এলসি খোলার ফলে নস্ট হচ্ছে বৈদেশিক মূদ্রার রিজার্ভ। এই কারনে কারিগরি কমিটিকে এখন সবাই বলে "চুরি করি কমিটি।"

ডিজিডিএ'র বৈধ নিবন্ধন, দ্বৈত অথরাইজেশন, আন্তর্জাতিক গুনগত মান সত্যায়িত সনদ যাচাই করলে অনেক থলের বিড়াল বের হয়ে আসবে।

এসকল কতিপয় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারীর ক্ষমতার অপব্যবহার, দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের সুনাম ক্ষুন্ন হতে হতে তলানিতে এসে ঠেকেছে।

বিষয়টি অতীব গুরুত্বপূর্ণ বিধায় কোনভাবেই এটিকে হালকাভাবে নেয়ার সুযোগ নেই। এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা