May 18, 2024, 11:14 pm


নেহাল আহমেদ

Published:
2023-07-23 20:27:41 BdST

রাজনৈতিক সংস্কৃতি


কিছুদিন আগেও জনগনের কাছে রাজনৈতিক নেতারা ছিলেন নমস্য। তাদের কথা, তাদের আশ্বাসকে সাধারণ মানুষ বিশেষ গুরুত্ব দিত। নেতারাও মানুষের বিশ্বাসের মূল্য দিতেন। তারা সামাজিক কর্মকান্ডে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করতেন।

রাজনীতি করা মানুষ মানেই ন্যায়, সত্য, সুন্দরের উদাহরণ। এখন কোন কোন রাজনীতিবিদদের কারণে সেই ইমেজ মর্যাদা হারিয়ে যাচ্ছে।

এক সংগঠনের লোক বা কর্মিদের অন্য সংগঠনের মানুষ পছন্দ করে না। বিষোদগার এমন পর্যায়ে পৌছেঁ গেছে যে কেউ কারো নাম শোনা বা মুখ দেখা অপবিত্র মনে করেন। অর্থাৎ নেতারা জেনেশুনেই অহরহ যেসব মিথ্যা বক্তৃতা করছেন এর নাম হয়ে গেছে ‘রাজনৈতিক বক্তব্য’।

রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে এমন ছলচাতুরী আগে হতো না। তখনকার রাজনীতিবিদদের জীবন যাপন আর এখনকার জীবন যাপনের মধ্যে অনেক তফাৎ। এখন রাজনীতির পরিচয়কে কেউ কেউ স্বার্থসিদ্ধির পথ হিসাবে বেছে নিয়েছে। দৃর্বৃত্তের আখঁড়া হিসাবে কেউ কেউ রাজনীতিকে ব্যবহার করছে।

এমন বাস্তবতার কারণে এখন তখনকার রাজনৈতিক সংস্কৃতি প্রজন্মের কাছে রূপকথার গল্পে পরিণত হচ্ছে। বর্তমানের সঙ্গে যা মেলানো খুব কঠিন। তখন রাজনীতিবিদরা ঘরবাড়ী বিক্রি করে মানুষের সেবা করতো। এখন দেখা যায় বিপরীত চিত্র।

এসব বাস্তবতায় এখন মেধাবী প্রজন্ম রাজনীতিবিমুখ হয়ে পড়ছে। ভালো ছেলেমেয়েরা রাজনীতিতে আসতে চায়না। এখন 'রাজনীতি’ একটি নেতিবাচক শব্দে পরিণত হচ্ছে যেন।

নতুন প্রজন্ম দেখে দেখে বুঝতে শিখেছে এখন সরকারি ও বিরোধী দলের নেতা-নেত্রীর প্রধান কাজ পরস্পরকে কেবল দোষারোপ করা। গণমাধ্যমে, সেমিনার সভা সমাবেশে প্রতিদিন ক্লান্তিহীন রাজনৈতিক ঝগড়া দেখে-শুনে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিতৃষ্ণা জন্মে গেছে। কিন্তু কোনো পক্ষই এ থেকে বেরোনোর চেষ্টা করছে বলে তেমন মনে হয় না। সচেতন সাধারণ মানুষ সংস্কৃত, আধুনিক, স্মার্ট রাজনৈতিক সংস্কৃতিকে দৃশ্যপটে দেখতে চায়। জানি না সে প্রত্যাশা পূরণ হবে কিনা।

বাংলাদেশের রাজনীতি ক্রমান্বয়েই কলুষিত হচ্ছে। রাজনীতিতে কাদা ছোঁড়াছুঁড়ি নিকৃষ্ট পর্যায়ে পৌঁছেছে। অথচ আমাদের অতীতের রাজনীতির ইতিহাস কি এমনই ছিল? মোটেও না।

নিকট অতীতেও আমাদের রাজনীতিতে ছিল সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থান। রাজনীতির মাঠে যাই বলুক কিন্তু রাজনীতিকদের ভিতরে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার কমতি ছিল না। অনেকের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে কখনো শিষ্টাচার বর্জিত আচরণ দূরে থাক প্রতিহিংসার লেশমাত্র ছিল না। অনেক নেতার জীবন ছিলো আর্দশে গড়া।

দেশ স্বাধীন হওয়ার চার বছর পর থেকে দেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে; তারা আমাদের শাসন করেছে। তারা আমাদের রাজনীতির সবচেয়ে বড় যে ক্ষতি করেছে তা হলো, বিরোধিতা ও ভিন্নমত দমন করার মানসিকতা এবং তাদের প্রতি চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বিরূপ আচরণ করা। ক্ষমতায় থাকার জন্য নানান পথ বেছে নেয়া।

যখন যে দল ক্ষমতায় থাকে তখন তাদের রাজনৈতিক আর্শিবাদে থাকা বুদ্ধিজীবী, লেখক, শিক্ষাবিদরা দলের চাটুকারিতা করে গেছেন।

বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে ক্রমেই প্রতিহিংসা, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করা ও গুম খুনের মতো ঘৃণ্যতম ঘটনা বাড়ছে। পাশাপাশি প্রতিপক্ষের নেতাদের লক্ষ করে ব্যক্তিপর্যায়ে আক্রমণাত্মক, অশালীন, শিষ্টাচার বর্জিত, অশোভন ভাষার ব্যবহারও প্রত্যক্ষ হচ্ছে। দলের চেয়ে ব্যক্তি বন্দনা বেশী হচ্ছে। দেশপ্রেম হারিয়ে যাচ্ছে। কোন বিষয়েই মতৈক্য হচ্ছে না।

অথচ রাজনীতিবিদদের কাছ থেকে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে দেশের সাধারণ মানুষ এ ধরনের কর্মকাণ্ড, বক্তব্য, বিবৃতি, কাদা ছোড়াছুড়ি আশা করেন না। রাজনীতিতে, রাজপথে রাজনৈতিক দলগুলোর এই ধরনের কর্মকাণ্ড কখনও গণতন্ত্রের জন্য, দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে আনতে পারে না।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা