May 18, 2024, 8:58 pm


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2023-08-05 14:13:05 BdST

পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ


পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের প্রশাসন ইউনিটের সহকারী পরিচালক সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ঘুষ, দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার, ইমপ্রেস্ট ফান্ডের অর্থ আত্মসাৎ ও চারিত্রিক স্থলনজনিত স্পর্শকাতর একাধিক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে।

সম্প্রতি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর প্রেরিত একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। উক্ত অভিযোগের একটি কপি 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'র বিশেষ অনুসন্ধানী টীমের হাতে আসে। 

অভিযোগ সূত্রে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, সিরাজুল ইসলাম মাগুরা জেলার শ্রীপুর উপজেলায় পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা পদে যোগদানের পর নিজ পদসহ মেডিকেল অফিসারের অতিরিক্ত দায়িত্বভার গ্রহন করে। দায়িত্ব নেয়ার পরপরই ইমপ্রেস্ট ফান্ডের ক্লিনিক্যাল শাখায় ভুয়া কপারটি গ্রহীতা দেখিয়ে এবং ভুয়া ইনসারশন, ভুয়া রেফার ফী দেখিয়ে ২০১৬-১৭ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রায় ৯,৬৫,০০০/ (নয় লক্ষ পয়ষট্রি হাজার) টাকা ভুয়া বিলের মাধ্যমে উত্তোলন করে আত্মসাৎ করেন।

এছাড়াও শ্রীপুর উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে সিরাজুল ইসলাম একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। এনিয়ে স্থানীয় পর্যায়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এমনকি সিরাজুল ইসলামকে একাধিকবার অপমানিত করা হয়।

উক্ত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত সিরাজুল ইসলামকে প্রশাসনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার অংশ হিসেবে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলায় বদলি করা হয়। এখানে যোগদানের পর তিনি আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেন।  

মধুখালীতে এসেও আগের মতোই দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ এবং একাধিক নারীর সাথে অনৈতিক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন বলে মধুখালী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ের অধিকাংশ কর্মকর্তা-কর্মচারী দ্যা ফিন্যান্স টুডের কাছে অভিযোগ করেন।

সচিব বরাবর প্রেরিত চিঠি মারফত জানা গেছে, মধুখালীতে কর্মরত থাকাকালীন নন ক্লিনিক্যাল খাতে ও মৌলিক ভাতা গ্রহন খাতে ২,৬৫,০০০/ (দুই লক্ষ পয়ষট্টি হাজার) টাকা ভুয়া বিল তুলে আত্মসাৎ করেন। আসবাবপত্র ক্রয় খাতে ১,৩২,০০০/ (এক লক্ষ বত্রিশ হাজার) টাকা, আসবাবপত্র মেরামত খাতে ২২,৫০০/ (বাইশ হাজার পাচশত) টাকা,  পরিবহন খাতে ৪৫,০০০/ (পয়তাল্লিশ হাজার) টাকা, ব্যবহার্য্য দ্রব্যাদি খাতে ৬২,০০০/ (বাষট্টি হাজার) টাকা, এফডব্লিউসি পরিচালন খাতে ৩২,০০০/ (বত্রিশ হাজার) টাকা এবং যন্ত্রাংশ খাতে ২৭,৫০০/ (সাতাশ হাজার পাচশত) টাকা ভুয়া বিল তুলে আত্মসাৎ করেন। মধুখালী উপজেলা পরিবার পরিকল্পনা কার্যালয়ে কর্মরত মাঠকর্মীগন এনিয়ে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগ করলেও তার ক্ষমতার দাপটে এসব ধামাচাপা পড়ে যায়।  

অভিযোগ সূত্রে আরও জানা গেছে, অফিস চলাকালীন সময়ে একজন মহিলা সিরাজুল ইসলামের কক্ষে এসে বসতেন এবং দুপুরের খাবার খেতেন। শুধু তাই নয়, প্রায়শই তারা দুজন অফিস ছুটির পরও রাত ৮/৯টা পর্যন্ত সিরাজুল ইসলামের অফিস কক্ষে একান্ত সময় কাটাতেন। কখনও কখনও সিরাজুল ইসলাম তার অধীনস্থ কর্মচারীদের অফিসের বাহিরে বসিয়ে রাখতেন। এতে করে  কর্মচারীদের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। এক পর্যায়ে উক্ত মহিলার স্বামীসহ স্থানীয় গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সিরাজুল ইসলামকে মারধর করে এবং ফরিদপুর জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ প্রেরন করেন। এই বিষয়ে ঐ সময় একাধিক গনমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

প্রশাসনে একজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে এমন চাঞ্চল্যকর নৈতিক স্থলনজনিত অভিযোগ উত্থাপিত হলে বিভাগীয় পর্যায়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারা সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন না করে মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে বিষয়টি ধামাচাপা দেন বলে স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের সচিব বরাবর প্রেরিত চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

উল্লেখ্য যে, সিরাজুল ইসলাম পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরে খান মোঃ রেজাউল করিম - আব্দুল মান্নান - মতিউর রহমান সিন্ডিকেটের একজন সক্রিয় সদস্য। এতসব বিতর্কিত এবং স্পর্শকাতর অভিযোগ থাকা সত্বেও সিন্ডিকেটের সদস্য বলে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়নি। উল্টো তাকে পরিকল্পিতভাবে শৃঙ্খলা শাখা-২ তে পদায়ন করা হয়েছে।

অধিদপ্তরে গুঞ্জন রয়েছে যে, আলোচিত সিন্ডিকেটের কারনে মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের বিপদে ফেলতে এবং অসৎ এবং দুর্নীতিবাজ কর্মকর্ত৷ ও কর্মচারীদের রক্ষা করতেই সিরাজুল ইসলামের মত একজন নারীলোভী, দুর্নীতিবাজ এবং অসৎ কর্মকর্তাকে শৃঙ্খলা শাখা-২ তে পদায়ন করা হয়েছে।

সচিব বরাবর প্রেরিত চিঠি পর্যালোচনা করতে যেয়ে 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'র একটি চৌকস টীম রীতিমতো হতবাক হয়ে যায় আরেকটি তথ্যে যা এককথা অবিশ্বাস্য। তথ্যটি হচ্ছে, বিয়ের পর সিরাজুল ইসলাম তার স্ত্রী ব্যতিরেকে একাধিক নারীর সাথে পরকীয়ার মত ঘৃন্য সামাজিক অপরাধে জড়িয়ে পড়েন। একপর্যায়ে তার এই অনৈতিক কার্যকলাপে বাধা দিলে নিজের স্ত্রীকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন সিরাজুল ইসলাম। এনিয়ে সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে স্ত্রীর পরিবার জজ কোর্টে হত্যা মামলা দায়ের করে। কিন্তু মাত্র ৩ লক্ষ টাকার বিনিময়ে এবং ক্ষমতার দাপটে সিরাজুল ইসলাম নিজের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত হত্যা মামলা তুলে নিতে তার স্ত্রীর পরিবারকে বাধ্য করেন।  

এই ব্যাপারে প্রশাসনিক কার্যক্রম ও শৃঙ্খলা বিধির বিষয়ে বিশেষজ্ঞ একাধিক ব্যক্তির কাছে জানতে চাইলে সবাই 'দ্যা ফিন্যান্স টুডে'কে এক বাক্যে বলেন যে, প্রশাসনে এরকম একজন দুর্নীতিবাজ, অসৎ, ঘৃন্য অপরাধে জড়িত এবং দুশ্চরিত্র ব্যক্তিকে কিভাবে এখনও বহাল রাখা হয়েছে সেটাই অবাক করার মত বিষয়। তারওপর এরকম একজন দুর্নীতিপরায়ন ব্যক্তিকে কোন যোগ্যতায় শৃঙ্খলা শাখায় পদায়ন করা হলো সেটা মোটেও বোধগম্য নয়।

এই বিষয়টি গুরুত্বের সাথে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন সংশ্লিষ্ট উর্ধতন কর্তৃপক্ষের। শুধু তাই নয়, সচিব বরাবর প্রেরিত চিঠিকে আমলে নিয়ে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে অভিযুক্ত সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহন করা এখন নৈতিক দায়িত্ব স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয়ের। পাশাপাশি দ্রুত সিরাজুল ইসলামকে শৃংখলা শাখা থেকে অন্যত্র বদলী করা উচিত বলে মনে করেন মন্ত্রনালয়ের সাধারন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।        

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা