May 7, 2024, 1:06 am


নিজস্ব প্রতিবেদক

Published:
2023-12-27 22:43:28 BdST

আওয়ামী লীগের ইশতেহার: দুর্নীতি বন্ধই হোক প্রধান উদ্দেশ্য


দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ইশতেহার ঘোষণা করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ।

আজ বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্মার্ট বাংলাদেশ, উন্নয়ন দৃশ্যমান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে এই ইশতেহার ঘোষণা করেন। 

দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান, দ্রব্যমূল্য সব মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখা, কর্মসংস্থান বাড়ানো এবং সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করাসহ ১১টি বিষয়কে প্রাধান্য দিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ইশতেহার ঘোষণা করা হয়েছে। মূলত, সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা বিবেচনা করেই এই ইশতেহার সাজানো হয়েছে।

সূত্রগুলো বলছে, পরপর তিনবার ক্ষমতায় দলটি দেশের দৃশ্যমান উন্নয়ন করেছে। ‘তলাবিহীন ঝুঁড়ি’র খেতাব থেকে দেশ উন্নয়নশীলদের কাতারে গেছে, জীবনমান-আয় উন্নীত হয়েছে। অন্যদিকে দুর্নীতি, ব্যাংকখাতে লুটপাট, সিন্ডিকেটের কারণে অগ্রগতি আটকে রেখেছে। স্বেচ্ছাচারিতা, জবাবদিহীতার অভাব এবং নৈরাজ্য রয়েছে ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে। ইশতেহারে এসব নেতিবাচক দিকগুলো সংশোধন করে দেশকে আরও এগিয়ে নেওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা।

আওয়ামী লীগের ইশতেহারে যে বিষয়গুলো উল্লেখযোগ তা হলো- দ্রব্যমূল্য সবার ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া। কর্মোপযোগী শিক্ষা ও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা। আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি। দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো। ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সবাইকে যুক্ত করা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারিতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা। সাম্প্রদায়িকতা এবং সব ধরনের সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ রোধ করা। সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটে শক্তিশালী প্রতিদ্বন্দ্বী নেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। যে কারণে জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। আর জয়ী হয়ে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা পূরণ করাই হবে আওয়ামী লীগের প্রধান কর্তব্য। এর মধ্যে প্রধানতম কাজ দুর্নীতি নির্মূল করা।

বিশ্লেষকরা বলছেন, ইশতেহার বিবেচনায় নিয়ে প্রথম কাজ হবে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ ঘোষণা করা। গত এক যুগে অনেক রাজনীতিক, আমলা, ব্যবসায়ী দুর্নীতি এবং অসৎ উপায়ে বিপুল সম্পদের মালিক হয়েছেন। নিত্যপণ্যের বাজার থেকে সরকারি দপ্তর পর্যন্ত প্রায় সবখানেই সাধারণ মানুষ চাপে পড়েছে। আগামী সরকারের উচিৎ হবে প্রথমেই সাধারণ জনগণের স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে কাজ করা। দুর্নীতি রোধের পাশাপাশি বাজার সিন্ডিকেট রোধ করার বিকল্প নেই।

তারা আরও বলছেন, গত এক দশকে অনেক রাজনীতিবিদ এবং আমলা দুর্নীতি মাধ্যমে বিপুল টাকা লুটপাট করেছে। এদের ছাড় দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। সরকারের পাশাপাশি দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) আরও শক্ত হতে হবে। এই দুই পক্ষ শক্তিশালী হয়ে কাজ করলেই সাধারণ মানুষ রক্ষা পাবে।

সবাই এখন শেখ হাসিনার দিকেই তাকিয়ে আছে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে যারা বসবেন তারা সাধারণ জনগণকেই বেশি প্রাধান্য দেবেন বলেই বিশ্বাস করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

উল্লেখ্য, আসন্ন নির্বাচন উপলক্ষ্যে প্রার্থীদের দেওয়া হলফনামা যাচাই করে সম্প্রতি সংবাদ সম্মেলন করেছে ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। দুর্নীতির বিরুদ্ধে কাজ করা সংস্থাটি বলছে, এবারের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক প্রার্থীর সম্পদ বেড়েছে বহুগুণ। এই তালিকায় ক্ষমতাসীন সংসদ সদস্যরাই বেশি।

গত সোমবার (২৬ ডিসেম্বর) সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়া ১৮ প্রার্থীর ১০০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ (অস্থাবর সম্পদ মূল্যের ভিত্তিতে) আছে, এর মধ্যে ১০ জন আওয়ামী লীগ মনোনীত, ৮ জন স্বতন্ত্র। এছাড়াও হলফনামার তথ্য রাজনৈতিক দলগুলোর জন্যও উদ্বেগজনক। 

টিআইবি বলছে, হলফনামায় দেওয়া তথ্যের সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এসব তথ্য যাচাই করা যাদের দায়িত্ব, তারা কোনো ব্যবস্থা নেয় না।

এ প্রসঙ্গে ইফতেখারুজ্জামান বলেন, হলফনামার তথ্য যাচাই-বাছাই করা হয় না। নির্বাচন কমিশন, রাজস্ব বিভাগ ও দুর্নীতি দমন কমিশন কাজটি করতে পারে। কিন্তু কেউই তা করে না। এখানে দায়সারাভাবে তথ্য দেওয়ার জন্যই দেওয়া হয়।

ওই সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির চেয়ারপারসন সুলতানা কামাল বলেন, সমাজে দুটি শ্রেণি তৈরি হচ্ছে। এক শ্রেণি অতি সম্পদশালী, আরেক শ্রেণি দিন আনে দিন খায়। অল্প কিছু লোকের আগ্রাসী সংস্কৃতির মধ্যে চলে গেছে দেশ। এটা বিপজ্জনক।

সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন টিআইবির উপদেষ্টা (নির্বাহী ব্যবস্থাপনা) অধ্যাপক সুমাইয়া খায়ের, পরিচালক (আউটরিচ অ্যান্ড কমিউনিকেশন) শেখ মনজুর-ই-আলম প্রমুখ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা