May 14, 2024, 5:30 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-01-01 22:10:56 BdST

শিলিগুড়ি করিডোরকে চাপে রাখতে তিস্তা প্রকল্পে নজর চীনের


সামরিকভাবে ভারতের কাছে বাংলাদেশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চীন-ভারত সামরিক সংঘর্ষে শিলিগুড়ি করিডোর সহজেই বন্ধ করে দিতে পারে চীন। যার মাধ্যমে ভারত তার পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলির সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। এই অবস্থায় ভারতের একমাত্র বিকল্প হবে বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক রক্ষা করা। এনিয়ে ভারত ভূ-রাজনৈতিকভাবে একটি কঠিন পরিস্থিতিতে পড়েছে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।  

মূলত চীনের নজরে রয়েছে ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ করিডোর। এই করিডোরকে টার্গেট করেই বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক কলাকৌশল পরিচালনা করছে চীন, এতে ভারতের উপর চাপ তৈরি হয়েছে।

শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে ভারতকে চাপে রাখতে ইতোমধ্যেই ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলোতে কূটনৈতিক তৎপরতা চালিয়েছে চীন। চীনের কারণে নেপালের রাজনীতিতে প্রধান বিরোধীদল চীনপন্থি কেপি শর্মা ওলির কমিউনিস্ট পার্টির অনেক প্রভাব রয়েছে। নেপাল শিলিগুড়ি করিডোরকে নিজেদের অঞ্চল দাবি করে নতুন ম্যাপ প্রকাশ করে যা নিয়ে ভারতের সাথে দূরত্ব তৈরি হয়। এর পিছনে চীনের ইন্ধন থাকতে পারে বলে ধারণা করেন বিশেষজ্ঞরা।     

অন্যদিকে সীমান্তের অমীমাংসিত অঞ্চলগুলি নিয়ে বিতর্ক মিটিয়ে ফেলে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপনের দিকে এগোচ্ছে চীন ও ভূটান। বাণিজ্য, সড়ক সংযোগসহ বিভিন্ন খাতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছে চীন। ভূটানের বেশকিছু স্থানে চীনের স্থাপনা নির্মানের স্যাটেলাইট ছবি সম্প্রতি প্রকাশ্যে এসেছে। এখান থেকে সহজেই শিলিগুড়ি করিডোরকে টার্গেট করতে পারবে চীন। ফলে এটিও ভারতের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। 

এখন শুধুমাত্র বাংলাদেশের দিক থেকেই সুরক্ষিত আছে ভারত। এই পথটিতে চীন ডেরা গেড়ে বসতে পারলে শিলিগুড়ি করিডোর নিয়ে সবদিক থেকে চাপে পড়বে ভারত। চীন বাংলাদেশের সাথে সে তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে অনেকদিন ধরে। 

এক্ষেত্রে চীনের সবচেয়ে সুবিধাজনক স্থান হচ্ছে তিস্তা ব্যারেজ এলাকা। তিস্তা প্রকল্প নিয়ে চীন ইতোমধ্যেই নিজেদের আগ্রহের কথা প্রকাশ করেছে। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে তিস্তা প্রকল্প প্রসঙ্গে চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন বলেন, ‘বাংলাদেশ চাইলে তিস্তা প্রকল্প হাতে নেবে তার দেশ।’

অনেকদিন ধরে বাংলাদেশের সাথে ভারতের তিস্তা চুক্তি ঝুলে রয়েছে যা কাজে লাগাতে চায় চীন। বাংলাদেশকে তিস্তা এলাকায় নদী খনন ও আশেপাশের এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে সহায়তার প্রস্তাব দিয়েছে চীন। তিস্তা প্রকল্প চীনকে দিলে তারা যে ব্যাপক কর্মকাণ্ড চালাবে তাতে চাপে পড়বে ভারতে। ভারত চায় না এই মুহূর্তে এমন কোন পরিস্থিতিতে পড়ুক দেশটি।    

এই অবস্থায় ভারতের জন্য বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রাখা খুবই জরুরি। বাংলাদেশে একটি ভারতবিরোধী সরকার ক্ষমতায় আসলে বিপদে পড়বে ভারত। বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনের সুযোগ নিবে চীনও। নতুন সরকার চীনের সাথে এমন কোন চুক্তি করলে বিপদ বাড়বে ভারতের। এতে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় ৭টি রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা তৈরি হতে পারে। 

বাংলাদেশের রাজনীতি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ নিয়ন্ত্রিত। আওয়ামী লীগ বাদে কোন বিকল্প দলও নেই ভারতের জন্য। যে কারণে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের জন্য বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মহলে তদবির চালাচ্ছে ভারত।

ভারতের চীনভীতির কারণেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিচ্ছে না। বাংলাদেশ সরকারকে চাপে ফেললে চীনের পথটি আরও সহজ হবে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞগণ।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা