May 15, 2024, 3:36 am


বিশেষ প্রতিবেদক

Published:
2024-01-02 19:04:39 BdST

ড. ইউনূস ইস্যু কি বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে?


নির্বাচনের ঠিক আগে আগে শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহম্মদ ইউনূসকে দণ্ডিত করা হয়েছে। একটি শ্রম আদালত গতকাল ড. ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করেন। কিছুক্ষণ পরে অবশ্য এক মাসের মধ্যে আপিল করার শর্তে তিনি জামিন পেয়েছেন।

স্পষ্টতই ড. ইউনূসকে কারান্তরীণ করা হয়নি। তবে এটি তার জন্য একটি বড় ধরনের অপমান বলেই মনে করা হচ্ছে। ড. ইউনূস অবশ্য এই মামলাকে তার বিরুদ্ধে হয়রানি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, যে অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত নই, সেই অপরাধেই শাস্তি পেলাম। এটি আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ।

অন্যদিকে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার রায়ের দিন গিয়েছিলেন সুশীল সমাজে কয়েকজন প্রতিনিধি। তারা মামলার দ্রুত বিচার এবং তাড়াহুড়ো করার অভিযোগ এনেছেন। সরকারের পক্ষ থেকে যদিও বলা হয়েছে, মামলায় মোটেও তাড়াহুড়া করা হয়নি। আইন তার নিজস্ব ধারায় নিজস্ব গতিতে চলেছে।

তবে নিরপেক্ষ আইন বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, সাধারণত শ্রম আইনের মামলা যে গতিতে চালানো হয় ড. মুহাম্মদ ইউনূসের মামলার গতি ছিল তার চেয়ে কিছুটা বেশি। এর একটি কারণ হতে পারে যে, ড. মুহাম্মদ ইউনূস অত্যন্ত প্রভাবশালী ব্যক্তি। যে কোন সময় যে কোন প্রভাব বিস্তার করতে পারেন৷ এই কারণেই তার মামলার শুনানি সরকার অগ্রাধিকার হিসাবে বিবেচিত করেছে।

তবে যে বিবেচনায়ই করা হোক না কেন, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এই রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন। 

বিশেষ করে বাংলাদেশে ড. ইউনূসের রায় এমন একটি সময় দেওয়া হলো যখন দেশটি একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দ্বারপ্রান্তে এবং এই নির্বাচনে দেশের প্রধান বিরোধী দল অংশগ্রহণ করছে না। নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে এক ধরনের অস্বস্তি রয়েছে। সেই রকম প্রেক্ষাপটে ড. ইউনূস ইস্যু মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি ধরনের প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা চলছে। 

যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেছেন, এটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব ফেলবে না। কিন্তু বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যে দেখা গেছে, ড. ইউনূস ইস্যুটি বাংলাদেশ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সর্ম্পকের টানাপোড়েনকে আরও প্রলম্বিত করবে। এটি সর্ম্পকের অস্বস্তিকে আরও বাড়াতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

একাধিক কারণে ড. ইউনূস ইস্যুটিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে। প্রথমত, ড. ইউনূস মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত ঘনিষ্ট। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সর্বোচ্চ খেতাব পাওয়া ব্যক্তি এবং তার মামলার ক্ষেত্রে যে প্রক্রিয়াগুলো অনুসরণ করা হয়েছে তা কতটা যথাযথ হয়েছে, এ নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের যথেষ্ট সন্দেহ এবং সংশয় রয়েছে।

যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এই মামলার রায়ের পর এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন রকম বিবৃতি দেয়নি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই বিবৃতি না দেওয়াকেও অনেকে সম্পর্কের অবনতির একটি সূত্র বলে মনে করছেন। কারণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের সমস্ত বিষয়গুলো নিয়ে একসাথে তার অবস্থান ব্যক্ত করতে পারেন, এরকম প্রেক্ষিতে ড. ইউনূসকে নিয়ে তারা কোন রকম কথা বলেননি বলেও অনেকে মনে করছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইস্যুটিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে দেখে সেটি নিয়ে অনেক আলাপ-আলোচনা চলছে। কেউ কেউ মনে করছেন, এটি মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যু এবং সরকার যে বিচার ব্যবস্থাকে তাদের মতো করে ব্যবহার করে, তার আরেকটি উদাহরণ হিসেবে ড. ইউনূসের ইস্যুটিকে দেখতে চাইছে।

অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের নির্বাচন, নতুন শ্রম আইনসহ বিভিন্ন বিষয়গুলোর দিকে যে ভূমিকা রাখছে তার বিরুদ্ধে পাল্টা চাপ হিসেবে ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা বলে অনেকেই করছেন।

কারণ ড. ইউনূস যে কোন বিচারেই মার্কিন সরকারের সঙ্গে অত্যন্ত ঘনিষ্ট। আর এই কারণেই ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করে সরকার একটা বিষয় প্রমাণ করতে চায় যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ বা হুমকিতে সরকার ভীত নয়।

তবে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ইস্যুটি এই সময়ে অপ্রয়োজনীয় ছিল বলে কেউ কেউ মনে করেন। তবে অনেকের মতে ড. ইউনূসের ইস্যুটি একটি বিচ্ছিন্ন ইস্যু, নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

Unauthorized use or reproduction of The Finance Today content for commercial purposes is strictly prohibited.


Popular Article from FT বাংলা